এবার হাতের লেখা, সইও নকল করবে এআই! আপনি নিরাপদ তো?

AI Handwriting mimicry : এমন প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে যা সামান্য কয়েকটি লিখিত অনুচ্ছেদের উপর ভিত্তি করে যে কারও হাতের লেখা অনুকরণ করতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কিছুকাল আগেও মানুষের আগ্রহ বা কৌতূহল ঠিক ততটাই ছিল যতটা নতুন যে কোনও আবিষ্কারের প্রতি থাকে। বিজ্ঞানের নতুন কোনও বিষয় তা ঠিক কী কী করতে পারে, তাতে কতখানি বিপদ, কতখানিই বা উপকার প্রথমেই আঁচ করা যায় না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক ব্যবহারের বাজারে মানুষ এতক্ষণে বুঝে গেছে বিষয়টা আসলে কী? মানুষ বিপদও আঁচ করছে। AI ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই মানুষের গলার আওয়াজ ক্লোন করা সম্ভব হয়েছে। ডিপফেক ভিডিও যে কতখানি বিপজ্জনক তা টের পাচ্ছেন আম আদমি থেকে তারকা সকলেই। এবার এই AI কোনও ব্যক্তির হাতের লেখা অবধি নকল করতে পারবে!

আবুধাবির মহম্মদ বিন জায়েদ ইউনিভার্সিটি অফ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (MBZUAI) গবেষকরা বলছেন, তারা এমন প্রযুক্তি তৈরি করেছেন যা সামান্য কয়েকটি লিখিত অনুচ্ছেদের উপর ভিত্তি করে যে কারও হাতের লেখা অনুকরণ করতে পারে। বিষয় সম্পন্ন করার জন্য গবেষকরা একটি ট্রান্সফরমার মডেল ব্যবহার করেছেন। এটি এক ধরনের নিউরাল নেটওয়ার্ক যা প্রসঙ্গ এবং শব্দের অর্থ বোঝার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

MBZUAI-এর গবেষকরা দাবি করেন এটিই বিশ্বের প্রথম AI বিশ্ববিদ্যালয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার জন্য মার্কিন পেটেন্ট এবং ট্রেডমার্ক অফিসের মেধাস্বত্ত্বও রয়েছে তাদের। তবে ঠিক কীভাবে এই হাতের লেখা অনুকরণ করা হবে তার বিস্তারিত তথ্য গবেষকরা এখনও জানাননি। তবে নিঃসন্দেহে এটি এমন একটি বিষয় যা একই সঙ্গে আগ্রহের এবং দুশ্চিন্তারও। এমন অ্যাপ এবং এমন সব রোবট কিন্তু আগে থেকেই রয়েছে যা হাতের লেখার নকল তৈরি করতে পারে। তাহলে এই প্রযুক্তি আলাদা কোথায়? AI সাম্প্রতিক নিজের যে অগ্রগতি দেখিয়েছে তাতে কীভাবে যে হাতের লেখা অনুকরণ করে তা ব্যবহার করা যেতে পারে বিষয়টা ভাবার মতোই। ডিপফেকের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে অন্যান্য AI টুলসের মতো এতে সুবিধা বেশি হবে না ক্ষতি?

আরও পড়ুন- এআই প্রয়োগে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম: কতটা বিপদের মুখে আপনি?

একদিকে এই প্রযুক্তির ফলে আহত মানুষ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষ হাতে কলম না ধরেও লিখতে পারবেন। তবে পাশাপাশিই এর ফলে ব্যাপক জালিয়াতি এবং হাতের লেখা জাল করে নানা অপরাধমূলক কাজের দরজাটিও খুলে যাচ্ছে। ফলে এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম প্রয়োজন, বলছেন গবেষকরাই।

গবেষকদের মতে, এই প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং পাশাপাশিই জালিয়াতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। বিজ্ঞানী-গবেষকরা বলছেন, এটি খানিক ভাইরাসের জন্য অ্যান্টি-ভাইরাস তৈরি করার মতো বিষয়। তবে এই জাতীয় উদ্বেগ সত্ত্বেও, প্রযুক্তির উদ্ভাবকরা বলছেন কয়েক মাসের মধ্যেই বাস্তব-বিশ্বের নানা অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

ডাক্তারদের হাতের লেখা ডিকোডিং থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করা- এই প্রযুক্তির বিকাশের সম্ভাবনা প্রবল৷ অন্যান্য এআই মডেলগুলি কীভাবে হাতের লেখা তৈরি করে তা জানতে এবং বিষগুলি থেকে শিক্ষা নিতে এই প্রযুক্তিটি প্রচুর পরিমাণে সিন্থেটিক ডেটা তৈরি করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এখনও আরও কাজ বাকি। গবেষকদের এই ট্রান্সফরমার মডেল এখনও যা যা হাতের লেখা সুলভে পাওয়া যায় তা থেকেই অনুকরণ করা শিখেছে। এই প্রযুক্তি ইংরেজিতে লিখতে পারে এবং কিছু কিছুক্ষেত্রে ফরাসি ভাষাতেও কাজ করতে পারছে। তবে এখনও আরবি ভাষায় হাতের লেখাকে অনুকরণের চেষ্টা চলছে।

More Articles