গোমাংস রপ্তানিকারকদের থেকেও ইলেক্টোরাল বন্ডে কোটি কোটি টাকা! কে নিল?
Beef Exporter Electoral Bond: বিজেপি মুখে গো-হত্যা বিষয়ক কড়া নীতির কথা যতই বলুক না কেন গোমাংস রপ্তানিকারকদের থেকে টাকা নিতে কিন্তু কোনও বাধা রাখেনি।
গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় ভারতের নির্বাচন কমিশন ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছেন এমন হাজার হাজার ব্যবসায়ী এবং সংস্থার নাম প্রকাশ করেছে। তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই তা কাটাছেঁড়া করে বিস্ফোরক সব তথ্য সামনে এসেছে। কত টাকা কবে ঢোকার পর সেই দাতা কী কী সুবিধা কবে কবে পেয়েছে তার দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। বিজেপি ইলেক্টোরাল বন্ডে সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছে সকলেই জানেন। বিশ্লেষকদের একাংশ বলছে, বিজেপি মুখে গো-হত্যা বিষয়ক কড়া নীতির কথা যতই বলুক না কেন গোমাংস রপ্তানিকারকদের থেকে টাকা নিতে কিন্তু কোনও বাধা রাখেনি। তবে তথ্যে কোথাও এসবিআই জানায়নি কে কোন দলকে অনুদানটি দিল। এই দীর্ঘ তালিকার মধ্যে দু'টি গোমাংস রপ্তানিকারক সংস্থা — আল্লানসন্স প্রাইভেট লিমিটেড এবং ফ্রিগোরিফিকো আল্লানা প্রাইভেট লিমিটেড রয়েছে। দুই সংস্থাই আল্লানা গ্রুপ অফ কোম্পানিজ দ্বারা পরিচালিত।
আল্লানাসন্স ২০১৯ সালের ৯ জুলাই ২ কোটি টাকা এবং তারপর ৯ অক্টোবর ১ কোটি টাকা দান করেছিল। ফ্রিগোরিফিকো ওই বছর ৯ জুলাই ২ কোটি টাকা দান করেছিল৷ অর্থাৎ দুই সংস্থাই জুলাই মাসে ২ কোটি করে আর পরে আল্লানসন্স আবার ১ কোটি টাকা করে মোট ৫ কোটি টাকার বন্ড কেনে।
এছাড়াও আরও দু'টি কোম্পানি, আল্লানা কোল্ড স্টোরেজ ২০১৯ সালের ৯ জুলাই ১ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছে। গ্রিজেরিও কনসার্ভা আল্লানা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আবার ২ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। এই কোম্পানিগুলির সঙ্গে মূল সংস্থা আল্লানা জড়িত হলেও এর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ব্যক্তি। সমস্ত কোম্পানির সমস্ত টাকা মেলালে আল্লানা গ্রুপের মোট অনুদানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন- কোটি কোটি টাকা বন্ডের নামে রাজনৈতিক দলের বেইমানি এখনও সহ্য করে যাবেন?
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে আয়কর বিভাগের মুম্বই শাখা আল্লানা গ্রুপের অফিসে অভিযান চালায়। দ্য ইকোনমিক টাইমস অনুসারে, দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে ১০০টিরও বেশি শাখায় অভিযান চালানো হয়েছিল। ২০১৯ সালের এপ্রিল, অর্থাৎ আয়কর অভিযানের প্রায় তিন মাস পরে, কর বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন যে, 'ভারতের বৃহত্তম মোষের মাংস রপ্তানিকারক' ২,০০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। সংস্থার তরফে তখন মুম্বইয়ের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের ত্রাণ তহবিলে ৫০ লক্ষ টাকা দান করা হয়।
১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত, আল্লানসন্স প্রাইভেট লিমিটেডের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই সংস্থা ব্র্যান্ডেড প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য এবং কৃষি পণ্যের সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক, প্রস্তুতকারক। তাদের বার্ষিক ব্যবসার পরিমাণ ৫০০ থেকে ১,০০০ কোটি টাকা। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, সিআইএস, আফ্রিকা এবং প্যাসিফিক বেসিন নেশনস সহ ৮৫টিরও বেশি দেশে ব্র্যান্ডেড প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য এবং কৃষি পণ্যের ভারতের বৃহত্তম রপ্তানিকারক হচ্ছে এই সংস্থা। স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকায় আছে এই কোম্পানি এবং শারজাহর শিরাজ এআর আল্লানা-এর প্রবর্তক। আল্লানা গ্রুপের নিয়ন্ত্রক আব্দুল্লাহ আল্লানা।
অন্যদিকে, ফ্রিগোরিফিকো আল্লানা প্রাইভেট লিমিটেড ১৯৮৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার ওয়েবসাইট বলছে, ফ্রিগোরিফিকো আল্লানা প্রাইভেট লিমিটেড হলো মুম্বাইয়ের ১৫০ বছরের পুরনো আল্লানা গ্রুপের গ্রাহক পণ্য বিভাগ। কোম্পানিটি রান্নার তেল এবং চর্বি, বেকারির পণ্য এবং নির্দিষ্ট তেল ও চর্বি বিক্রি করে। দুই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের মধ্যেই আছেন আনোয়ার হোসেন চৌহান।
মুম্বইয়ের বাসিন্দা, আনোয়ার হোসেন চৌহান ৩২টি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। তিনি হিলাল ফুডস প্রাইভেট লিমিটেডের 'ক্যাজুয়াল ভ্যাকেন্সি ডিরেক্টর', আল্লানা ট্রেডিং অ্যান্ড এক্সপোর্টস লিমিটেড, আইভিপি লিমিটেড, আল্লানা ফ্রোজেন ফুডস প্রাইভেট লিমিটেড, ফ্রিগোরিফিকো আল্লানা প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর।
আরও পড়ুন- ইলেক্টোরাল বন্ডে সবচেয়ে বেশি টাকা অনুদান! কে এই লক্ষ্মী মিত্তল?
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আরেক বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ্যে আসে। ভারতের নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ আর্থিকবর্ষের অনুদানের প্রতিবেদন অনুসারে বিজেপি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে ফ্রিগোরিফিকো আল্লানা লিমিটেড, ফ্রিজেরিও কনভার্ভা আল্লানা লিমিটেড এবং ইন্ডঅ্যাগ্রো ফুডস লিমিটেডের কাছ থেকে ২.৫০ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে। ২০১৭ সালে বিজেপির সরকার 'আটটস্ট্যান্ডিং পারফর্ম্যান্সের' জন্য আল্লানসন্সকে পুরস্কৃতও করে। তাহলে বন্ডের এই টাকা গেল কোন দলের তহবিলে? এসবিআই সেই তথ্য জানায়নি।
এসবিআই-এর বন্ড তথ্য থেকে আরও জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী বন্ড কেনা শীর্ষ ৩০টি কোম্পানির মধ্যে অন্তত ১৪টির বিরুদ্ধেই কেন্দ্রীয় বা রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থাগুলির মামলা রয়েছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়, প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি নির্বাচনী ইস্যু হিসাবে গোমাংস রপ্তানির বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। ভারতে গত এক দশকে গোমাংসের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ব্রাজিলের পর ভারতই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গোমাংস রপ্তানিকারক দেশ।
স্ট্যাটিস্টা অনুসারে, ২০২৩ সালে ভারত থেকে প্রায় ১.৪২ মিলিয়ন মেট্রিক টন গোমাংস রপ্তানি করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে ১.৪৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন গোমাংস রপ্তানি হতে পারে।