মহম্মদ ইউনূসই অন্তত আরও চার বছর দায়িত্বে? নির্বাচন কবে হবে বাংলাদেশে?
Muhammad Yunus: ইউনূস স্বীকার করেছেন যে, হিন্দু সহ সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে বিক্ষোভের পর হিংসার সম্মুখীন হয়েছেন ঠিকই কিন্তু এটি তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নয়।
বাংলাদেশ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে। অর্থাৎ স্থায়ী সরকার নেই। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হচ্ছেন নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূস। এই অবস্থায় বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন প্রয়োজন। যার মাধ্যমেই নতুন প্রধানমন্ত্রী উঠে আসবেন যিনি দেশকে পরবর্তী মেয়াদে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বাংলাদেশ জুড়ে নির্বাচন কবে এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে। এরই মাঝে হাসিনা পরবর্তী অস্থির বাংলাদেশ কবে স্থায়ী সরকার পাবে এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন, কমপক্ষে আরও চার বছর দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারেন তিনিই। কারণ "সংস্কারে সময় লাগবে"।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের ১০০তম দিনে আল জাজিরাকে একটি সাক্ষাত্কারে ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলার যে খবর সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলছেন, তা আসলে ভারত থেকে জাগিয়ে তোলা এক 'প্রোপাগান্ডা'। ইউনূস বলেন, "শুধু নির্বাচন করলেই নতুন বাংলাদেশ আসবে না... নতুন বাংলাদেশের অর্থ হলো আইনি ব্যবস্থার সংস্কার... পুলিশ ব্যবস্থা নতুনভাবে পরিকল্পিত হবে এবং এর জন্য সংবিধানের সবচেয়ে বেশি সংস্কার প্রয়োজন।"
আরও পড়ুন- ধর্ম বা রাজনীতি দিয়ে কোনও বাংলাদেশির সঙ্গে বৈষম্য হবে না! ইউনূসের আপ্তবাক্য ফলবে?
তাহলে ইউনূস আপাতত নির্বাচন নিয়ে ভাবিতই নন? ইউনূস ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, “দুটি সমান্তরাল জিনিস চলছে। এক হচ্ছে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং অন্যটি সমস্ত সংস্কারের প্রস্তুতি। এটা জনগণের উপর নির্ভর করে, রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেয় কোন পথে যেতে হবে... আমরা চিরস্থায়ী সরকার নই। নিয়মিত সরকার পাঁচ বছরের জন্য। নতুন সংবিধানে চার বছর বলা হতে পারে কারণ জনগণ দ্রুত সরকারের মেয়াদ চায়। সুতরাং এটি চার বছরের নিচে হওয়া উচিত, এর কমও হতে পারে, সবটাই নির্ভর করছে জনগণ কী চায়?”
তাহলে ইউনূসই আরও চার বছর থেকে যাবেন দায়িত্বে? মেয়াদের প্রশ্নে নির্দিষ্ট করে কিছুই বলেননি ইউনূস কিন্তু বলেছেন, "চার বছরই সর্বোচ্চ মেয়াদ হতে পারে।" অর্থাৎ ইউনূস ইউনূস ইঙ্গিত দিচ্ছেন খুব তাড়াতাড়ি তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পদ থেকে সরছেন না। কেন চার বছরে এত জোর দিচ্ছেন তিনি? তাঁর দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক নিযুক্ত বিভিন্ন কমিশন সংস্কারের জন্য পরামর্শ জানাতে কিছুটা সময় নেবে।
দেশের সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে গত জুলাই মাস থেকে পড়ুয়া ও সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের পর অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। জুন মাসে, বাংলাদেশ হাইকোর্ট ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা ফিরিয়ে আনে, যা ২০১৮ সালে হাসিনার সরকারই বাতিল করেছিল। বিক্ষোভের ফলে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। হাসিনার পদত্যাগের পর, বাংলাদেশে বিক্ষোভের রেশ ধরে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসতে থাকে যেখানে দাবি করা হতে থাকে যে বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দুদের লক্ষ্য করে হিংসা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ হচ্ছেন হিন্দু। ইউনূস দাবি করেন, এই প্রচার অনেকটাই মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আরও পড়ুন- এবার বাংলাদেশকে ‘কালো তালিকায়’ ফেলবেন ট্রাম্প? কীভাবে সামলাবেন ইউনূস?
ইউনূস স্বীকার করেছেন যে, হিন্দু সহ সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে বিক্ষোভের পর হিংসার সম্মুখীন হয়েছেন ঠিকই কিন্তু এটি তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নয় বরং তাঁদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে। তিনি দাবি করেন, সংখ্যালঘুরা হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সদস্য। বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশিরা আসলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই অসন্তুষ্ট, তাই এই হিংসা। ট্রাম্প হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসা নিয়ে যে বক্তব্য প্রচার করছেন, সেসবের নিন্দা করে ইউনূস বলেছেন, “এটি বেশিরভাগই প্রোপাগান্ডা। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অপপ্রচার। এটা দুর্ভাগ্যজনক। সম্ভবত এই উত্তেজনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই প্রচারের বেশিরভাগটাই করা হচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে। বাস্তবে, এসবের অস্তিত্ব নেই। হিন্দুদের সবচেয়ে পালিত পুজো উদযাপনের উদাহরণ দেখুন। হাজার হাজার পুজোর জায়গায় কোনও হিংসার ঘটনা ছাড়াই উদযাপন হয়েছে।”
ইউনূস আর ট্রাম্পের সম্পর্ক মধুর নয়। তিনি ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক। এই অবস্থায় ট্রাম্প আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়াতে বাংলাদেশে নির্বাচনের চাপ বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে। যদিও ইউনূস বলছেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ওয়াশিংটনে নতুন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণ করলেও বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন নীতির পরিবর্তন হবে বলে আশা করেন না তিনি।