কপ ৩০-এর প্রতি আবেদন: বাসযোগ্য ভবিষ্যতের জন্য, বড় দূষণকারীদের তাড়িয়ে দিন
cop 30: যেসব কর্পোরেশন পৃথিবীর জলবায়ু সংকটের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী, তারা একইসঙ্গে জলবায়ু আলোচনার নীতি প্রভাবিত করার সুযোগ পাচ্ছে।
গত ১ অক্টোবর, বিশ্বের ২২৫টিরও বেশি সংগঠন এবং নেটওয়ার্ক স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে 'ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ' (ইউএনএফসিসি)-এর জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন 'কপ ৩০' প্রেসিডেন্সির প্রতি আবেদন জানানো হয়েছিল, জলবায়ু আলোচনার টেবিলে বিশ্বের বৃহত্তম দূষণকারীদের আমন্ত্রণ জানানো বন্ধ করার। এই চিঠিটি কপ ৩০-এর মনোনীত সভাপতির সাম্প্রতিক জনযোগাযোগের প্রতিক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি ব্রাজিলের বেলেমে আসন্ন জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনাকে "আমাদের সময়ের নির্দিষ্ট কার্যকর সাফল্যের সুযোগ" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং রাষ্ট্রনেতাদের নভেম্বরে জলবায়ু আলোচনায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
১ অক্টোবরের বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা, যাঁরা সম্মিলিতভাবে বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন— সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, সবুজ ধোঁয়াশা (greenwashing) এবং স্বার্থের সংঘাতের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট সুরক্ষা ছাড়া বহুজাতিক কর্পোরেশনদের আমন্ত্রণ জানানো, জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কার্যকারিতাকে ক্ষুণ্ণ করে। এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আসছে যখন ইউএনএফসিসি-এর কাছে প্যারিস চুক্তির উদ্দেশ্যগুলির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বেসরকারি স্বার্থ দ্বারা তার নীতি প্রণয়ন প্রভাবিত হচ্ছে না, তা নিশ্চিত করার জন্য কোনো তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবস্থা নেই। ব্রাজিলের 'ফেডারেশন অফ অর্গানস ফর সোশ্যাল এন্ড এডুকেশন্যাল এসিস্ট্যান্স'-এর নির্বাহী পরিচালক লেটিসিয়া টুরা বলেছেন, "পরিবেশ দূষণ এবং সরাসরি লঙ্ঘনের পাশাপাশি, বড় কর্পোরেশনগুলি কপ-গুলিতেও দূষণ করে। তাদের কপ-গুলিতে অংশগ্রহণ সীমিত করা, জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য সহযোগিতা জোরদার করা এবং অঞ্চল ও তার জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা জরুরি।" আরেকজন স্বাক্ষরকারী, ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক-এর তাসনিম এসপ বলেছেন, "কর্পোরেট স্বার্থ— বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের— কয়েক দশক ধরে আক্রমণাত্মক লবিং, ভুল তথ্য এবং চাকচিক্যময় জনসংযোগ প্রচারণার মাধ্যমে পদ্ধতিগতভাবে জলবায়ু অগ্রগতিকে নাশ করেছে। কপ-এর সভাস্থলগুলি সংকটের চালক সেই শিল্পগুলির জন্য বিপণনের খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে, অথচ আদিবাসী জনগণ এবং সম্মুখসারির সম্প্রদায়গুলি অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।"
এই চিঠিটি ব্যবসায়িকদের প্রতি অবাধ আমন্ত্রণকে "দূষণকারী ব্যবসায়, এবং তাদের সহায়তাকারীরা, যে সরাসরি জলবায়ু সংকটের জন্য দায়ী সেই বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন" বলে সমালোচনা করেছে। উপরন্তু, এটি 'কপ ৩০' সংগঠকদের একটি পিআর সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বের উদ্বেগজনক প্রকৃতিকে তুলে ধরেছে, যারা একই সঙ্গে বড় তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলির স্বার্থ প্রচার করে, যা জলবায়ু কূটনীতির কেন্দ্রে থাকা গভীর স্বার্থের সংঘাতকে তুলে ধরে। স্বাক্ষরকারীরা এই ব্যবস্থার অবিলম্বে সমাপ্তি এবং কপ ৩০ যেন জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প ও অন্যান্য দূষণকারী শিল্প দ্বারা ক্ষুণ্ণ না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের দাবি জানিয়েছে। জাস্ট ট্রানজিশন অ্যালায়েন্স-এর ফার্নান্দো টর্মোস আপোন্তে বলেছেন, "যদিও দাবি করা হচ্ছে যে, এটি ন্যায্য উত্তরণের জন্য একটি ঐতিহাসিক বছর, তবুও পরিবেশগত ন্যায়বিচার গোষ্ঠী এবং সম্প্রদায়গুলি কপ ৩০ থেকে বাদ পড়েই চলেছে অথচ দূষণকারীরা প্রথম সারিতে জায়গা পাচ্ছে। জলবায়ু সংকটে প্রভাবিত গোষ্ঠী এবং এটিকে মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা ছাড়া কোনো ন্যায্য উত্তরণ হতে পারে না।"
আরও পড়ুন- ‘আমাদের বন বিক্রির জন্য নয়’, কেন COP30 সম্মেলনে আদিবাসী ও পরিবেশকর্মীদের প্রতিবাদ?
স্বাক্ষরকারীরা কপ ৩০ প্রেসিডেন্সির কাছে চারটি নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দাবি করেছিল :
১. দূষণকারী-মুক্ত কপ : দূষণকারী কর্পোরেশনদের কাছ থেকে কোনো কর্পোরেট স্পনসরশিপ থাকবে না।
২. দূষণকারী-মুক্ত প্রেসিডেন্সি: দূষণকারীদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য কোনো নেতৃত্বের ভূমিকা থাকবে না, যার মধ্যে এডেলম্যান পিআর ফার্মের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সমাপ্তি অন্তর্ভুক্ত।
৩. জলবায়ু আলোচনাকে এমন শিল্পগুলি থেকে রক্ষা করা এবং জবাবদিহিতা কাঠামোর অগ্রগতি নিশ্চিত করা, যাদের মুনাফা রক্ষার জন্য জলবায়ু পদক্ষেপকে দুর্বল করার ইতিহাস আছে। ৪. প্রকৃতির বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, বিশেষ করে আমাজন রেইনফরেস্টকে সুরক্ষিত করা।
এই চিঠির এক মাস দশ দিন পরে, ১০ নভেম্বর আমাজন রেইনফরেস্ট-এর বুকে বেলেম শহরে 'কপ ৩০' শুরু হলো। বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছেন সম্মেলনে। এই প্রতিবেদন যখন লিখছি, তখন সম্মেলন প্রথম ৬ দিন পার করে সপ্তম দিনে পড়েছে। প্রথম সপ্তাহে দেখা গেল, বিশ্বের ২২৫টিরও বেশি সংগঠন কপ ৩০-এর আয়োজকদের কাছে ‘পলিউটার-মুক্ত কপ’-এর দাবি জানালেও সাড়া মেলেনি। কর্পোরেট দখলদারিত্ব থেকে আলোচনাকে মুক্ত করার জন্য কোনো সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিন দশকের আলোচনা সত্ত্বেও জীবাশ্ম জ্বালানি নিষ্কাশন কমানো, বাস্তবসম্মত সমাধান গ্রহণ এবং ন্যায়বিচার ভিত্তিক জলবায়ু পদক্ষেপ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বরং প্রমাণ জমা হচ্ছে যে, ফসিল ফুয়েল শিল্প পরিকল্পিতভাবে এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে— এবং যতক্ষণ পর্যন্ত এই বাধা দূর না করা হবে, ততক্ষণ কপ ৩০ তো বটেই, ভবিষ্যতের সব কপ-ই ব্যর্থ হওয়ার জন্য অভিশপ্ত থাকবে।
কপ ৩০-এর হলগুলোতে রেকর্ড সংখ্যক ১,৬০২ জন জীবাশ্ম জ্বালানির লবিস্ট ঘোরাফেরা করছেন বলে 'কিক বিগ পলিউটার্স আউট' (কেবিপিও) গোষ্ঠীর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এর অর্থ হলো এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতি ২৫ জনের মধ্যে একজন হলেন লবিস্ট। জলবায়ু পদক্ষেপের নীতি নির্ধারণে 'বৃহৎ দূষণকারীদের' ক্ষমতা বন্ধের দাবি নিয়ে গঠিত ৪৫০টিরও বেশি সংস্থার জোট হলো 'কিক বিগ পলিউটার্স আউট' (কেবিপিও), যারা প্রতি বছর রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে উপস্থিত লবিস্টদের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকে। তাদের বিশ্লেষণ অনুসারে, ১,৬০২ জন লবিস্টের এই সংখ্যাটি সম্মেলনে প্রায় যেকোনো দেশের প্রতিনিধি দলের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি; শুধুমাত্র স্বাগতিক ব্রাজিলই (৩,৮০৫ জন) এর চেয়ে বেশি প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। আনুপাতিকভাবে, কপ ৩০-এ জীবাশ্ম জ্বালানির লবিস্টদের এই উপস্থিতি গত বছর আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু আলোচনার তুলনায় ১২% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কেবিপিও তাদের পর্যবেক্ষণ শুরু করার পর থেকে এটিই লবিস্টদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দশটি দেশের সমস্ত প্রতিনিধির (মোট ১,০৬১ জন) সম্মিলিত প্রবেশের চেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ বেশি প্রবেশপত্র এই জীবাশ্ম জ্বালানির লবিস্টদের দেওয়া হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল এমিশনস ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন এক্সনমোবিল, বিপি এবং টোটালএনার্জিসের মতো তেল ও গ্যাস সংস্থাগুলির প্রতিনিধিসহ মোট ৬০ জনকে কপ ৩০-এ নিয়ে এসেছে। কেবিপিও আরও জানিয়েছে, গ্লোবাল নর্থের কিছু দেশও তাদের সরকারি প্রতিনিধিদলে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। যেমন, ফ্রান্স তার দলে সিইও প্যাট্রিক পৌইয়ানে সহ টোটাল এনার্জি থেকে পাঁচজন সহ মোট ২২ জন জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতিনিধিকে রেখেছে। কেবিপিও -এর সদস্য জ্যাক্স বনবন এক বিবৃতিতে বলেছেন, "এটা সাধারণ জ্ঞান যে, যারা একটি সমস্যার কারণ, তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিলে সেই সমস্যার সমাধান করা যায় না।" তিনি কঠোর ভাষায় যোগ করেন, "তবুও তিন দশক এবং ৩০টি কপ সভার পরেও, ১,৫০০-এর বেশি জীবাশ্ম জ্বালানির লবিস্টরা জলবায়ু আলোচনায় এমন ভাবে ঘোরাফেরা করছে যেন এটা তাদেরই স্থান। কপ ৩০ একটি 'বাস্তবায়ন কপ' হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু এটি সেই সঙ্কট মোকাবিলার জন্য আয়োজিত সম্মেলনে বৃহৎ দূষণকারীদের বাইরে রাখার মতো একটি মৌলিক দাবিও বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।"
আরও পড়ুন- গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জিয়নকাঠি! যেভাবে পরিবেশের সর্বনাশ করছে কার্বন ডাই অক্সাইড
এই বাস্তবতা স্পষ্ট করে যে, যেসব কর্পোরেশন পৃথিবীর জলবায়ু সংকটের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী, তারা একইসঙ্গে জলবায়ু আলোচনার নীতি প্রভাবিত করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে, জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতিনিধিদের চেয়ে লবিস্টদের সংখ্যা প্রায়ই বেশি হয়ে যায়, এবং বৈশ্বিক সিদ্ধান্তগুলো মানুষ ও পৃথিবীর স্বার্থের বদলে কর্পোরেট মুনাফাকে অগ্রাধিকার দেয়। কপ ৩০-এর আগে প্রথমবারের মতো সরকার-বহির্ভূত অংশগ্রহণকারীদের জন্য স্বচ্ছতা ব্যবস্থা চালু হলেও তা অত্যন্ত সীমিত। এটি লবিস্টদের প্রবেশ রোধ করে না, আবার সরকারি ব্যাজ ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রেও কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়নি। প্রতি বছরই বহু ফসিল ফুয়েল লবিস্ট বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিনিধি দলের অংশ হয়ে আলোচনায় প্রবেশ করে, ফলে এই দুর্বল স্বচ্ছতা নীতি কার্যত তুচ্ছ হয়ে যায়। তবে এটা নতুন ঘটনা নয়। কেবিপিও-এর নতুন গবেষণা দেখায়, সাম্প্রতিক চারটি কপ সম্মেলনে ফসিল ফুয়েল লবিস্টদের উপস্থিতি কতটা গভীর ও ভয়াবহ ছিল।
কপ ২৬ থেকে কপ ২৯ পর্যন্ত অন্তত ৫,৩৬৮ জন ফসিল ফুয়েল লবিস্ট জলবায়ু আলোচনায় অংশ নিয়েছে। এদের নেপথ্যে ছিল মোট ৮৫৯টি জীবাশ্ম জ্বালানি সংক্রান্ত সংস্থা, যার মধ্যে অন্তত ১৮০টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি তেল ও গ্যাস কর্পোরেশন— যাদের প্রধান দায়িত্বই হলো জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসার ঘটানো ও শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফা বাড়ানো। শেল (Shell) একাই এই চার কপ-এ পাঠিয়েছে ৩৭ জন লবিস্ট, বিপি (BP) পাঠিয়েছে ৩৬, এক্সন (Exxon) ৩২ এবং শেভরন (Chevron) ২০ জন। এসব কোম্পানি বিশ্বের মোট তেল-গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশের জন্য দায়ী। ২০২৪ সালে তারা উৎপাদন করেছে ৩৩,৬৯৯ মিলিয়ন ব্যারেল তেল সমতুল্য হাইড্রোকার্বন— যা ১ সেন্টিমিটার পুরুত্বে ছড়ালে ফ্রান্সের মোট ভূখণ্ডের প্রায় সমান এলাকা ঢেকে ফেলতে সক্ষম। গবেষণা আরও দেখায়, কপ ২৬ থেকে কপ ২৯-এ অংশ নেওয়া তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো বিশ্বের স্বল্পমেয়াদি তেল-গ্যাস সম্প্রসারণ পরিকল্পনার ৬৩ শতাংশ পরিচালনা করছে। তাদের পরিকল্পনাধীন ১,৬৪, ৯৫৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল সমতুল্য নতুন প্রকল্প ২.৬ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা ঢাকার মতো বিশাল পরিমাণ তেল সংগ্রহ করবে।
২০২৩-২০২৫ সময়কালে এই সংস্থাগুলোর বার্ষিক অনুসন্ধান ব্যয় ছিল গড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার— যা বিশ্বব্যাপী তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি। এদের সদর দপ্তর ৪৫টি দেশে বিস্তৃত, যার মধ্যে অধিকাংশই গ্লোবাল নর্থ— জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, স্পেন, রাশিয়া ইত্যাদি। বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনার সততা ও বৈধতা রক্ষা করতে হলে প্রথম শর্ত হচ্ছে, দূষণকারী কর্পোরেশনগুলোর প্রভাবমুক্ত সিদ্ধান্তগ্রহণ। মানুষ ও পৃথিবীর স্বার্থকে কেন্দ্র করে জলবায়ু পদক্ষেপ গড়ে তুলতে হলে, অপরিহার্যভাবে একটি জবাবদিহিমূলক কাঠামো প্রয়োজন— যা প্রভাবশালী কর্পোরেট লবির পথ বন্ধ করবে এবং জাতিসংঘের জলবায়ু প্রক্রিয়াকে সত্যিকার অর্থে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ করে তুলবে। অন্যথায় জলবায়ু নীতি নির্ধারণের এই দীর্ঘ প্রচেষ্টা কেবল কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এবং পৃথিবীই তার সবচেয়ে বড় মূল্য চুকিয়ে যাবে। ১ অক্টোবরের চিঠিতে অন্যতম স্বাক্ষরকারী গ্লোবাল ফরেস্ট কোয়ালিশন-এর অ্যান্ড্রিয়া এচেভেরির মতে, "এখন পর্যন্ত, ইউএনএফসিসি-এর পথটি ভুল বলেই মনে হচ্ছে। কেন ১৯৯২ সালের রিও-এর পরে গ্রিনহাউস গ্যাসের সর্বোচ্চ ঘনত্ব কেন্দ্রীভূত হয়েছে? আপনাদের পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ, এবং আপনাদের প্রতিবেদন না পড়েই আমরা এটি অনুভব করি। আমরা এটি আমাদের জীবনে, আমাদের ফসলে, আমাদের অঞ্চলে অনুভব করি। আপনারা ১৯৯২ সাল থেকে আমাদের মিথ্যা কথা বলছেন। আমাদের মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করুন, ভবিষ্যতকে ঝুঁকিতে ফেলবেন না। একটি বাসযোগ্য ভবিষ্যতের জন্য, বড় দূষণকারীদের তাড়িয়ে দিন, জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প এবং কৃষি-ব্যবসা থেকে মুক্তি পান। তাদের তাড়িয়ে দিন অন্যথায় কারও জন্য কোনো ভবিষ্যত থাকবে না; এটি কোনো হুমকি নয়; এটি একটি বাস্তবতা, এবং এটি আপনাদেরকেও প্রভাবিত করবে। তাদের আপনাদের উপর কর্তৃত্ব করতে দেবেন না।"
Whatsapp
