বাংলাদেশে ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী! বাড়ি ফিরতে পারবেন?
Rohingya refugees in Bangladesh: বিবৃতিতে তারা আরও বলেছে, ‘আমরা মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তীব্র নিন্দা জানাই।'
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। প্রথমটি হল, ২৫ অগাস্ট বাংলাদেশের কক্সবাজারে। অন্য দুই সম্মেলনের একটি হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। অন্যটি হবে ৬ ডিসেম্বর কাতারে। এই দিন বাংলাদেশের কক্সবাজারের সম্মেলনে পশ্চিমা বিশ্বের ১১টি দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মায়ানমারের রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করে। এখন সেই সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। মায়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের জাতীয় প্রতিনিধি কমিটির চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী কামাল হোসেন বলেন, ২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সংস্থা, বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগোষ্ঠী বা মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো প্রত্যক্ষ সংলাপে অংশ নিতে পারেনি। তাই এই সম্মেলন রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও হতে পারে।
আরও পড়ুন- হাজার বছর ধরে অত্যাচারিত, কেমন আছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরনার্থীরা?
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা ত্রাণ সহায়তায় নির্ভরশীল। কিন্তু তাঁরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম ত্রাণ পান। এর ফলে ওই শরণার্থীদের সঙ্কট আরও বাড়ছে। আল জাজিরার কক্সবাজার প্রতিনিধি টনি চেং বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ২০২৫ সাল থেকে রেশন কমিয়ে ১২ থেকে ৮ ডলার করা হয়। এখন তা ৬ ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা সহায়তা বাড়িয়েছে ঠিকই, তবে এ অর্থ সহায়তা কেবল সেপ্টেম্বর পর্যন্তই দেওয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আর নিজ ভূমিতে ফেরানো যায়নি। দু-বার প্রত্যাবাসনের কথা হলেও শেষে তা আর করা যায়নি। বরং দেখা গিয়েছে, গত দেড় বছরে নতুন করে এসেছে ১ লক্ষ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা। এই পরিস্থিতিতে ২৫ অগাস্ট ১১ টি দেশ যৌথ বিবৃতি দিয়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের দৃঢ়তা ও সহনশীলতাকে সাধুবাদ জানাই, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কঠিন বাস্তবতা ও বাস্তুচ্যুতি সহ্য করে চলেছেন।’ আরও বলা হয়, ‘আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং সাধারণ মানুষের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যাঁরা রোহিঙ্গাদের, বিশেষ করে নতুন করে আসা মানুষদেরও আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়ে চলেছেন এবং জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।’
বর্তমানে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে চাওয়া নিয়ে বিবৃবিতে বলা হয়েছে, এখনও সীমান্ত পেরিয়ে অনেকেই মায়ানমার থেকে আসছেন। শুধু তাই নয়, মায়ানমারের মধ্যেই অনেক রোহিঙ্গা রাখাইনে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছেন। বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে, মায়ানমার এখন এমন পরিস্থিতি নেই যে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন- রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে সরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ঠিক কী ঘটেছিল ৬ বছর আগে
যৌথ বিবৃতিতে ১১ টি দেশ আরও বলে, ‘এই শর্ত পূরণ করতে হলে বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলির সমাধান প্রয়োজন, যার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মায়ানমার প্রয়োজন। তাই আমরা স্বীকার করছি, এখনই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই, সব পক্ষের প্রতি একটি প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য জরুরিভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে তারা আরও বলেছে, ‘আমরা মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তীব্র নিন্দা জানাই।' অন্যায়ভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তিরও দাবি করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
উল্লেখ্য, একধিকবার আন্তর্জাতিক উদ্যোগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফেরানোর কথা হয়েছে।আট বছর আগে এই দিনেই তাঁরা দেশ ছেড়েছিলেন। ২৫ অগাস্ট ফের তাঁরা নিরাপদে মায়ানমারে ফেরার দাবি তুলেছেন। আমেরিকার সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানাচ্ছে, কক্সবাজারের কুটুপালং শরণার্থী শিবিরের সামনে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জমায়েত করেন। শেষে পরে থাকে একটাই প্রশ্ন, কবে নিজ ভূমিতে সম্মানের সঙ্গে ফিরতে পারবেন রোহিঙ্গারা?

Whatsapp
