আটকে আছে দু'হাজার বাঙালি, ত্রাসের নাম সিকিম
Sikkim Flood: অনেকেই সিকিমের এই বিপর্যয়কে কেদারনাথ বিপর্যয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সিকিমে ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে নেমেছে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স।
পুজো আসতে আর এক মাসও নেই। তার মধ্যেই ভয়াল প্রকৃতির রোষের মুখে পড়ল শৈলশহর সিকিম। পর্যটনের মরসুমে যে ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখে পড়েছে উত্তরপূর্বের এই রাজ্যটি, তা ভাবনার বাইরে। বিপর্যস্ত সিকিমে হু হু করে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। জলে ভেসে আসছে একের পর এক শবদেহ। নিখোঁজ ছাড়িয়েছে শতাধিক। মঙ্গলবার ভোর রাতে আচমকাই মেঘ ভাঙা বৃষ্টি নামে সিকিমের লোনাক লেকে। হ্রদ ফাটিয়ে হড়পা বান এসে ভাসিয়ে নেয় লোকালয়। ভাসে তিস্তা। ভয়াল রূপ নেয় তিরতিরে নদী। অন্তত এগারোটি সেতু গ্রাস করেছে সে। ভেসে গিয়েছে জাতীয় সড়কের বড় অংশ। সব মিলিয়ে কার্যত বিপর্যস্ত সিকিম।
মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ১৪ ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই খোঁজ নেই ২৩ জন সেনাজওয়ানের। সময় যত এগিয়েছে আরও বেড়েছে নিখোঁজের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, অন্তত ১০২ জনের কোনও খোঁজ নেই সিকিমে। যার মধ্যে রয়েছে ওই ২২ জন সেনাজওয়ানও। বিপর্যয়ে অন্তত ২৬ জন জখম বলে জানা গিয়েছে। অন্তত ২ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক এই বিপর্যয়ে অন্তত ২২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানাচ্ছে আপাত পরিসংখ্যান।
আরও পড়ুন: সেতুর পর সেতু, বাড়িঘর ভাসিয়েও ফুঁসছে তিস্তা! কোন ভুলের মাশুল দিচ্ছে সিকিম?
অনেকেই সিকিমের এই বিপর্যয়কে কেদারনাথ বিপর্যয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সিকিমে ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে নেমেছে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (NDRF), তাছাড়াও উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে একাধিক উদ্ধারকারী সংস্থা। পাশে রয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। কার্যত সাম্প্রতিক এই বিপর্যয়ে শুধু সিকিম নয়, ভেসে গিয়েছে গোটা উত্তরপূর্বই।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মৃত্যুর খবর মিলেছে পূর্ব সিকিমের প্যাকিয়ং থেকে। অন্তত ৭ জন মারা গিয়েছে সেখানে। নিখোঁজ অন্তত ৫৯। যার মধ্যে রয়েছেন ২৩ জন সেনাজওয়ানও। অন্তত ৩ হাজার পর্যটক আটকে রয়েছে সিকিমের বিভিন্ন অংশে। সিকিমের মুখ্য সচিব ভিবি পাঠক জানান, লোনাক লেকে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির পরেই উত্তরপশ্চিম সিকিমে জল বাড়তে থাকে। হড়পা বান আসায় বিপদসীমা পেরিয়ে বইতে থাকে তিস্তা নদী। বাংলাদেশে ঢোকার আগে সিকিমকে কার্যত ধুইয়ে নিয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকছে তিস্তার জল।

তিস্তার বিভিন্ন পাড়ে ক্রমশ বাড়ছে জল। চাংথামে বিপদসীমা ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছে। তিস্তার স্টেজ থ্রি ড্যাম ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে। পাশাপাশি চাংথামে ভেঙে গিয়েছে একটি লেকও। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের বড় অংশ। আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গনের সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে একাধিক জরুরি পরিষেবার নম্বর। জলপাইগুড়ির সমস্ত স্কুল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।
আরও পড়ুন: মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান! বিপর্যস্ত সিকিমে বাড়ছে মৃত্যু, খোঁজ নেই ২৩ সেনাজওয়ানের
পুজোর আগে এই সিকিম বিপর্যয়ের জেরে বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য পর্যটক। অনেকেরই পুজোর ছুটিতে সিকিমে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সমস্ত বুকিংও সারা। কিন্তু সাম্প্রতিক এই বিপর্যয়ে সেই সমস্ত পরিকল্পনা কার্যত পণ্ড হওয়ার পথে। তবে আপাতত পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ সিকিমে আটকে থাকা অসংখ্য বঙ্গের পর্যটক। একের পর এক ব্রিজ ধসে যাওয়ায় কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে সিকিম থেকে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি আসার সমস্ত পথ। ফলে তাঁদেরকে কীভাবে নিরাপদে রাজ্যে ফেরানো যায়, সেটা নিয়েই উদ্বেগে রাজ্য। ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে একাধিক জরুরি নম্বর।

Whatsapp
