এতদিন বিচার, সুতপার খুনী সুশান্তর ফাঁসি নিশ্চিত হল যে ভাবে...

Sutapa Chowdhury Murder Case: আদালতে সাজার ঘোষণা শুনেই কেঁদে ফেলেন সুশান্ত। আপন মনে বলে ওঠেন দুটি কথা। অন্য কাউকে নয়, নিজেকেই সম্ভবত বলে ওঠেন, "সহানুভূতির খেলা হল, ন্যায়বিচার হল না।"

শেষপর্যন্ত মিলল ন্যায়বিচার। সুতপা চৌধুরীর হত্যাকারী সুশান্ত চৌধুরীকে ফাঁসির নির্দেশ দিল বহরমপুরের ফাস্টট্র্যাক আদালত। ২০২২ সালের মে মাসে বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকায় প্রেমিকা সুতপা চৌধুরীকে এলোপাথাড়ি ভাবে ছুরি দিয়ে কোপাতে থাকে সুশান্ত চৌধুরী নামে ওই যুবক। মোট ৪২ বার সুতপার শরীরে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিল সে। নিজের হাত কেটে যাওয়া, বাঁচাতে আসা মানুষের ভিড় কোনও কিছুই আটকাতে পারেনি সুশান্তকে। প্রাক্তন প্রেমিকা সুতপার মৃত্যু নিশ্চিত করতে খেলনা বন্দুক দিয়ে ঘটনাস্থলের সবাইকে ভয় দেখায় সুশান্ত। আগ্নেয়াস্ত্রের ভয়ে কেউ সামনে সামনে পর্যন্ত যেতে পারেননি।

আরও পড়ুন: যৌনহেনস্থার প্রতিবাদ ‘অপরাধ’! মধ্যপ্রদেশে দলিত নির্যাতিতার ভাইকে পিটিয়ে খুন, নগ্ন করে মার মাকেও

সেই হত্যার পর কেটে গিয়েছে গোটা একটা বছর। তবে শেষপর্যন্ত শান্তি পেয়েছে নিহত সুতপার আত্মা। এই বলেই আদালতে ডুকরে উঠেছিলেন সুতপার বাবা স্বাধীন চৌধুরী। সুতপা খুনের ১৫ মাসের মাথায় সুশান্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল বহরমপুর আদালত। বাকি ছিল শুধু সাজা ঘোষণা। অবশেষে বৃহস্পতিবার বহরমপুর ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক সন্তোষকুমার পাঠক সুশান্তের সাজা ঘোষণা করলেন। মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হল তাকে।

আদালতে সাজার ঘোষণা শুনেই কেঁদে ফেলে সুশান্ত। আপন মনে বলে ওঠে দুটি কথা। অন্য কাউকে নয়, নিজেকেই সম্ভবত বলে ওঠে, "সহানুভূতির খেলা হল, ন্যায়বিচার হল না।" ব্যাস, ওই পর্যন্তই। আদালত থেকে বেরিয়েও আর কিছু বলতে শোনা যায়নি তাঁকে। নীরবে আদালতকক্ষ ছাড়লেও পরিবারের লোকের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে সে। তবে এখানেই হাল ছাড়ছে না সুশান্তের পরিবার। সুশান্তের আইনজীবী পীষুষ ঘোষ জানান, রায়ের কপি হাতে পেলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন তিনি। সম্ভবত উচ্চ আদালতে আবেদনের কথা ভাবছে সুশান্তের পরিবার।

সুশান্ত মেধাবী ছাত্র, তাঁর বৃহত্তর ভবিষ্য়তের কথা চিন্তা করে ফাঁসির সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন সুশান্তের আইনজীবী। তবে আদালত সেই কথায় কান দেয়নি। ফাঁসির সিদ্ধান্তেই এদিন অটল ছিলেন বিচারক। খুনের পরের দিনই সমশেরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন সুশান্ত। তারও ৭৫দিন বাদে সুশান্তের বিরুদ্ধে আদালতে ৩৮৩ পাতার চার্জশিট জমা করেছিল পুলিশ। যেখানে ছিল খুন-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় অভিযোগ। বারবার বয়ান বদল করে তদন্তকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে ভয়ঙ্কর খুনি সুশান্ত। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যা বয়ান দিয়েছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। তদন্তে জানা গিয়েছিল, প্রত্যাখ্যাত হওয়ার রাগ ও হতাশা থেকেই সুতপাকে খুন করেছিল সুশান্ত।

সুতপাকে খুন করে সুশান্তকে পালিয়ে যেতে দেখেছিলেন দুই প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁদের বয়ানের ভিত্তিতেই শুরু হয় প্রাথমিক তদন্ত। খতিয়ে দেখা হয় এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ। খুনের ঘটনা ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। খুঁটিয়ে দেখা হয় তাঁদের মোবাইলও। পরে পুলিশ ওই খেলনা বন্দুকটিও উদ্ধার করে পুলিশ। যেটি খুনের দিন কয়েক আগে স্টেশন থেকে কিনেছিল ওই যুবক। যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছিল সুতপাকে, সেটি কেনা হয়েছিল বহরমপুরের প্রাঙ্গন মার্কেট থেকে। সব মিলিয়ে একের পর এক প্রমাণ হাতে আসতে থাকে পুলিশের। যা পেশ করা হয়েছিল আদালতে। শুনানি চলাকালীন মোট ৩৪ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত। প্রমাণ হিসেবে ধার্য হয় হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, কল রেকর্ড, মোবাইল টাওয়ার লোকেশন এবম ভিডিও ফুটেজ। সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ বিচার করে সুশান্তকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।

আরও পড়ুন: যৌনকর্মীদের দেহ ছিন্নভিন্ন করে খুন, জ্যাক দ্য রিপারের রহস্যের সমাধান আজও হয়নি

এদিন আদালতে বিচারক জানান, এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা।য প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক থাকল না বলে তাঁকে অন্য কারওর সঙ্গে থাকতে দেব না, এ হতে পারে না। পাশাপাশি আধুনিক সমাজের এক জন মহিলা চাইলে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতেই পারেন। তাতে প্রেমিকাকে খুনের অধিকার জন্মায় না কোনও প্রেমিকের। রায় দিতে গিয়ে কড়া ভাষায় বিবৃতি দেন বিচারক। আদালতের রায়ে খুশি সুতপার পরিবার। কাঁদতে কাঁদতেই বাবা স্বাধীন চৌধুরী জানান, এতদিনে সুবিচার মিলল। অন্য কোনও সুতপার সঙ্গে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তার জন্যেই এই কঠোরতম সাজার দরকার ছিল। যা ষোলো মাস পরে মিলেছে শেষমেশ। 

More Articles