নামজাদা কোচিং ছাড়াই WBCS-এ ২৭ তম স্থান! তাক লাগাবে মালদার পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলের সাফল্য
West Bengal Civil Service : চলতি মাসের ২ তারিখ ২০২০ সালের WBCS পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে সারা বাংলায় এক্সিকিউটিভ ‘এ’ বিভাগে ২৭ তম স্থান দখল করেছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের কেশব দাস।
জন্ম নয়, মানুষের কর্মই আসল পরিচয়। মুনি ঋষিরা যে কেবল এ কথা বলেছেন তাই নয়, বাস্তব সমাজও বারবার এই উদাহরণের সম্মুখীন হয়েছে। এক চিলতে ঘর, টানাটানির সংসার, সব কিছুকে উপেক্ষা করে যুদ্ধ জয়, সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠেছে সে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে নতুন নাম কেশব দাশ।সম্প্রতি WBCS পরীক্ষায় পাস করে BDO হয়েছে সে। গরীবের ছেলের এই সাফল্য ইতিমধ্যেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে তাবড় তাবড়দের।
হরিশ্চন্দ্রপুর-২ নম্বর ব্লকের হরদমনগর গ্রামের বাসিন্দা কেশব দাস। ছোট থেকেই লড়াই করেই বড়ো হয়েছে সে। বাবা একজন পরিযায়ী শ্রমিক। দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে অগাধ মেধা নিয়ে জন্মেছিলেন কেশব। ছোট থেকেই পড়াশোনায় ঝোঁক। ইংরেজি মিডিয়াম তো দূর, নামজাদা কোনও বাংলা মাধ্যমে পড়ানোর খরচও চালাতে পারতেন না বাবা। তবে ছেলের পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসাকে চিরকাল সযত্নে লালন করেছিল পরিবারও। কখনও পড়াশোনা ছেড়ে বাবার মতো দিন মজুরির কাজে নিযুক্ত হওয়ার জন্য জোর করা হয়নি কেশবকে। কেশবও অবশ্য নিজের মতো করে পাশে থেকেছে পরিবারের। একটু বড় হওয়ার পর থেকেই টিউশনি করে বাবা মায়ের হাতে তুলে দিয়েছে অর্থ।
আরও পড়ুন - সাফল্য পেতে ছাড়েনি খেলাধুলা, কীভাবে JEE পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ নম্বর পেল বাংলার ছেলেটি?
ছেলের জেদ, পড়াশোনা নিয়ে পরিশ্রমকে আরও খানিকটা এগিয়ে দিতে নিজের কানের দুল বেচে অর্থ তুলে দিয়েছে কেশবের মা। দরিদ্রের এমন জোর কোথায় যে মেধাকে সে আটকে রাখে! চলতি মাসের ২ তারিখ ২০২০ সালের WBCS পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে সারা বাংলায় এক্সিকিউটিভ ‘এ’ বিভাগে ২৭ তম স্থান দখল করেছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের কেশব দাস।
যদিও তথাকথিত ভালো নম্বর বলতে যা বোঝায় তার কোনওটাই ছিল না মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে। মাধ্যমিকে ৫৭ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৬ শতাংশ। কিন্তু পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার ভাবনা আসেনি কোনও দিনই। লড়াই করার অন্য একটা স্বপ্ন বুনছিল সে। এরপর গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে সংস্কৃতে মাস্টার্স পাশ করেন। সেইসময় হোস্টেলে থাকাকালীন নিজেকে তৈরি করতে থাকে কেশব। ছোটবেলা থেকে দেখা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নকে বদলে ফেলেন বর্তমান সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। তার পর সেই নতুন স্বপ্নে শান দিতে থাকে সে।
মাধ্যমিক পাশ করার পর একটা সাইকেল চেয়েছিল কেশব, অভাব সেই আশা পূরণ করতে দেয়নি তাঁর। এখনও ঋণের বোঝা পরিবারের মাথায়। আর এই সব টানাপোড়েনের মাঝেই কেশবের এই সাফল্য হরিশ্চন্দ্রপুরের ওই পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। বাবা মায়ের এতদিনের কঠিন লড়াইয়ের জোয়ালটা এবার কেশবের কাঁধে। দিন বদলের যে স্বপ্ন এতদিন দেখেছিলেন তাঁরা, বিডিও অফিসারের চেয়ারটা তার যথার্থ উপহার, তা বলাই বাহুল্য!

Whatsapp
