ভারতের সম্প্রীতি নষ্ট করার জবাব! অপারেশন সিঁদুর নিয়ে যা জানাচ্ছেন বিক্রম মিশ্রী

Operation Sindoor: জম্মু ও কাশ্মীর-সহ দেশের বাকি অংশে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যেও এই হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিদেশ সচিব।

গত ২২ এপ্রিল লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে জড়িত পাকিস্তানি এবং পাকিস্তান-প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসবাদীরা ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভারতীয় পর্যটকদের উপর নৃশংস হামলা চালায়। নেপালের একজন নাগরিক সহ ২৬ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বরের মুম্বই হামলার পর ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু দেখে ভারত। পহেলগাঁওয়ে পরিবারের সামনে পুরুষদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়। ভূস্বর্গে এই হামলার পরে স্বজন হারানো মানুষদের মধ্যে তৈরি হওয়া মানসিক আঘাত ছিল অভাবনীয়। অপারেশন সিঁদুর দিয়ে যেন সেই আঘাতের পাল্টা ফিরিয়ে দিল ভারত।

পাকিস্তানে এই হামলার পরে বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রী এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পহেলগাঁও হামলা স্পষ্টতই জম্মু ও কাশ্মীরের স্বাভাবিক ছন্দকে নষ্ট করার জন্যই পরিচালিত হয়েছিল। বিশেষ করে কাশ্মীরের অর্থনীতির মূল ভিত্তি পর্যটনকে প্রভাবিত করে এই হামলা। গত বছর রেকর্ড ২৩ মিলিয়ন পর্যটক কাশ্মীরে ঘুরতে আসেন। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত করে কাশ্মীরকে পিছিয়ে রেখে সন্ত্রাসবাদের উর্বর ভূমি তৈরি করাই পাকিস্তানের লক্ষ্য। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর-সহ দেশের বাকি অংশে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যেও এই হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিদেশ সচিব। হামলার পরে 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট' নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠী এর দায় স্বীকার করে। এই গোষ্ঠীটি নিষিদ্ধ পাকিস্তানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার একটি ছায়া সংগঠন।

আরও পড়ুন- ভোররাতে পাকিস্তানে অপারেশন সিঁদুর! কোন ন’টি ঘাঁটি হামলার জন্য বাছল ভারতীয় সেনা?

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংকে নিয়ে এক সাংবাদিক বৈঠকে বিক্রম মিশ্রী বলেছেন, ভারতের সীমান্তে এমন সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পাকিস্তানের দীর্ঘ ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পাকিস্তানের 'সুনাম' রয়েছে। সাজিদ মীর মামলার উল্লেখ করে বিদেশ সচিব বলেছেন, এই সন্ত্রাসবাদীকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তাকে 'বাঁচিয়ে' তোলা হয়। এই সন্ত্রাসবাসীকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং গ্রেফতার করা হয়। এই প্রসঙ্গ ধরেই ২২ এপ্রিলের হামলার অপরাধী এবং পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনা অপরিহার্য বলে মনে করা হয়েছিল বলেও জানান বিক্রম। তবে তিনি জানিয়েছেন, হামলার পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও, পাকিস্তান তার ভূখণ্ডে বা তার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোনও স্পষ্ট পদক্ষেপ করেনি। পরিবর্তে, পাকিস্তান কেবল অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং পাল্টা অভিযোগই করেছে। বিক্রম মিশ্রী বলছেন, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের উপর ভারতীয় গোয়েন্দারা নজরদারি চালিয়ে দেখেছে যে, ভারতের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণ আসন্ন ছিল। তাই প্রতিরোধ করতেই হতো ভারতকে।

সেই মতোই ৭ মে অপারেশন সিঁদুর চালানো হলো। বুধবার ভোররাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদী শিবিরগুলিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ধারাবাহিক হামলায় বহু সন্ত্রাসবাদীর নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, ভারত পহেলগাঁও হামলার প্রত্যাঘাত করেছে অপারেশন সিঁদুর দিয়ে। এই আন্তঃসীমান্ত অভিযানে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদ (জেইএম), লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি) এবং হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে যুক্ত নয়টি জায়গাকে লক্ষ্য করা হয়েছিল। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, জৈশ-ই-মহম্মদের শক্ত ঘাঁটি বাহাওয়ালপুর এবং মুরিদকেতে দু'টি বিশাল হামলা চালানো হয়, যাতে সব মিলে আনুমানিক ২৫-৩০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। মুরিদকেতে, লক্ষ্য ছিল মসজিদ ওয়া মারকাজ তৈবা। এটি লস্করের স্নায়ু কেন্দ্র এবং মতাদর্শিক সদর দফতর। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের 'সন্ত্রাসের নার্সারি' হিসাবে বিবেচিত হতো এই জায়গাটি।

More Articles