১০২ দিন পর পরিবারের সঙ্গে কথা! কবে দেশে ফিরবেন সোনালিরা?
Sunali Khatun pushback case: সোনালির বাবা ভাদু শেখ বলেন, ১৯৫২ সালের শংসাপত্র রয়েছে আমাদের কাছে। আমরা জন্মেছি এখানে এখানেই মারা যাব। আমরা কেন বাংলাদেশি তকমা নিয়ে বাঁচব? আমি চাই আমার মেয়ে এখানেই সন্তান প্রসব করুক।
১০২ দিন পর পরিবারের সঙ্গে কথা বললেন বাংলাদেশে পুশব্যাকের শিকার বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক সোনালি খাতুন, সুইটি বিবিরা। জানালেন, বাড়ি ফেরার জন্যে দিন গুণছেন। সোনালি কথা বললেন তাঁর ছ'বছরের কন্যাসন্তানের সঙ্গেও।
বাংলাদেশ চাপাইনবাবগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে জামিনে মুক্ত দিয়েছে সোনালি খাতুন, সুইটি বিবি, দানিশ শেখদের। এজলাসে ছিলেন পাইকরের বাসিন্দা মফিজুল শেখ, সোনালিদের আইনজীবী শফিক এনায়েতুল্লা এবং জামিনের গ্যারেন্টার স্থানীয় ফারুক আলির। শর্ত: দশদিন অন্তর স্থানীয় পুলিশ সোনালিদের ব্যাপারে আদালতে রিপোর্ট জনা দেবে। সোনালি, সুইটিদের নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখবে চাপাইনবাবগঞ্জ মডেল থানা। সোনালি, সুইটিরা এদিন ভিডিও কলে বীরভূমের পাইকরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সোনালি। আসন্নপ্রসবা সোনালি বাবা ভাদু শেখকে বলেন,
দ্রুত দেশে ফিরতে চাই।
আরও পড়ুন
অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুন বনাম ভারতরাষ্ট্র: পরিযায়ী শ্রমিকের যুদ্ধ চলছেই
ইনস্ক্রিপ্ট-কে সোনালি খাতুন বলেন,
আমাদের কী অপরাধ যে আমাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হল? আমার হাতে সময় বেশি নেই। আমার ন'মাস চলছে। আপনাদের মাধ্যমে হাতজোড় করে বলছি, দেশে ফিরে যেতে চাই।
সোমবার মুক্তি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সোনালি, সুইটি, দানিশদের ডেকে পাঠায় চাপাইনবাবগঞ্জ মডেল থানা। আদালত জামিন দেওয়ার পরেও কেন ফের শমন? খবর আসতেই উদ্বেগ ছড়ায় পাইকরে। মঙ্গলবার সোনালিদের ছেড়ে দেয় চাপাইনবাবগঞ্জ থানা। তাদের দাবি, সোনালিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই থানায় রাখা হয়েছিল। আজ বুধবার সোনালির মেডিক্যাল টেস্ট হওয়ার কথা।
সোনালিদের খবরাখবর নেওয়ার জন্যে রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবে বেশ কিছুদিন যাবৎ বাংলাদেশে রয়েছেন পাইকরেরই বাসিন্দা মফিজুল শেখ। মফিজুল বলেন,
যে কোনো মুহূর্তে সন্তান প্রসব করতে পারেন সোনালি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে সোনালির চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি না হয়। কিন্তু সোনালির আত্মীয় পরিজনের মাঝে নিজের দেশে সন্তান জন্ম দেওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা চাই সরকার বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুক।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারকে সোনালি বিবি-সহ ছ'জন পরিযায়ী শ্রমিককে একই নির্দেশ দিয়েছিল ৷ সময়সীমা শেষ হওয়ার দুদিন আগে রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় কেন্দ্র। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকার৷
প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ শুনানি চলাকালে কেন্দ্রকে বলে,
অনেক তথ্য রেকর্ডে রয়েছে। জন্মের শংসাপত্র, আত্মীয়দের সঙ্গে থাকতেন এটাও এক ধরনের প্রমাণ। অভিযোগ, আপনারা বক্তব্য না শুনেই পাঠিয়ে দিয়েছেন।
বেঞ্চের মন্তব্য,
বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে কেউ প্রবেশ করেছে এমন চিহ্নিত কাউকে আপনারা পুশব্যাক করতেই পারেন। তা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এটা নিশ্চিত করতে হবে তিনি যেন দেশের নাগরিক না হন। কেউ যদি বলেন ভারতে জন্ম নিয়েছেন, এখানে ছোট থেকে বড় হয়েছেন তবে তাঁর অধিকার রয়েছে। তাঁর কথা শোনা উচিত।
সোমবার শুনানিতে সূর্য কান্ত কেন্দ্রের উদ্দেশে বলেন,
আমরা সরকারের অবস্থান জানাতে বলেছিলাম। মানবিক দিকগুলি মাথায় রেখে সরকারের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা দরকার ছিল।
একই সঙ্গে এক গর্ভবতী নারীর ব্যাপারে গড়িমসির কারণেও আদালত ভর্তসনা করে কেন্দ্রকে। আজ, বুধবার ফের সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি রয়েছে, এই শুনানিতেই স্থির হবে বাংলাদেশে আটকে থাকা সোনালি-সহ ছ'জন দেশে ফিরতে পারবেন কিনা।
আরও পড়ুন
নথি যাচাই না করেই কেন ঘাড় ধাক্কা সোনালিদের? কেন্দ্রের কাছে জবাব চায় সুপ্রিম কোর্ট
গত ২০ অগাস্ট থেকে চাপাইনবাবগঞ্জ সংশোধনাগারে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বন্দি ছিলেন সোনালি খাতুনরা। সোনালিদের ফিরিয়ে আনতে আদালতের দারস্থ হন সোনালির বাবা ভাদু শেখ।
দিল্লিতে গত দু'দশক কখনও কাগজকুড়ুনি কখনও গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন সোনালি খাতুন। গত ১৮ জুন দিল্লির কে এন কাটজুনগর থানার পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে সোনালিদের গ্রেফতার করে। সোনালির পরিবারের অনুমান ছিল বীরভূম লাগোয়া মেহেদি বর্ডার দিয়ে সোনালিদের পুশব্যাক করা হয়েছে। মফিজুল বাংলাদেশে গিয়ে সোনালিদের সঙ্গে দেখা করলে জানতে পারেন অন্য তথ্য। তিনি দা ওয়ারকে জানান, অসমের কুড়িগ্রাম দিয়ে বর্ডার পার করে সোনালিদের কার্যত গলাজলে নামিয়ে দেওয়া হয়। সোনালিরা ফেরত আসতে চাইলে বিএসএফ তাদের ব্যাপক হেনস্থা করে। বিএসএফ-এর মারধরে দানিশ মাথায় আঘাত পান বলেও অভিযোগ করেন মফিজুল সেখ।
সোনালির বাবা ভাদু শেখ বলেন, ১৯৫২ সালের শংসাপত্র রয়েছে আমাদের কাছে। আমরা জন্মেছি এখানে এখানেই মারা যাব। আমরা কেন বাংলাদেশি তকমা নিয়ে বাঁচব? আমি চাই আমার মেয়ে এখানেই সন্তান প্রসব করুক। শুধু বাংলা বলার অপরাধে আমাদের এই হেনস্তা সহ্য করতে হলো। সোনালিকে আর কখনও দিল্লি পাঠাব না।

Whatsapp
