কেন সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী চাইছে নেপালের জেন জি?

Sushila Karki: নেপালের যুব সমাজ ও সুশীল নাগরিকরা একজন অদলীয়, সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তি চান, যিনি সাময়িকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার চালাবেন। এই শর্তেই সুশীলা কার্কি নামটি সামনে এসেছে।

নেপালে চরম অরাজক পরিস্থিতি চলছে। ইতোমধ্যেই ছাত্র-যুবদের বিক্ষোভের চাপে প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি পদত্যাগ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্ররা চাইছে রাজনৈতিক সমাধান। নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি-কে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী করার দাবি তুলেছেন আন্দোলনকারীদের একাংশ। কিন্তু কেন কারকি-কেই নেতৃত্বে চাইছে নেপাল?  

Sushila Karki

সুশীলা কারকি

নেপালের যুব সমাজ ও সুশীল নাগরিকরা একজন অদলীয়, সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তি চান, যিনি সাময়িকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার চালাবেন। এই শর্তেই সুশীলা কারকি নামটি সামনে এসেছে। কারণ বিচারপতি থাকাকালীন রাজনৈতিক চাপের মুখেও তিনি নতিস্বীকার করেননি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। 

আরও পড়ুন- নেপাল ২০০৮-২০২৫ || কী ভাবে পড়ব এই সময়কে?

১৯৫২ সালের ৭ জুন নেপালের মোরাং জেলার বিরাটনগরে জন্মগ্রহণ করেন সুশীলা কারকি। কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। ১৯৭২-এ, বিরাটনগর মহেন্দ্র মোরাং ক্যাম্পাস থেকে স্নাতক হন। এরপর ১৯৭৫ সালে, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ফের ১৯৭৮ সালে নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

Sushila Karki

সুশীলা কারকি

সুশীলা কারকি ১৯৭৯ সালে বিরাটনগরে আইন অনুশীলন শুরু করেন। প্রথমের দিকে, ১৯৮৫ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন। এরপর ২০০৭ সালে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হন। ২২ জানুয়ারি, ২০০৯-এ সুপ্রিম কোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয় তাঁকে। স্থায়ী বিচারপতি নিয়োজিত হন ২০১০ সালের ১৮ নভেম্বর। আর প্রধান বিচারপতি পদে আসিন হন ২০১৬ সালে। তিনিই নেপালের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি।

আরও পড়ুন- ১৭ বছরে ১৪ বার সরকার বদল, কেন কোনো স্থায়ী সমাধান খুঁজে পেল না নেপাল?

বিচারপতি থাকাকালীন কারকি একাধিক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাঁর রায় ইতিহাস রচনা করেছে। মহিলাদের অধিকারের জন্য লড়েছেন সুশীলা কারকি। নেপালি শিশুদের মায়ের নাগরিকত্ব লাভের আইন পাশ করানো থেকে নেপাল রাজপরিবারে 'সারোগেসি' এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন।

Sushila Karki

সুশীলা কারকি

২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল, সুশীলা কারকির বিরুদ্ধে মাওবাদী-কেন্দ্র ও নেপালি কংগ্রেস সংসদে একটি অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করে। তবে, জনসাধারণের চাপ এবং সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পর সংসদকে প্রস্তাবটি এগিয়ে না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর অভিশংসন প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হয়।

জনসাধারণ চাইলে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সুশীলা কারকি। যদি তাই হয়, তাহলে তিনিই হবেন নেপালের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেক্ষেত্রে কিছু বাধা আসতে পারে। কারণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এক অস্থির পরিস্থিতি চলছে নেপালে। তাই এখন শুধু নেতৃত্ব পরিবর্তন করলেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আন্দোলনকারীরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, দুর্নীতি নির্মূল, সামাজিক ন্যায় সব ক্ষেত্রেই স্থায়ী পরিবর্তন চান। যেমন বাংলাদেশে হাসিনার পলায়নের পর আন্দোলনকারীরা চেয়েছিলেন। সেখানে এখনও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ চালাচ্ছে। এখন দেখার, নেপালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে জনসাধারণের চাহিদা পূরণ করতে পারে কিনা। সুশীলা কারকি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হলে রাজনৈতিক স্থিরতা আসে কিনা সেদিকেও তাকিয়ে বিশ্ব।   

 

More Articles