বিজেপির সঙ্গ ছাড়ল এআইএডিএমকে! ইন্ডিয়ার হাত ধরবে কি তামিলনাড়ুর দল?

AIADMK Ends Alliance With BJP : এআইএডিএমকের সঙ্গে বিজেপির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বরাবরের। কিন্তু এই মিত্রতার মাঝে রয়েছে যথেষ্ট দূরত্বও।

একদিকে 'ইন্ডিয়া' গড়ছে, অন্যদিকে এনডিএ ভাঙছে! ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল তামিলনাড়ুর AIADMK। চেন্নাইতে দলের প্রধান কার্যালয়ে সাংসদ, বিধায়ক এবং জেলা প্রধানদের একটি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গেরুয়া হাত ছাড়ার প্রস্তাব পাস হয়ে গিয়েছে। এআইএডিএমকে সহ সাধারণ সম্পাদক কেপি মুনুসামি আনুষ্ঠানিকভাবে এই 'ব্রেক-আপ'-এর ঘোষণাও করেছেন। বিজেপির জোট ছাড়ার খবরে দলীয় কর্মীরা পটকা ফাটিয়ে উদযাপন করলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, শিয়রে নির্বাচন নিয়ে শাসক জোটের হাত কেন ছাড়ল এআইএডিএমকে?

গত শনিবার দিল্লিতে একটি বৈঠকে শেষ প্রচেষ্টা করা হয়েছিল বিজেপি আর এআইএডিএমকের সখ্য বজার রাখার। দক্ষিণ ভারতীয় এই দল নিজেদের দাবিতে অটল ছিল। এআইএডিএমকে জানায়, হয় বিজেপির তামিলনাড়ুর প্রধান কে আন্নামালাই প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিএন আন্নাদুরাই সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইবেন। নতুবা তাঁর জায়গায় একজন 'অ-বিতর্কিত নেতা'কে নিয়ে আসতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, সি এন আন্নাদুরাই হচ্ছেন এআইএডিএমকের প্রতিষ্ঠাতা এম জি রামচন্দ্রনের উপদেষ্টা।

আরও পড়ুন- খোদ উত্তরপ্রদেশেই ইন্ডিয়ার কাছে হেরে ভূত বিজেপি! কেন এই শোচনীয় হার?

সেই বৈঠকে AIADMK-এর একজন বর্ষীয়ান নেতা বলেন, আলোচনাগুলি সৌহার্দ্যপূর্ণ হলেও বিজেপির এম চক্রবর্তীর মন্তব্য বুঝিয়ে দেয় এই সদ্ভাব বেশিদিনের নয়। বিজেপি নেতৃত্ব আন্নামালাইকে সরিয়ে দিতে রাজি নয় কারণ আন্নামালাই তামিলনাড়ুতে বিজেপিকে ফের একবার প্রাণ দিয়েছেন। আন্নামালাই সনাতন ধর্ম নিয়ে বিতর্কের সময় আন্নাদুরাইকে ইঙ্গিত করে একটি মন্তব্য করেছিলেন। এতে নাকি এআইএডিএমকের চটে যাওয়ার মতো কিছুই হয়নি কারণ আন্নামালাই দলের সমালোচনা করেননি।

এআইএডিএমকে-বিজেপির সম্পর্ক যে টলমলে তা কিছুকাল ধরেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। এআইএডিএমকে দলের নেতা ডি জয়কুমার সাফ জানিয়েছিলেন নির্বাচনের আগেই জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। জয়কুমার বলেন, "আন্নামালাই বিজেপির রাজ্য সভাপতি হওয়ার অযোগ্য। তিনি প্রয়াত নেতাদের নিয়ে খারাপ কথা বলেন শুধুমাত্র নিজেকে তুলে ধরার জন্য"।

বিজেপি নেতা আন্নামালাই এর আগেও প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সমালোচনা করেছিলেন। এআইএডিএমকের মধ্যে একজন কিংবদন্তি নেত্রী ছিলেন জয়ললিতা। সেই সময়ও এআইএডিএমকে রাজ্য বিজেপি প্রধানের মন্তব্যে লাগাম টানার দাবি করেছিল। এআইএডিএমকে বিজেপির সঙ্গ না দেওয়াতে এবার বিজেপিকে একার দমেই তামিলনাড়ুতে নিজের জায়গা তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তামিলনাড়ু এমন একটি রাজ্য যেখানে বিজেপি এখন পর্যন্ত কোনও নির্বাচন জেতেনি।

আরও পড়ুন- ‘নেতা নয়, কংগ্রেস দল চালাচ্ছে আরবান নকশালেরা’- কেন বলছেন মোদি?

এআইএডিএমকে সাফ জানাচ্ছে, আন্নামালাই এআইএডিএমকের সঙ্গে জোট করতে চায় না যদিও বিজেপি কর্মীরা জোট চায়। নিজেরই রাজ্যে নিজেদের নেতাদের সমালোচনা কেন সহ্য করবে এআইএডিএমকে! এআইএডিএমকে খুব ভালো করেই জানে, তাঁদের সঙ্গ ছাড়া বিজেপি এই রাজ্যে দাঁতও ফোটাতে পারবে না।

এআইএডিএমকের সঙ্গে বিজেপির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বরাবরের। কিন্তু এই মিত্রতার মাঝে রয়েছে যথেষ্ট দূরত্বও। জয়ললিতা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন বিজেপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট গঠন করেননি তিনি। কারণ জয়ললিতা বিশ্বাস করতেন, দ্রাবিড় মতাদর্শ প্রভাবিত রাজ্যের রাজনৈতিক চিত্রে বিজেপি অত্যন্ত বেমানান। এআইএডিএমকে ২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন সহ বিজেপির সঙ্গে জোট করে লড়ে সমস্ত নির্বাচনে হেরেছে। এই হারের পিছনে দায় হসেবে বিজেপির সঙ্গে জোট করার কারণটিকেই সামনে রেখেছিল এআইএডিএমকে। এই আনুষ্ঠানিক 'ব্রেক আপ' কি এআইএডিএমকে-র হারানো গৌরব ফিরে পেতে সাহায্য করবে? ইন্ডিয়া বনাম এনডিএ লড়াইয়ে নিজেকে কোথায় রাখবে এআইএডিএমকে? দাক্ষিণাত্যের রাজনীতিতে এখন বড় প্রশ্ন এটিই।

 

More Articles