ভারতের বিরুদ্ধে সাফল্যের পুরস্কার! কেন সেনাপ্রধান মুনিরের পদোন্নতি ঘটাল পাকিস্তান?

Asim Munir: প্রয়াত প্রাক্তন সেনাশাসক আয়ুব খানের পর পাক সেনার দ্বিতীয় অফিসার হিসাবে মুনির 'পাঁচ তারা জেনারেল' পদে বসলেন।

T

জেনারেল থেকে ফিল্ড মার্শাল পদে উত্তরণ হলো পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের। মঙ্গলবার থেকে তা কার্যকরও হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে শুধুমাত্র একজনই ফিল্ড মার্শাল পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। প্রয়াত প্রাক্তন সেনাশাসক আয়ুব খানের পর পাক সেনার দ্বিতীয় অফিসার হিসাবে মুনির 'পাঁচ তারা জেনারেল' পদে বসলেন। রাজনৈতিক মহলে এই নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। খোলসা হওয়া দরকার, কেন পেলেন মুনির এই পদ?

পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা এবং সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা এই পদোন্নতির অনুমোদন দিয়েছে। মুনির ১৯৮৬ সালে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধানও ছিলেন তিনি। ২০২২ সালে পাকিস্তানের ১১তম সেনাপ্রধান হন মুনির, তারপর থেকে ওই পদেই ছিলেন। উল্লেখ্য, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউল হক, পারভেজ মুশারফের মতো সেনাশাসকও ফিল্ড মার্শাল পদ পাননি।

ফিল্ড মার্শাল হলো পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক পদ এবং পাঁচ তারা বিশিষ্ট র‍্যাঙ্ক। সেই পদই পেলেন মুনির। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে এই পদমর্যাদা শুধুমাত্র বড় সম্মানই নয়, এটি দেশের যে কোনও বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও কর্তৃত্ব প্রদান করে। অর্থাৎ বর্তমানে মুনির পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শুধু নয়, পাকিস্তানের সরকারেরও অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী হবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জেনারেল আয়ুব খানও এই পদ পাওয়া নিয়ে চর্চায় এসেছিলেন। ১৯৫৮ সালে রক্তপাতহীন সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পরে নিজেকে এই পদে বসিয়েছিলেন জেনারেল আয়ুব খান। ভারতের ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র দু'জন সেনাপ্রধানই ফিল্ড মার্শাল হয়েছেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধবিজয়ী স্যাম হরমুসজি ফ্রামজি জামশেদজি মানকেশ এবং স্বাধীনতার পর ভারতের সেনাবাহিনীর প্রথম 'কমান্ডার-ইন-চিফ' কোডান্ডেরা মাডাপ্পা কারিয়াপ্পা।

আরও পড়ুন- পাকিস্তানের ‘জিহাদি জেনারেল’! কতখানি ক্রূর সেনা প্রধান মুনির?

মুনিরই ইতিহাসে প্রথম যাঁকে ফিল্ড মার্শাল পদে বসাল পাকিস্তানের অসামরিক নির্বাচিত সরকার। এই পদে মুনির সেনাবাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার যেমন পাবেন পাশাপাশি রাজনৈতিক-সামারিক বিষয়েও নীতি-নির্ধারকের ভূমিকা পালন করবেন। জল, স্থল এবং নৌ-তিন সেনাবাহিনীরই নিয়ন্ত্রণ এখন মুনিরের হাতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনি এখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর স্বাধীনতা পেতে পারেন।

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই হামলার পর পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত করে ভারত। ৭মে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ন'টি জঙ্গিঘাঁটি আক্রমণ করে ভারতীয় সেনা। অভিযানের নাম ছিল 'অপরেশন সিঁদুর'। এরপর আবার পাকিস্তানের মুনির সেনা অভিযান 'অপরেশন বুনিয়ান মারসুস' শুরু করে। পাক সেনার নথিতে এই সংঘাত 'মারকা-ই-হক' নামে উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম 'দ্য ডন'-এ দাবি করা হয়েছে, এই সংঘাতে পাক সেনাবাহিনী সাফল্য পেয়েছে। তাই সেনা প্রধানকে এই পদ পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয়েছে।   

উল্লেখ্য, মুনির পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ঘনিষ্ঠ। শোনা যায়, মুনিরই ইমরান খানকে সরিয়ে শাহবাজ শরিফকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসিয়েছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সেই মুনিরকেই পুরস্কার দিলেন শরিফ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভারত-পাক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান বারবার নিজেদের জয় দাবি করে এসেছে। পাকিস্তান সাফল্য পেয়েছে বলেই দাবি করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। অনেকেই মনে করছেন, এই দাবি আরও বেশি করে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই মুনিরকে এই পদ দেওয়া হলো।

More Articles