নিম্নমানের কয়লা বিক্রি করে বায়ুদূষণ বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী! দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস
Adani Coal Scam: আদানি গোষ্ঠী সম্ভবত বায়ুদূষণ করেই ব্যবসায় বিপুল মুনাফা করছে। ২০২৩ সালের তথ্যের নিরিখে বিশ্বের দূষণের তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল ভারত।
১৮ তম লোকসভা নির্বাচন প্রায় শেষের পথে। শুধুমাত্র দু'দফা ভোট বাকি। লোকসভা ভোটের আবহেই কেন্দ্রের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রমাণসহ নানা তথ্য সামনে এসেছিল। 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের' একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তাধীন থাকা মোট ২৫ জন বিরোধী দলনেতা বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ-তে যুক্ত হওয়ার পর, তাঁদের ২৩ জনই মামলা থেকে রেহাই পেয়েছেন। বিজেপির ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতির তথ্য সামনে আসার পর চক্ষু চড়কগাছ হয়েছিল জনগণের। ইলেক্টোরাল বন্ডে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৮,২৫২ কোটি টাকা, যা পুরো অনুদানের ৫০.০৩%। প্রশ্ন উঠেছিল, এত টাকার অনুদান একটিই দলকে কেন? দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের স্বামী পরাকলা প্রভাকর বলেছিলেন, "এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি।" নির্বাচনী আবহেই বিদেশের সংবাদমাধ্যমগুলিতে প্রায় ৫০ টি প্রতিবেদন নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা প্রকাশ হয়েছিল। বিরোধীরা বারবার অভিযোগ তুলেছে, ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার হাতেগোনা কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীকে বেনিয়ম করে বহু সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে। ঝাঁসির সভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি বলেছিলেন, "নরেন্দ্র মোদি ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের ১৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মুকুব করেছেন, যা কিনা গত ১৪ বছরের 'মনরেগা'-র বরাদ্দ অঙ্কের সমান।" তেলেঙ্গানায় ভোট প্রচারে গিয়ে মোদি, রাহুলকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, রাহুলরাই আদানি-আম্বানি প্রসঙ্গে চুপ কেন? বলেছিলেন, রাহুলরাই আদানি-আম্বানির কাছ থেকে 'টেম্পো বোঝাই' টাকা নিয়েছেন। ভারতের কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে, বিরোধী দল থেকে শুরু করে ওয়াকিবহাল মহল বারবার অভিযোগ তুলেছে। এবার বিদেশের সংবাদমাধ্যম 'ফিনান্সিয়াল টাইমস'- এর প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, নিম্নমানের কয়লা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেছে আদানি গোষ্ঠী।
আরও পড়ুন- আরএসএসের তৈরি জমিতে ব্যাট করে এখন সঙ্ঘকেই লাথি! BJP-RSS সম্পর্কে ইতি?
'ফিনান্সিয়াল টাইমস' লন্ডনের একটি সংবাদমাধ্যম। বিভিন্ন দেশেই ফিনান্সিয়াল টাইমসের গ্রহণযোগ্যতা আছে, খ্যাতি আছে। ২২ মে এই সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠী দেশের একটি বিদুৎ প্রতিষ্ঠানের কাছে খারাপ মানের কয়লা বিক্রি করেছিল। কিন্তু তারা দাবি করেছিল, বেশি দামের ভালো কয়লাই সরবরাহ করা হচ্ছে। খতিয়ে, হিসেব, রসিদ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে আদানি গ্রুপ ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রতি কেজি ৩ হাজার ক্যালরি দামে এক জাহাজ কয়লা কিনেছিল। পরে ওই কয়লাই তামিলনাড়ু সরকারের বিদুৎ উৎপাদন সংস্থা জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছিল ৬ হাজার ক্যালরির কয়লা হিসেবে। দাবি করা হয়েছিল, এটি অন্যতম দামি কয়লা। তথ্য বলছে, এর মাধ্যমে আদানি গ্রুপ দ্বিগুণের বেশি অর্থ মুনাফা করেছিল।
আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানমুখী সাংবাদিকদের মঞ্চ, অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড কোরাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) এই পরীক্ষা করে দেখেছে। 'ফিনান্সিয়াল টাইমস', ২০১৪ সালের আরও ২২টি চালানের কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছে, কয়লার মান বাড়িয়ে মোট ১৫ লক্ষ টন কয়লা সরবরাহ করা হয়েছে। তথ্য বলছে, এই গোষ্ঠী ইন্দোনেশিয়ার যে খনি থেকে কয়লা কেনে তার গুণমান কম। তাই দামও কম। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, যে কোম্পানি ভালো কয়লা কিনেছে তাদের ভালো মানের কয়লা কেনার পরিকল্পনা থাকলেও আদানি গ্রুপ জেনে বুঝে তাদের নিম্নমানের কয়লা দিয়েছে। অন্যদিকে, ৪ জুন ইন্ডিয়া জোট লোকসভা নির্বাচনে জয় পেলে, এই 'মহা-কেলেঙ্কারির' তদন্ত হবে বলে দাবি করেছেন রাহুল গান্ধি। রবীশ কুমার তাঁর ইউটিউব ভিডিওতে প্রশ্ন তুলেছেন, আদানি গোষ্ঠীর মালিক গৌতম আদানি সংবাদমাধ্যমের অংশীদারিত্ব কিনে নেওয়ার সময় দাবি করেছিলেন, সেই সংবাদমাধ্যমের গুণমান 'ফিনান্সিয়াল টাইমস'-এর মতো করা হবে। তাহলে 'ফিনান্সিয়াল টাইমস'-এর প্রতি তাঁর নিশ্চয়ই সম্মান আছে। তাদের তোলা অভিযোগে গৌতম আদানি কী বলবেন?
আরও পড়ুন- মোদির হাতেই ভারতের রাশ নাকি ক্ষমতায় এবার অন্য কেউ! কী বলছে প্রশান্ত কিশোরের অঙ্কের খাতা?
উল্লেখ্য, খারাপ মানের কয়লায় বায়ুদূষণও বেশি হয়। আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানমুখী সাংবাদিকদের মঞ্চ দাবি করেছে, আদানি গোষ্ঠী সম্ভবত বায়ুদূষণ করেই ব্যবসায় বিপুল মুনাফা করছে। ২০২৩ সালের তথ্যের নিরিখে বিশ্ব বায়ু গুণমান রির্পোট প্রকাশ করেছিল আইকিউএয়ার। সেখানের তথ্য অনুযায়ী, দূষণের তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল অষ্টম। ২০২৩ সালের তথ্যের নিরিখে বিশ্বের দূষণের তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল ভারত। ২০২২ সালের ল্যানসেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাইরের পরিবেশের বায়ুদূষণের কারণে ভারতে প্রতিবছর ২০ লক্ষের বেশি মানুষ মারা যায়। অন্য আরেকটি গবেষণার তথ্য বলছে, যেসব এলাকার বিদুৎকেন্দ্রগুলি কয়লা ব্যবহার করে, তার কয়েকশ মাইলের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার তুলনামূলক বেশি।
অন্যদিকে, ভারতে সর্বোচ্চ কয়লা আমদানি করা কোম্পানি আদানি গোষ্ঠী। তারা বরাবরই কয়লা কেলেঙ্কারির অভিযোগ নাকচ করেছে। এর আগে নামজাদা আমেরিকার শেয়ার লেনদেনকারী এবং গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয়ের একাধিক অভিযোগ আনে। সম্প্রতি সেই রিপোর্টে ওঠা অভিযোগ, দেশের আদালত আদানি সংস্থার বিরুদ্ধে বিশেষ তদন্ত দল গঠন করার আবেদন খারিজ করে দেয়। প্রসঙ্গত, দূষণ সংক্রান্ত সমস্যাগুলি নাগরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। প্রশ্ন উঠছে, তাও কি একইভাবে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়েও তদন্ত হবে না? প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মেলানো গোষ্ঠীর দুর্নীতির সমাধান করতে পারবে কেন্দ্র? নাকি উত্তরোত্তর খারাপ হবে পরিবেশের পরিস্থিতি?