হাইকোর্টের পর অস্বস্তি সুপ্রিম কোর্টেও, ভোটবাজারে তৃণমূলের ভরাডুবির কারণ হবে সন্দেশখালি?

Sheikh Shahjahan: গত ১০ এপ্রিল সন্দেশখালির শেখ শাহাজাহান মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মামলাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল সরকার।

লোকসভা ভোটের মুখে রাজ্য-রাজনীতি নাড়িয়ে দিয়েছিল সন্দেশখালি ইস্যু। তৃণমূল নেতা শেখ শাহাজাহান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে জমি জবরদখল-সহ একাধিক দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠেছিল। যার প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে বাধ্য হন সন্দেশখালির মেয়ে-বউরা। মাস দুয়েক বেপাত্তা থাকার পর অবশেষে ধরা পড়ে শেখ শাহাজাহান। সেই মামলার দায়িত্ব নেয় সিবিআই। ইতিমধ্যেই সন্দেশখালি ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে যথেষ্ট লাঞ্ছনা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও মুখ পুড়ল তৃণমূলের। কেন রাজ্যসরকার কোনও এক জন ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে বিস্ময় প্রকাশ করেছে শীর্ষ আদালত।

গত ১০ এপ্রিল সন্দেশখালির শেখ শাহাজাহান মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মামলাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল সরকার। আসলে সন্দেশখালি মামলায় যথেষ্ট মুখ পুড়েছিল তৃণমূল সরকারের। লোকসভা ভোটের আগে সন্দেশখালি মামলা বিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছিল বিরাট অস্ত্র। সন্দেশখালি অস্ত্রকে যে যার মতো করে ব্যবহার করেছে বিরোধীরা। এমনকী শেখ শাহাজাহান ধরা পড়ার আগেও বিরোধীরা তো বটেই, গ্রামের মানুষজন পর্যন্ত দাবি করে এসেছেন, শেখ শাহজাহান কোথায় লুকিয়ে রয়েছে, তা ভালোমতোই জানে শাসক দল। শাসক দলের মদতেই যে শেখ শাহজাহানের মতো নেতার এত বাড়বাড়ন্ত, সে দাবিও করেছেন গ্রামের সকলেই।

আরও পড়ুন: ভোটের আগে NSG নামিয়ে অস্ত্র উদ্ধার! অশান্ত সন্দেশখালির দখল রাখতে পারবে তৃণমূল

সেই শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হতেই নাটকে পর্দা পড়ে। সন্দেশখালির প্রতিবাদী মুখ রেখা পাত্রকে লোকসভা ভোটে বসিরহাটের প্রার্থী করে বিজেপি। সন্দেশখালির ঝামেলার সময় প্রতিবাদীদের হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দীর্ঘদিনের বামনেতা নিরাপদ সর্দারকে। সন্দেশখালি মামলায় গ্রেফতার পর্যন্ত হয়েছিলেন নিরাপদ। পরে অবশ্য সসম্মানে ছাড়া পান তিনি। এই পরিস্থিতিতে কেন তৃণমূল সরকার শেখ শাহজাহানের ব্যক্তিগত স্বার্থরক্ষায় এতটা সচেষ্ট, তা কার্যত অবাক করেছে সুপ্রিম কোর্টকে।

এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কোনও স্থগিতাদেশ দেবে না বলে সোমবার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বিচারপতি বিআর গাভাই ও বিচারপতি সন্দীপ মেহেতার বেঞ্চ। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তরফের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ জানানোর জন্য। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের তরফে এ-ও জানানো হয়েছে, হাইকোর্টের সেই আদেশ নাকি পুলিশ-সহ গোটা রাজ্যের সিস্টেমকেই হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ফলে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে পশ্চিমবাংলার তৃণমূল সরকার। হাইকোর্টের এই নির্দেশ রাজ্য পুলিশের ক্ষমতা হরণের সামিল বলেও জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।

তবে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কোনও সুফল পেল না তৃণমূল। বরং হাইকোর্টের পর এবার সুপ্রিম কোর্টেও মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের। দিন কয়েক আগেই সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে বিরাট পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে সন্দেশখালিতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। সেই ঘটনায় সন্দেশখালিতে নামানো হয় এনএসজি ও বম্ব স্কোয়াড। সেই মামলায় সোমবার বসিরহাট আদালতে এনএসজি জানায়, সেই ব্যাপারে সিবিআইকে রিপোর্ট জমা দেবে তারা। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের পরিমাণ বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।

সিবিআই আদালতে জানিয়েছে, সন্দেশখালিতে তল্লাশি চালিয়ে তারা যে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছিল, তার মধ্যে ছিল শাহজাহান শেখের ভাই আলমগিরের একটি অস্ত্রও। আলমগির বর্তমানে জেল হেফাজতে। সেই সঙ্গে শাহজাহানের নামে অস্ত্রের লাইসেন্সও পেয়েছে সিবিআই। এ ছাড়া একটি ব্যাগ সে দিন তল্লাশির সময়ে পাওয়া গিয়েছিল। তার মধ্যে বিস্ফোরক পদার্থ ছিল বলে আশঙ্কা। সেই কারণে ব্যাগটি এনএসজি আধিকারিকেরা নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই ব্যাগের মধ্যে অন্তত দু’টি অস্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেগুলি কী ধরনের অস্ত্র, তা জানা যাবে এনএসজির রিপোর্ট হাতে পেলে। সেই ঘটনায় ধৃতদের ১৩ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আরও পড়ুন:১% ঘটে থাকলেও ১০০% লজ্জার! সন্দেশখালি মামলায় যেভাবে শাসকদলকেই দুষল হাইকোর্ট

এদিকে আরও শেখ শাহজাহান মামলায় আরও ভয়ঙ্কর তথ্য হাতে এসেছে ইডি-র। আদালতে ইডি জানিয়েছে, শাহজাহান শেখ এবং তাঁর অনুগামীরা সন্দেশখালিতে যত জমি দখল করেছিলেন, তার টাকা পেয়েছেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রীও। কলকাতার নগর দায়রা আদালতে শাহজাহান মামলার শুনানিতে এ কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তারা এ-ও জানিয়েছে, টাকা নয়ছয়ের একটি দিক অস্ত্র কারবার। সরকারি টেন্ডার নিয়ে শাহজাহানের বেনিয়মের কথাও জানিয়েছে আদালতে ইডি।

সব মিলিয়ে শেখ শাহজাহান মামলা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে তৃণমূল। সন্দেশখালি কাণ্ডে একের পর এক ঘটনা তৃণমূলের একের পর এক দুর্নীতির দিকে আঙুল দেখাচ্ছে। অন্যদিকে, হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টেও শেখ শাহাজাহান মামলায় ভর্ৎসিত হল তৃণমূল। সব মিলিয়ে সন্দেশখালি লোকসভা ভোটের আগে গলায় কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে তৃণমূলের। আর সেই কাঁটাই তৃণমূলকে ভরাডুবি করবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞ মহল।

More Articles