লাল, হলুদ এবং সবুজ রংই থাকে সিগনাল পোস্টে, বিজ্ঞান নাকি মিথ, আসলে কী কারণ এর?

Traffic Signal : কিন্তু বর্নালিতে আরও এত এত রং থাকতে কেন কেবল লাল, হলুদ এবং সবুজ, এই তিনটে রংকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল জানেন? এর পিছনেও রয়েছে রহস্য...

রোজকার জীবনে এমন বেশ কিছু জিনিস আমরা ব্যয়ভার করি যার কারণ বিশ্লেষণ নিয়ে খতিয়ে দেখা হয় না কোনও দিনই। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ ঘুরিয়ে কারণ জানতে চাইলে যে মহা বিপদে পড়তে হবে, সেকথাও নিশ্চিত। খোদ কলকাতা শহর তো বটেই এমনকী অন্যান্য জেলার ব্যস্ত রাস্তায় পথ চলতে গেলে আমাদের সম্মুখীন হতে হয় সিগনালের। সিগনাল অর্থাৎ সংকেত। যানজট নিয়ন্ত্রণে যার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর এই সিগনাল বলতেই আমাদের চোখের সামনে যে ছবিটা ভেসে ওঠে তাতে মূলত তিনটি রঙ দেখা যায়। লাল, হলুদ এবং সবুজ। কিন্তু বর্নালিতে আরও এত এত রং থাকতে কেন কেবল এই তিনটে রংকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল জানেন? এর পিছনেও রয়েছে রহস্য...

প্রসঙ্গত জেনে রাখা দরকার, ১৯২০ সালে প্রথম রাস্তায় সিগনাল পোস্ট রাখার ভাবনা চালু হয়। এর আগে ট্রেন সিগনালের প্রচলন থাকলেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে সিগনাল পোস্ট দেওয়ার চল শুরু হয়। ট্রেন থামানোর জন্য লাল কাপড়, লাল সিগনাল এমনকী ট্রেন থামানোর জন্য যে চেন টানা হয় সেই চেনটিরও রং হয় লাল। অর্থাৎ জরুরি পরিস্থিতি বা সতর্কতা বোঝাতে লাল রং ব্যবহারের চল রয়েছে আমাদের দেশে। এর একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। কোন রং -এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যত বেশি হয় সেই রংটি তত দূর থেকে লক্ষ্য করা যায়। যেহেতু লাল রঙের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বাকি সব রঙের থেকে বেশি তাই যে কোন বিপদ বা জরুরী পরিস্থিতি বোঝাতে লাল রঙকেই সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয় যে কারণে সিগনাল পোস্টে গাড়ির থামতে বলার নির্দেশ হিসেবে লাল রঙের সিগনালকে ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন - পাঁচ লক্ষ বছর আগেও ছিল মানুষের অস্তিত্ব! কোন রহস্য লুকিয়ে আছে পোল্যান্ডের প্রাচীন গুহায়?

অন্যদিকে লালের ঠিক পরেই যে রংগুলির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সব থেকে বেশি তা হল যথাক্রমে হলুদ এবং সবুজ। আমাদের বর্ণালীতে যে সাত রং এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে সবথেকে কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রংটি হলো বেগুনি ফলে বেগুনি রং খুব বেশি দূর থেকে প্রত্যক্ষ করলেও বোঝা যায় না। মূলত তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করেই সংকেত হিসেবেই রংগুলিকে ব্যবহার করা হয়।

একটা সময় অবশ্য ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে সংকেত হিসেবে লাল এবং সবুজ রং ব্যবহারের চল থাকলেও ছিল না হলুদ রং ব্যবহারের প্রচলন। লাল রং অর্থাৎ গাড়ী থামানোর নির্দেশক, সবুজ রং গাড়ি চলাচল সংক্রান্ত সতর্কতার নির্দেশক এবং গাড়ি ধীরে চলাচলের যিনি ব্যয়ভার করা হতো সাদা রং। সেই সময় হলুদ রঙের ব্যবহারের প্রচলন ঘটেনি। কিন্তু বৈজ্ঞানিক যুক্তিকে অবজ্ঞা করার কোন জায়গা নেই তাই দিনের আলোয় সাদা রঙ বেশি দূর থেকে লক্ষ্য করা যেত না ফলে তার পরিবর্তে হলুদ রং ব্যবহার শুরু হয়।

বর্তমানে ট্রেন এবং বাস দুই ক্ষেত্রেই চলাচলের একই নিয়ম প্রযোজ্য। থামানোর জন্য লাল, চলাচলের দিক নির্দেশের জন্য সবুজ তীর চিহ্ন এবং ধীরে গাড়ি চালানোর জন্য হলুদ রঙের সিগনাল যুক্ত পোস্ট ব্যবহার করা হয়। এতে বৃষ্টি, ঝড়, কুয়াশা, যে কোনও পরিস্থিতিতে দূর থেকে সংকেত নজর করতে কোনও অসুবিধা হয় না। এর জেরে সুবিধা হয় চালকদের।

More Articles