পৃথিবীর জলভাগ ভরে যাবে অ্যাসিডে, ২৬০০০ বছরে প্রথম এই চরম সর্বনাশের মুখোমুখি পৃথিবী

আমরা সবাই জানি বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা। সবাই জানি, অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের ফলে কীভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গত ২৬,০০০ বছরে এত ক্ষতি হয়নি, যা ২০২১ সালে হয়েছে। আধুনিক মানবসভ্যতা এত কম সময়ে, মাত্র তিনশো বছরে পৃথিবীর যা ক্ষতি করেছে, তা অতুলনীয়।

 

কিন্তু কী এমন ঘটে গেল, যা এত হাজার বছরের রেকর্ড ভেঙে দিল? তার আগে ছোট্ট করে একটু প্রেক্ষিতটা বুঝে নিই।

 

পৃথিবীর তিন ভাগ জল, এক ভাগ স্থল। ছোটবেলাতেই আমরা আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এই কথা জেনে নিয়েছি। কিন্তু সেই তিন ভাগ জলের গুরুত্ব কি বুঝেছি? আমাদের পৃথিবীর সমস্ত প্রাণ বেঁচে থাকার জন্য তার গুরুত্ব কি উপলব্ধি করেছি? একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিই। আচ্ছা বলুন তো, সবথেকে বেশি অক্সিজেন কোথা থেকে আসে? খুব সোজা উত্তর, গাছ, উদ্ভিদ। একদমই ঠিক। কিন্তু কোথাকার? স্থলের? না জলের? উত্তর হল জলের। গবেষণা বলছে, পৃথিবীতে মোট যত পরিমাণ অক্সিজেন তৈরি হয়, তার ৫০-৮০ শতাংশ আসে সমুদ্র থেকে, আমাদের পৃথিবীর জলভাগ থেকে। যার পূর্ণ কৃতিত্ব ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের।

 

আরও পড়ুন: পাওয়া গেল বিরল গ্যাসের ভান্ডার, কতটা উপকার হবে মানবসভ্যতার?

 

সমুদ্র আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে। এটা ছিল মাত্র একটা দিক। আরও অনেক অনেক উপায়ে সমুদ্র আমাদের গ্রহের বুকে প্রাণের স্পন্দনকে টিকিয়ে রেখেছে। যেমন, যে পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস আমরা বাতাসে নিঃসরণ করি, তার বেশিরভাগই শুষে নেয় এই তিন ভাগ জলের স্তর। পৃথিবীর ৯০ শতাংশ তাপ শুষে নেয় এই বিশাল জলের স্তর। আমাদের পৃথিবীকে এইভাবে ঠান্ডা রাখে, প্রাণের উপযুক্ত রাখে।

 

এবার ভাবুন, বাতাসে যদি গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়? পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি বাড়তে থাকে? সমুদ্রের তাপমাত্রা যদি বাড়তে থাকে?

 

আমরা সবাই জানি বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা। সবাই জানি, অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের ফলে কীভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রত্যেক বছরই উষ্ণতার নিরিখে রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। World Meteorological Organization বা WMO-র নতুন রিপোর্ট বলছে, পৃথিবীর জলস্তরও উষ্ণতার নিরিখে রেকর্ড গড়ে ফেলেছে। গত বছর সমুদ্র সবথেকে বেশি উষ্ণ ছিল, শুধু তাই নয়, অ্যাসিডের পরিমাণও রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের চাঞ্চল্যকর দাবি, গত ২৬,০০০ হাজার বছরে সমুদ্র এত অ্যাসিডিক ছিল না যত ২০২১ সালে হয়েছে।

 

সেই সঙ্গে তারা এটাও উল্লেখ করেছে যে, পৃথিবীতে এখন যে যুদ্ধ চলছে, মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান, তার ফলে পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলোর পরিবেশ রক্ষার্থে যে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল, তা ব্যহত হয়েছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে গলতে থাকা বরফের চাদর, গলতে থাকা হিমবাহের বিপদ। যে হারে জলের স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে WMO।

 

এই বাড়তে থাকা জলস্তরে যেভাবে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ছে, তা নিয়ে খুবই চিন্তায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ছে, কারণ বাতাসে গ্রিন হাউস গ্যাস, মূলত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 420 PPM (Particle Per Million)। গত কুড়ি লক্ষ বছরে যা সর্বাধিক। এই কার্বনকে সমুদ্র শুষে নিচ্ছে, এবং আরও অ্যাসিডিক হয়ে পড়ছে।

 

সমুদ্রের জল এই পরিমাণে অ্যাসিডিক হয়ে যাওয়ার ফলে আরও বিপদ বৃদ্ধি পাবে। কারণ, এর ফলে সামুদ্রিক সমস্ত প্রাণী বিপন্ন হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য এবং যার সরাসরি প্রভাব পড়বে স্থলের প্রাণীদের ওপর, যার মধ্যে আমরা, মানুষরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব।

 

তাছাড়া একথা বলাই বাহুল্য, যে হারে সামুদ্রিক প্রাণী শিকার করা হচ্ছে, অথচ তাদের প্রজনন প্রক্রিয়াকে সুরক্ষিত রাখা হচ্ছে না, তাতে এমনিতেই কিছু দশক পরে সমুদ্রে প্রাণীর চেয়ে বেশি প্লাস্টিকের কণা থাকবে। এর ফলে কী হবে? শুরুতেই লিখেছি, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের কথা। সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে এই প্ল্যাঙ্কটনরা আর জন্ম নেবে না, যার ফলস্বরূপ, অক্সিজেন তৈরি হবে না। তার পরিণতি কী ভয়াবহ হতে পারে, তা বলাই বাহুল্য!

 

More Articles