কথায় কথায় মুসলিম বিদ্বেষ, মোদির বিরুদ্ধে কমিশনে চিঠি ৯৩ সিভিল সার্ভিস কর্তার

Modi's Communal Speech: গত ২১ এপ্রিল রাজস্থানের বাঁশওয়াড়াতে জনসভাতে গিয়ে সংখ্যালঘুদের নিয়ে কুকথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর দাবি, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ঘুসপেটিয়াদের মধ্যে নাগরিক সম্পত্তি বিলিয়ে দেবে।

ভোটের আগে জনসভায় গিয়ে সংখ্যালঘুদের অপমান করার অভিযোগ উঠেছে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ার একটি সভায় গিয়ে কংগ্রেসকে তোপ দাগতে গিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়দের সরাসরি কুকথা বলে বসেন মোদি। সে নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনীতি জুড়ে। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের দরজায় গিয়েছে কংগ্রেস। অভিযোগ দায়ের করেছে সিপিআইএমও। এবার মোদির কুকথা বিরোধিতা করে লেখা আইআইএম-আমদাবাদের প্রাক্তন অধ্যাপক জগদীপ ছোকারের লেখা চিঠির সমর্থনে ইলেকশন কমিশনে চিঠি দিলেন ৯৩ জন প্রাক্তন সিভিল সার্ভিস আধিকারিক।

গত ২১ এপ্রিল রাজস্থানের বাঁশওয়াড়াতে জনসভাতে গিয়ে সংখ্যালঘুদের নিয়ে কুকথা বলে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ঘুসপেটিয়াদের মধ্যে নাগরিক সম্পত্তি বিলিয়ে দেবে। এমনকী তিনি এ-ও বলে বসেন যে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসে নাকি সাধারণ মানুষের সোনাদানা, মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নিয়ে বিশেষ গোষ্ঠীর মধ্যে বিলিয়ে দেবে। দেশে লোকসভা ভোট শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। দেশ জুড়ে লাগু হয়ে গিয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি। সেই আচরণবিধির পরোয়া না করেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী সভায় গিয়ে কুকথা বলেছেন। ইতিমধ্যেই সেই ঘটনার জন্য ২,২০০টির বেশি অভিযোগপত্র জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।

আরও পড়ুন: ভোট এলেই অনুপ্রবেশ-জিগির শাহদের! কেন এই ইস্যু জিইয়ে রাখতে চায় বিজেপি?

অধ্যাপক জগদীপ ছোকার তাঁর চিঠিতে অভিযোগ করেছেন যে মোদির ওই বক্তৃতা একাধারে নির্বাচনী আচরণবিধি, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধি লঙ্ঘন করেছে। তাঁরা চিঠিতে জানিয়েছেন, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু ভারতীয় সংবিধানের প্রতি তাঁরা দায়বদ্ধ। কনস্টিটিউশনাল কনডাক্ট গ্রুপ (CCG)-র সদস্য হিসেবে তাঁরা চান, প্রধানমন্ত্রীর এই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।

এর সঙ্গেই অধ্যাপক ছোকারের চিঠিটি সংযুক্ত করেছেন তাঁরা, যেখানে প্রতিটি ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঠিক কোন কোন জায়গায় নিয়মের লঙ্ঘন করা হয়েছে ওই বক্তৃতায়। এবং তার ফলাফল স্বরূপ কী কী শাস্তি হতে পারে উক্ত ব্যক্তির, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে ওই চিঠিটিতে। এই চিঠিতে মোট ৯৩ জন প্রশাসনিক পদে কাজ করা আধিকারিক সই করেছেন। সেখানে যেমন ভারত সরকারের প্রাক্তন সচিব রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের প্রাক্তন সচিব। রয়েছেন প্রাক্তন ডিজিপি থেকে বিভিন্ন প্রাক্তন সিভিল সার্ভিস আধিকারিকেরা।

আরও পড়ুন: মুসলিমদের অকথ্য অপমান মোদির! প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কেন ব্যবস্থা নেবে না?


সংবিধান অনুযায়ী এই দেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। কিন্তু বিজেপি জমানায় বারবার সংবিধানের সেই জায়গাগুলোর লঙ্ঘন হয়েছে এ দেশে। হিন্দুত্ববাদের প্রবল সমর্থনে কখনও বিজেপি রামমন্দিরের উদ্বোধনকে জাতীয় উৎসবে পরিণত করেছে। কখনও এনআরসি-সিএএ-র মতো আইন এনে সংখ্যালঘুদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছেন। ভোটের কিছুদিন আগেই দেশ জুড়ে সিএএ আইন কার্যকর করার কথা ঘোষণা করে দেয় দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই সিএএ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু বিক্ষোভ-আন্দোলন হয়েছে। ভোটের আগে হিন্দুত্ববাদী তাসকে জোরালো করতে গত কয়েক দিন ধরে বারবার অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন মোদি-শাহরা। আর তা করতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য অবাক করেছে গোটা দেশবাসীকে। একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পরেও অবশ্য এ নিয়ে তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি ইলেকশন কমিশন। যদিও তারা সেই বিষয়টি দেখছে বলে দাবি করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। শুধু রাজনৈতিক দল, সমাজের নানা স্তরের মানুষ গর্জে উঠেছেন মোদির এই বক্তৃতা নিয়ে। তবে আদৌ কি তার পরেও নড়েচড়ে বসবে নির্বাচন কমিশন? প্রশ্ন এখন সেটাই।

More Articles