চিন নয়, উত্তরাধিকারী নির্বাচন করবে তাঁর সংস্থা: দলাই লামা

Dalai Lama: এদিন তাঁর ভিডিও বার্তায় দলাই লামা জানিয়েছেন, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়ার কিছু অংশ এবং চিনের বিভিন্ন অঞ্চলের বৌদ্ধরা তাঁকে এই সংস্থার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য বারবার অনুরোধ করেছেন।

তাঁর মৃত্যুর পরেও ৬০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধ সংস্থা গাহদেন ফোড্রাং ট্রাস্টের হাতেই দালাই লামা নির্বাচনের ক্ষমতা থাকবে, জানিয়ে দিলেন দলাই লামা। একদিকে যেমন বহু বছরের জল্পনার অবসান ঘটল তাঁর বার্তায়, তেমনই চিনকে কড়া বার্তাও দিলেন তিব্বতি ধর্মগুরু, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ৯০তম জন্মদিনের প্রাক্কালে হিমাচলের ধর্মশালায় তিব্বতি ধর্মীয় নেতাদের এক সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা করেন।

দলাই লামা বা তেনজিন গিয়াৎসো ১৫৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার ১৪তম ধারক। তিব্বতি বৌদ্ধরা তাঁকে বোধিসত্ত্বের পুনর্জন্ম হিসেবে বিশ্বাস করেন। তাঁরা মনে করেন, দলাই লামা তাঁর পুনর্জন্মের জন্য একটি অস্তিত্ব নির্বাচন করতে পারেন। ১৯৫৯ সালে চিনের বিরুদ্ধে একটি ব্যর্থ বিদ্রোহের পর তিনি তিব্বত থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। চিনের লাসা ফৌজের নজর এড়াতে সেনার ছদ্মবেশে তিনি ভারতে এসেছিলেন। ক্রমে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর অনুগামীরা। ২০১৯ সালে প্রথমবার তিনি বার্তা দিয়েছিলেন, তাঁর উত্তরসূরী নির্বাচিত হবে ভারত থেকেই। তারপর থেকেই নড়েচড়ে বসে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি।

এদিন তাঁর ভিডিও বার্তায় দলাই লামা জানিয়েছেন, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়ার কিছু অংশ এবং চিনের বিভিন্ন অঞ্চলের বৌদ্ধরা তাঁকে এই সংস্থার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য বারবার অনুরোধ করেছেন। বিশেষ করে তিব্বতের অভ্যন্তরে বসবাসকারী তিব্বতিদের কাছ থেকে তিনি এই আবেদন পেয়েছেন। চিনের কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও তিব্বতিদের এই বার্তা তাঁর প্রতি তিব্বতিদের গভীর আস্থার পরিচায়ক বলেই মনে করছেন দালাই লামা।

আরও পড়ুন-গান্ধি-দেশবন্ধুর শেষ দেখার স্মৃতি! দার্জিলিংয়ের নিরালা সেই বাড়িটি…

তিনি স্পষ্ট করেছেন, তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচনের একমাত্র কর্তৃত্ব থাকবে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গাহদেন ফোদ্রাং ট্রাস্টের হাতে। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কারও নেই।” এই বক্তব্যকে বেজিংয়ের একটি পরোক্ষ বার্তা হিসেবেই হিসেবে দেখা হচ্ছে। বলাই বাহুল্য চিন আজও দলাই লামাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচনের অধিকার দাবি করে।

চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বুধবার বলেন, দলাই লামার পুনর্জন্ম প্রক্রিয়া অবশ্যই চিন সরকারের অনুমোদনের মাধ্যমে। ১৮শ শতাব্দীতে কিং রাজবংশের প্রবর্তিত “গোল্ডেন আর্ন” পদ্ধতি অনুসারে হতে হবে। দলাই লামা এবং তাঁর অনুসারীরা বারবার বলেছেন, চিনের নির্বাচিত কোনো উত্তরাধিকারীকে তারা স্বীকৃতি দেবেন না।

২০১১ সালে দলাই লামা তাঁর রাজনৈতিক পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং তিব্বতি নির্বাসিত সরকারের নেতৃত্ব একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রশাসনের হাতে তুলে দেন। তিনি বলেছেন, তাঁর উত্তরাধিকারী তিব্বতের বাইরে, “মুক্ত বিশ্বে” জন্ম নেবেন। তিনি মনে করেন তিব্বতি সংস্কৃতি ও পরিচয় রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই অভিষেক।

বলাই বাহুল্য, এই ঘোষণা তিব্বতিদের জন্য একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সমাজ। যদিও চিন এই উত্তর হাসিমুখে মেনে নেবে, এমন সম্ভাবনা দেখছে না আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিদরা।

সূত্র: দ্য ওয়্যার, এপি নিউজ, বিবিসি নিউজ, দ্য হিন্দু

More Articles