বিশ্বখ্যাত তারকারা ছিলেন এই প্রসাধনী ব্র্যান্ডের মডেল, কেন আজ দেউলিয়া রেভলন?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন মার্কেটে প্রায় ৯০ বছর ধরে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করে গিয়েছে 'রেভলন'। বিশেষ করে মহিলা-মহলে সংস্থাটির উদ্ভাবনী নেলপালিশ এবং বিভিন্ন ধরনের লিপস্টিকের কদর ছিল দারুণ। কিন্তু সময়ের...

বাজারে প্রচুর ধার। আর সেই ধার ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই সংস্থার। সরঞ্জাম বাজারে বিক্রি হওয়া তো দূরে থাক, বাজারে সরবরাহ করার মতো পরিস্থিতিই নেই সংস্থার। তাই অবশেষে ধারের ভারে নিজেদেরকে দেউলিয়া ঘোষণা করল জনপ্রিয় মার্কিনি প্রসাধনী সংস্থা 'রেভলন'। গত কয়েকদিন ধরেই বাজারে এই 'রেভলন' কোম্পানির শেয়ার পড়তে শুরু করেছিল দ্রুত গতিতে। গত শুক্রবার তা চরমে পৌঁছয়। এক লাফে ৫৩ শতাংশের নিচে নেমে যায় সেই সংস্থার শেয়ার। আমেরিকার নিউ ইয়র্কের এই সংস্থা যেখানে এককালে প্রসাধনী ব্যবসায় একেবারে প্রথম সারিতে ছিল, গত কয়েক বছর ধরে তাদের ব্যবসা ক্রমাগত নিচে নামতে শুরু করে। অতিমারীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়ে এই সংস্থার। আর সেটাই কাল হয়ে ওঠে 'রেভলন' কসমেটিকসের জন্য।

গত মে মাসেই 'রেভলন' কোম্পানির চিফ একজিকিউটিভ অফিসার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এখনও তাদের সংস্থার প্রসাধনী চাহিদা অনেক। কিন্তু সমস্যা হয়ে উঠছে বিশ্বের নানা প্রান্তে সরবরাহ করার পথ নিয়ে। কিন্তু, তখন থেকেই শোনা যাচ্ছিল সংস্থার নাকি শিরে সংক্রান্তি। প্রায় ৯০ বছরের পুরনো এই সংস্থার এই অবস্থার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে জোগানের জট-কে দায়ী করেছে কর্তৃপক্ষ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন মার্কেটে প্রায় ৯০ বছর ধরে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করে গিয়েছে 'রেভলন'। বিশেষ করে মহিলা-মহলে সংস্থাটির উদ্ভাবনী নেলপালিশ এবং বিভিন্ন ধরনের লিপস্টিকের কদর ছিল দারুণ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে পরিস্থিতি। আত্মপ্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি স্টার্ট আপ কোম্পানি। 'মেবেলেন'-এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা অনেকটা মার্কেট শেয়ার দখল করে নিয়েছিল এই 'রেভলন' কোম্পানির। তারপর এই মার্কেটে চলে আসে কাইলি জেনারের মতো সেলিব্রিটিদের নতুন নতুন ব্র্যান্ড। ফলে নতুন প্রজন্মের তরুণীদের কাছে অনেকটাই আকর্ষণের হয়ে উঠেছিল কাইলি জেনারের সংস্থা 'কাইলি কসমেটিকস' এবং রিহানার 'ফেন্টি বিউটি'-র মতো ব্র্যান্ডগুলি। সেই সঙ্গে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছিল করোনাভাইরাস অতিমারী এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ।

আরও পড়ুন: ভেঙে পড়ছে অ্যামওয়ে সাম্রাজ্য! মারাত্মক অভিযোগ সংস্থার বিরুদ্ধে

সবকিছু যেন একসঙ্গে চাপ দিতে শুরু করেছিল এই 'রেভলন' কোম্পানির ওপর। ফলে ধীরে ধীরে মার্কেটে নিজেদের প্রাধান্য হারাতে শুরু করে মার্কিন এই প্রশাসনিক সংস্থা। আন্তর্জাতিক বাজারে জোগান-জটকে দায়ী করলেও, 'রেভলন'-এর মার্কেট শেয়ার বিগত কয়েক বছরে পৌঁছে গিয়েছিল একেবারে তলানিতে। 'রেভলন' জানাচ্ছে, বিশ্বের দ্রুত পরিস্থিতি বদলের কারণে কাঁচামালের জোগানে টান পড়েছিল। অন্য সময় যে জোগানদাররা ধারে কাঁচামাল দিয়েছিল, তারাই এখন সরাসরি টাকা চাইতে শুরু করেছিল।

আদালতে জমা দেওয়া একটি নথিতে 'রেভলন' কোম্পানির রিস্ট্রাকচারিং অফিসার রবার্ট কারুসো লিখেছেন, 'রেভলন'-এর একটি লিপস্টিক তৈরি করতে ৩৫ থেকে ৪০ ধরনের সামগ্রী প্রয়োজন হয়। প্রসাধন সামগ্রী বাজারে নিয়ে আসার জন্য এর সবক'টি অত্যন্ত প্রয়োজন। আর এই কাঁচামালের জোগান অত্যন্ত কমে গিয়েছে এই মুহূর্তে। অন্য জায়গা থেকে জোগাড় করতে কড়া প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে কোম্পানিকে।" ছোট ছোট কোম্পানিগুলি আবার সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে নিজেদের ব্যবসা বৃদ্ধি করতে শুরু করেছে। একদিকে যখন কোম্পানির ওপর ঋণ রয়েছে ৩.৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের, সেখানেই নিজেদের তৈরি প্রোডাক্ট সরবরাহ করতে সমস্যার মুখে পড়েছে কোম্পানি। বিশ্বের কিছু কিছু মার্কেটে এই কোম্পানির প্রোডাক্টের জনপ্রিয়তা থাকলেও, 'রেভলন'-এর নাম-গন্ধ পর্যন্ত নেই সেইসব মার্কেটে।

Revlon ad

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম অধ্যায় অনুযায়ী দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছে 'রেভলন' কোম্পানিকে। এই একাদশ অধ্যায় অনুযায়ী যে কোনও কোম্পানি নিজেদের ব্যবসাকে আবার নতুন করে কিছু সময়ের মধ্যে পুনরায় দাঁড় করাতে পারে, যদি তারা চায়। কোম্পানির চিফ একজিকিউটিভ অফিসার ডেবরা পেরলম্যান একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, "আমাদের কোম্পানি এই মুহূর্তে দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু আমরা কিছুটা সময় নিজেদের জন্য চেয়ে নিয়েছি। আমরা আশা রাখি, ভবিষ্যতে আমরা আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারব এবং আমাদের ক্রেতাদের তাদের পছন্দের প্রসাধনী আবার সরবরাহ করতে পারব।" একটি সামগ্রিক পরিসংখ্যান থেকে উঠে আসছে, বিগত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এই 'রেভলন' কোম্পানিটি ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু একটা সময় রোনাল্ড পেরেলম্যান এবং তার কন্যা ডেবরা পেরেলম্যান দ্বারা পরিচালিত এই সংস্থা ছিল বিশ্বের প্রসাধনী মার্কেটের একটি ধ্রুবতারার মতো। বিশ্বের প্রসাধনী মার্কেটে রীতিমতো বিপ্লব ডেকে এনেছিল এই 'রেভলন' সংস্থাটি। চলুন ফিরে দেখা যাক, 'রেভলন' কোম্পানির সেই সোনালি ইতিহাস।

'রেভলন'-এর উত্থান
১৯৩২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের দুই ভাই চার্লস এবং জোসেফ রেভসন নেলপালিশের দুনিয়ায় বিপ্লব নিয়ে আসার জন্য নিজেদের প্রচেষ্টায় চালু করেছিলেন একটি সংস্থা। এই সংস্থাটির নাম তারা দিয়েছিলেন 'রেভলন'। ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র নিউ ইয়র্কের একটি ছোট্ট এলাকার মধ্যেই ব্যবসা সীমিত ছিল 'রেভলন' কোম্পানির। ১৯৩৫ সালেই এই ব্যবসাকে পুরো নিউ ইয়র্ক শহরে জনপ্রিয় করে তোলার পরিকল্পনা নেন জোসেফ এবং চার্লস। এই বছরই 'নিউ ইয়র্কার' ম্যাগাজিনে প্রথমবারের জন্য বিজ্ঞাপন বের হয় 'রেভলন' কোম্পানির।

১৯৩৭ সালে তাদের বিশেষ কিছু শেডের নেলপালিশ তৈরি করে এবং শুরু করে তাদের বিক্রি। বিভিন্ন দোকানে এবং বিউটি সেলুনে মিলতে শুরু করে 'রেভলন' কোম্পানির নেলপালিশ। ১৯৩৯ সালে তাদের পোর্টফোলিওতে যুক্ত হয় লিপস্টিক। তাদের বিভিন্ন ধরনের লিপস্টিকের শেড খুব কম সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তা তৈরি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহিলাদের মধ্যে। ভালো কোয়ালিটির পাশাপাশি ন্যায্য দাম, এটাই ছিল 'রেভলন' কোম্পানির আসল ইউএসপি।

revlon ad

বিংশ শতাব্দীর সিংহভাগ অংশে 'রেভলন' দারুণভাবে নিজেদের মার্কেট ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এই সময় এই কোম্পানিটি ছিল বিক্রির দিক থেকে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ কোম্পানি। ১৯৫২ সালে মার্কেটে নতুন করে বিপ্লব নিয়ে আসে 'রেভলন'। লঞ্চ হয় তাদের বিখ্যাত 'ফায়ার অ্যান্ড আইস লিপস্টিক এবং নেইল ক্যাম্পেইন'। 'ভগ' ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এই ক্যাম্পেনের দৌলতে গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে 'রেভলন' কোম্পানির নাম। এই বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে দেখা গিয়েছিল তৎকালীন সুপার মডেল ডোরিয়ান লেহ-কে এবং ছবি তুলেছিলেন প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার রিচার্ড অ্যাভেডন।

১৯৫৫ সালে এক বিশাল বড় পরিবর্তন হয় এই কোম্পানির পোর্টফোলিওতে। আমেরিকা এবং নিউ ইয়র্ক থেকে বেরিয়ে সারা বিশ্বে নিজেদের ব্যবসা ছড়িয়ে দিতে শুরু করে 'রেভলন'। ১৯৬০ সালে সেই সময়ের আরেক সুপার মডেল সুজি পার্কারের সঙ্গে কোল্যাবোরেশনে করা তাদের 'দ‍্য আমেরিকান লুক' ক্যাম্পেনটি সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দেয়। এই একটি ক্যাম্পেন তাদের কোম্পানি ভাগ্য পুরো পরিবর্তন করে দেয়। সারা বিশ্বের ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে ছয়ের দশকে 'রেভলন' হয়ে ওঠে সারা বিশ্বের প্রথম সারির একটি প্রসাধনী সংস্থা।

আরও পড়ুন: কোকে কোকেন ফেরাব, বলছেন এলন মাস্ক || সত্যিই কি ঠান্ডা পানীয়ে মিশত ভয়ানক মাদক?

১৯৬৫ সালে একটি প্রশ্ন-উত্তরের টেলিভিশন শো-তে স্পনসর হিসেবে দেখা যায় 'রেভলন'-কে। সেই একটি টিভি শো থেকে 'রেভলন' কোম্পানির জনপ্রিয়তা রাতারাতি বৃদ্ধি পায়। ওই বছরই 'রেভলন' নিজের পোর্টফোলিওতে যুক্ত করে বিখ্যাত কালার-সিল্ক হেয়ার কালার। ১৯৭০ সালে বর্ণবৈষম্যের সমস্ত বাধা ভেঙে দিয়ে 'রেভলন' হয়ে ওঠে প্রথম প্রশাসনিক সংস্থা, যারা কৃষ্ণাঙ্গ কোনও মডেলকে নিজেদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করে। তাদের একটি বিজ্ঞাপনে সেই বছর প্রথমবারের জন্য দেখা যায় মার্কিন মডেল নাওমি সিমসকে। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ের মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ মডেলদের মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে। ১৯৭৫ সালে চার্লস রেভসনের মৃত্যুর পর এই 'রেভলন' কোম্পানির কর্ণধার হন মাইকেল বর্জিরাক।

revlon ad

১৯৭৯ সালে হেনরি কলোমারকে নিজেদের কোম্পানিতে নিয়োগ করে 'রেভলন'। তার সঙ্গে মিলে একসঙ্গে শুরু হয় 'রেভলন' প্রফেশনাল। ১৯৮০ সালে আবারও সুপার মডেল ক্যাম্পেন শুরু করে 'রেভলন'। ইমান, ক্লডিয়া শিফার, সিন্ডি ক্রাওফোর্ড, ক্রিস্টি টারলিংটন-সহ সেই যুগের একাধিক সুপার মডেলকে নিজেদের বিজ্ঞাপন এবং ক্যাম্পেনে ব্যবহার করে 'রেভলন'। এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন নতুন সুপার মডেল, আবার কয়েকজন ছিলেন অত্যন্ত অভিজ্ঞ।

চার বছর কয়েক পরেই ম্যাক অ্যান্ড্রিউজ এবং ফোর্বস এই 'রেভলন' কোম্পানির স্বত্ব ক্রয় করে। 'রেভলন' কোম্পানির কর্ণধার হয়ে ওঠেন বিলিয়নিয়ার রন পেরেলম্যান। ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এই কোম্পানিটি ক্রয় করেছিলেন পেরেলম্যান। নতুন কর্ণধারের হাত ধরে নতুন করে পথ চলা শুরু হয় এই প্রসাধনী সংস্থার। ১৯৯১ সালে 'রেভলন' নিয়ে আসে বিশ্বের প্রথম নন-ট্রান্সফার লিপস্টিক, 'রেভলন' কালার স্টে। ১৯৯৬ সালে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে লিস্ট হয় 'রেভলন'। সেই সময় এই কোম্পানির আইপিও শেয়ার প্রাইস ছিল প্রতি শেয়ার-পিছু ২৪ মার্কিন ডলার।

১৯৯৭ সালে 'রেভলন' লঞ্চ করে তাদের নতুন অ্যান্টি-এজিং মেক আপ লাইন। সেই সময় এই ধরনের মেক আপ খুব একটা প্রচলিত ছিল না। তাই 'রেভলন' কোম্পানির এই মেক আপ লাইন খুব কম সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ২০০০ সালে বিউটি কেয়ার প্রফেশনাল প্রোডাক্টস লুক্সেমবার্গের কাছে তাদের প্রফেশনাল প্রোডাক্টের অংশটির সম্পূর্ণ স্বত্ব বিক্রি করে 'রেভলন'। তবে তার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন মার্কেটে জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে 'রেভলন' কোম্পানির।

  • revlon ad

তার মূল কারণ ছিল ডোমেস্টিক ব্র্যান্ড। ভারতে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে ল্যাকমে এবং এল১৮-এর মতো ব্র্যান্ড, তেমন অন্যান্য দেশেও তাদের নিজস্ব ডোমেস্টিক ব্র্যান্ড আসতে শুরু করে মার্কেটে। অতিরিক্ত দামের কারণে জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে 'রেভলন'। ২০১৩ সালে কলোমার গ্রুপকে অধিগ্রহণ করে তাদের প্রফেশনাল প্রোডাক্টের অংশটিকে আবারও অধিগ্রহণ করে 'রেভলন'। 'রেভলন' কোম্পানির পোর্টফোলিওতে যুক্ত হয় 'রেভলন' প্রফেশনাল, সিএনডি, আমেরিকান ক্রু, ক্রিম অফ নেচারের মতো কিছু ব্র্যান্ড। ২০১৬ সালে ৮৭০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এলিজাবেথ আর্দেনের জনপ্রিয় মেক আপ কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করে 'রেভলন'। ২০১৮ সালে রন পেরেলম্যানের কন্যা ডেবরা পেরেলম্যান হয়ে ওঠেন কোম্পানির প্রথম মহিলা চিফ একজিকিউটিভ অফিসার।

'রেভলন'-এর পতন
২০১৬ সালে এলিজাবেথ আর্দেন এবং নেল কেয়ার কোম্পানি কিউটেক্সকে অধিগ্রহণ করার পর 'রেভলন' মনে করেছিল, তাদের ব্যবসা আরও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সেরকমটা কখনওই হয়নি। ২০২০ সালে কাইলি জেনার-এর 'কাইলি কসমেটিক্স' এবং জনপ্রিয় গায়িকা রিহানা-র 'ফেন্টি বিউটি' লঞ্চ হওয়ায় তরুণীদের মধ্যে 'রেভলন' কোম্পানিটির জনপ্রিয়তা আরও কমতে শুরু করে। বিশেষ করে প্যানডেমিকের সময় 'রেভলন' কোম্পানি ব্যাপকভাবে নিজেদের মার্কেট শেয়ার হারায়। সিএনবিসি-র একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে, "২০২০ সালে 'রেভলন' ২১ শতাংশ মার্কেট শেয়ার হারিয়েছিল।"

২০২০ সালে কোনওভাবে ধার-দেনা করে নিজেদের দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করেছিল 'রেভলন'। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এবং তারকাদের মধ্যেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে 'রেভলন' কোম্পানির। তারাও নিজেদের কসমেটিকস ব্র্যান্ড নিয়ে মার্কেটে আসতে শুরু করেন। এখন বহু মানুষ এমন রয়েছেন, যাঁরা অনলাইনের মাধ্যমে জিনিসপত্র কিনতে পছন্দ করেন। সেখান থেকেও 'রেভলন' একটা ধাক্কা খায়। 'রেভলন' কোম্পানির অনলাইনে বিশেষ কিছু মার্কেট শেয়ার নেই। কিন্তু সেই জায়গায়, ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার এবং তারকাদের কোম্পানিগুলি অনলাইনে ভালো ব্যবসা করেছিল এই অতিমারী সময়।

কিন্তু তারপরেও 'রেভলন' কোনওভাবে একটা টিকে ছিল মার্কেটে। তবে এই কোম্পানির জন্য আরও বড় অশনি সংকেত হয়ে আসে সাপ্লাই চেনের অভাব। 'দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস'-এর কনজিউমার ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট ডেভিড গারফিল্ড লিখছেন, "যদি মেজর সাপ্লাই চেনে কোনওরকম সমস্যা আসে, তাহলে বিশ্বের তাবড় তাবড় কোম্পানিও সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। আর ঠিক সেটাই হয়েছে 'রেভলন' কোম্পানিটির ক্ষেত্রে। সাপ্লাই চেন যদি ভালোভাবে কাজ না করে, তাহলে প্রোডাকশন অনেকটা স্তব্ধ হয়ে যাবে। তার পাশাপাশি, রিটেল মার্কেটেও শুরু হবে সমস্যা। সব মিলিয়ে একদিকে যেমন কমবে বিক্রি, তারই সঙ্গে কমবে মার্কেট শেয়ার এবং জনপ্রিয়তাও; এবং এই বিষয়টারই সর্বশেষ জ্বলন্ত উদাহরণ 'রেভলন'।"

More Articles