বয়স ৮০০, লম্বায় ৩৮০ ফুট! জানেন, কেন লুকিয়ে রাখা হয়েছে বিশ্বের উচ্চতম গাছটির ঠিকানা?

World's Tallest Tree: ক্যালিফোর্নিয়ার বিশাল রেডউড গাছটির ঠিকানা আসলে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কেন?

লম্বা জিনিস আকর্ষণ করেই। আইফেল টাওয়ার হোক, উচ্চতম সেতু হোক, উচ্চতম মূর্তি হোক বা উচ্চতম শৃঙ্গ। স্বাভাবিকের চেয়ে বিশাল আকার মানুষকে টানে। প্যারিসের আইফেল টাওয়ারকে ঘিরে আম জনতার এত উন্মাদনা তো এই কারণেই। নিউ ইয়র্কের ক্রিসলার বিল্ডিং বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বুর্জ খলিফা তো এই কারণেই দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলও হয়ে ওঠে, লোক টানতে। তবে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীবন্ত গাছটির বেলা এই ঘটনা ঘটে না। চাইলেও আপনি জানতে পারবেন না পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু গাছটি ঠিক কোথায় আছে, সেটি কেমন দেখতে তা স্বচক্ষে দেখতে পাবেন না। সাধারণ জনগণের কাছ থেকে গোপন রাখা হয়েছে এই বিশেষ গাছটির অবস্থান। ক্যালিফোর্নিয়ার বিশাল রেডউড গাছটির ঠিকানা আসলে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এই গাছ আছে কোথায়?

উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার রেডউড ন্যাশনাল অ্যান্ড স্টেট পার্কের গভীরে লুকিয়ে আছে এই গাছ। দৈত্যাকার এই রেডউড গাছটির বিজ্ঞানসম্মত নাম সেকোইয়া সেম্পারভিরেন্স, ডাকনাম হাইপারিয়ন। এই বিশালাকার গাছটিই বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীবন্ত গাছ। দৈর্ঘ্য ১১৫.৯২ মিটার বা ৩৮০.৩ ফুট। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির থেকেও লম্বা এই গাছ।

ক্রিস অ্যাটকিন্স এবং মাইকেল টেলর ২০০৬ সালে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা এই গাছটি আবিষ্কার করেন। গাছটিকে বাঁচাতে এর সঠিক অবস্থানটি প্রচণ্ডভাবে সুরক্ষিত রাখা হয়। বিষয়টা এতটাই গোপনীয় যে গাছটির ঠিকানা কখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। যদিও কিছু কিছু প্রতিবেদন বলে, ২০১৫ সালে একটি ওয়েবসাইট গাছটির অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ প্রকাশ করে দেয়। তারপর থেকেই ওই এলাকায় বাড়তে থাকে অভিযাত্রীদের আনাগোনা। আসলে এই গাছের কাছে যাওয়ার জন্য সরাসরি কোনও পথ বা সহজ রাস্তা নেই। ঘন জঙ্গল পেরিয়েই পৌঁছতে হবে এই মহীরুহের কাছে।

আরও পড়ুন- ৬,০০০ বছর ধরে জ্বলছে অবিরাম! পৃথিবীর প্রাচীনতম আগুনের যে কাহিনি অজানাই

কেন সাধারণ মানুষ হাইপেরিয়ন গাছটি দেখতে পাবেন না?

ব্যাপক সংখ্যায় দর্শক হাইপেরিয়ন দেখতে বদ্ধপরিকর। আগ্রহীদের উৎপাত এতটাই যে ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস এখন এই পুরো এলাকাটিই বন্ধ করে দিয়েছে। নিয়ম ভেঙে ঢুকলে ৫,০০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হবে এবং জেল তো হবেই।

এই ন্যাশনাল পার্কের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রধান লিওনেল আরগুয়েলো জানিয়েছেন, লোকজন যাওয়া মানেই জায়গাটির ১২টা বাজবে। ওইখানকার গাছপালা এবং গাছের শিকড়তন্ত্রের উপর এর প্রভাব পড়ে। মানুষ গেলেই আবর্জনা ফেলে, শৌচকর্ম করে, মানুষই ব্যবহৃত টয়লেট পেপার এবং মল রেখে যায়। জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে এসব করা তো কাজের কথা নয়! তাই প্রবেশই বন্ধ। মূলত এলাকার আশেপাশের ফার্ন এবং গাছপালাগুলির ক্ষতি রোধ করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত কিন্তু পর্যটকদের কথাও এখানে মাথায় রাখা হয়েছে। যেহেতু এখানে প্রবেশের কোনও স্পষ্ট রাস্তা নেই এবং জিপিএস, সেলফোন পরিষেবাও নেই, তাই ভেতরে কোনও পর্যটক গিয়ে বিপদে পড়লে জরুরি পরিষেবার জন্যও তাঁদের কাছে পৌঁছানো খুব কঠিন। যদি কেউ জঙ্গলের ভেতর আহত হন, তাহলে সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করাটাই সমস্যার।

পৃথিবীর প্রাচীনতম গাছ কোনটি?

হাইপেরিয়নের বয়স নাকি প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ বছর! তবে বিশ্বের প্রাচীনতম গাছটি গ্রেট বেসিন ব্রিসটলকোন পাইন গাছ। ক্যালিফোর্নিয়াতে মেথুসেলাহ নামে পরিচিত এই গাছটি নাকি ৪,৮৫০ বছরেরও বেশি পুরনো। এশিয়ার সবচেয়ে লম্বা গাছটি ৩৩৫ ফুট লম্বা একটি সাইপ্রাস গাছ, এই বছরের মে মাসেই আবিষ্কৃত হয় গাছটি।

 

More Articles