হৃদপিণ্ড ছাড়াই একমাস ধরে বহাল তবিয়তে জীবিত! আশ্চর্য এই ঘটনায় হতভম্ব চিকিৎসকরাও

Craig Lewis Heartless Man : বুকের বাঁ দিকে কান পাতলে শোনা যাবে না স্পন্দন… এভাবে আদৌ বেঁচে থাকা সম্ভব?

হৃদপিণ্ড আর বুকের বাঁ দিকে লাবডুব – জীবনের স্পন্দন এভাবেই ধরা দেয় মানুষের কাছে। হৃদয় ছাড়া কি জীবন চলে? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। আট থেকে আশি,সবার কাছেই হৃদপিণ্ড নামের অঙ্গটির গুরুত্ব কতখানি তা আর বলার দরকার নেই। কিন্তু যদি এই হার্ট ছাড়াই একজন বেঁচে থাকেন? তাও এক-দু’সেকেন্ড নয়; গোটা একটা মাস? বুকের বাঁ দিকে কান পাতলে শোনা যাবে না স্পন্দন… এভাবে আদৌ বেঁচে থাকা সম্ভব?

বিশ্বের নানা প্রান্তে, নানা সময় বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা ঘটে। কিছু জিনিস ব্যখ্যা করা যায়, কিছু আবার ব্যাখ্যার অতীত। ক্রেইগ লুইসের গল্প তেমনই এক অলৌকিক। বলা ভালো, মিরাকল! আমেরিকার বছর পঞ্চান্নের এই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। শরীর একেবারে কঙ্কালসার, দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন তিনি, নিঃশ্বাস নেওয়াও সমস্যা হয়ে যাচ্ছিল। পরিবারের লোকজন চিন্তায় পড়ে যান। শেষমেশ লুইসের স্ত্রী তাঁকে টেক্সাসের হার্ট ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। ধরা পড়ে, ক্রেইগের হৃদপিণ্ডের অবস্থা খুবই খারাপ! এতটাই খারাপ, যে পেসমেকার বসিয়েও ঠিক করা যাবে না। কী করা যাবে? এভাবে কিছু না করেই চোখের সামনে একজনকে শেষ হতে দেখবেন ডাক্তাররা?

চিকিৎসকরা জানান, ক্রেইগ একটি বিরল রোগে আক্রান্ত, নাম অ্যামাইলয়ডসিস। এই রোগে শরীরের ভেতরে ক্ষতিকারক প্রোটিন তৈরি হয়, যা হার্ট, কিডনি প লিভারে আক্রমণ করে। ফলে হঠাৎ করে মাল্টিঅর্গান ফেলিওরের ভয় থাকে। ক্রেইগের ক্ষেত্রেও হয়তো সেইদিকেই যাচ্ছিল। হার্টের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। শেষমেশ রাস্তা পেলেন চিকিৎসকরা। ঝুঁকিপূর্ণ বটে; বেশিক্ষণ হয়তো বাঁচতেও পারবেন না ক্রেইগ লুইস। তবুও, চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি!

শুরু হল জটিল অপারেশন। টেক্সাসের ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিয়ে এলেন বিশেষ একটি যন্ত্র ‘কন্টিনুয়াস ফ্লো ডিভাইস’। ক্রেইগের স্ত্রী লিন্ডা সম্মতিও দিয়ে দিলেন। হাতে বেশি সময়ও বাকি নেই। তড়িঘড়ি ক্রেইগের শরীর থেকে হৃদপিণ্ড কেটে বাদ দিলেন ডাক্তাররা! হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। আস্ত হৃদপিণ্ড কেটে বাদ দেওয়া হল। তারপর ওই কন্টিনুয়াস ফ্লো যন্ত্রটিকে বসানো হল হার্টের জায়গায়। এই যন্ত্রটা আসলে শরীরের ভেতরে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করবে। কিন্তু কোনও স্পন্দন পাওয়া যাবে না।

অপারেশনের পর বহাল তবিয়তে উঠে বসলেন ক্রেইগ। চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন, খুব বেশি হলে ১২ ঘণ্টা বাঁচবেন এই ব্যক্তি। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা পেরিয়ে গেল ১২ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা… ক্রেইগ বেঁচে রইলেন। স্ত্রী লিন্ডা হাত ধরে দেখলেন, শরীরে কোনও স্পন্দন নেই। লাবডুবের আওয়াজ নেই। অথচ তাঁর স্বামী বসে আছেন বিছানায়! কথা বলছেন, কাজ করছেন, খাচ্ছেন। চোখের সামনে এ কোন ইন্দ্রজালের খেলা! প্রথম মানুষ হিসেবে রেকর্ড তৈরি করলেন ক্রেইগ।

এর আগে অবশ্য ৫০টি বাছুরের শরীরে এই যন্ত্রটি বসিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। হৃদপিণ্ড সরিয়ে এই যন্ত্রটি বসিয়ে দেখা গেল, স্পন্দন ছাড়াই দিব্যি বেঁচে আছে বাছুরগুলো। কিন্তু এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ক্রেইগ বেঁচে থাকবেন, সেটা একপ্রকার আশ্চর্য তো বটেই! অবশ্য ওই বিরল রোগের প্রকোপ থেকে হৃদয় বেঁচে গেলেও, লিভার আর কিডনি বাঁচেনি। ২০১১-র এপ্রিল মাসে এই দুটি অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। মারা যান ক্রেইগ লুইস। কিন্তু ততদিনে তিনি মিরাকল করে ফেলেছেন। সংবাদ শিরোনামে তাঁর নাম জ্বলজ্বল করছে। হৃদপিণ্ডহীন প্রথম জীবন্ত মানুষ বলে কথা!

More Articles