আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে কেন 'সংখ্যালঘু' তকমা মুছতে চাইছে কেন্দ্র?

Aligarh Muslim University: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান দেশের সম্পদ। আর তা ধর্মনিরপেক্ষ হওয়াই প্রয়োজন। শীর্ষ আদালতে জানাল কেন্দ্র সরকার।

কোনওভাবেই শুধুমাত্র সংখ্যালঘুর প্রতিষ্ঠান নয় আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। আর তা হতেও পারে না। কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম বা ধর্ম প্রতিষ্ঠানের তকমা দেওয়া যাবে না বিশ্বমানের এই বিশ্ববিদ্যালয়কে। আর সেই মর্মেই এবার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিল কেন্দ্রীয় সরকার।

যে কোনও ভাবে দেশ থেকে সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব কমাতে উঠে পড়ে লেগেছে বিজেপি সরকার। অসমের অভিধান থেকে কার্যত মুছে ফেলা হয়েছে মাদ্রাসা শব্দটি। সেখানকার সমস্ত মাদ্রাসার নাম পাল্টে ফেলা হয়েছে তড়িঘড়ি। ইতিমধ্যেই ইলাহাবাদ নাম পাল্টে হয়েছে প্রয়াগরাজ। মোদি শাসনে মোঘলসরাইয়ের নাম হয়েছে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশনষ আলিগড়ের নাম পাল্টে সিদ্ধান্ত হয়েছে হরিগড় রাখার।

এত বদলের মধ্যে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি (AMU)-ই বা বাদ যায় কেন? এবার সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুসলিম তকমা হঠাতে উঠেপড়ে লাগল কেন্দ্র সরকার। তার যুক্তি হিসেবে কেন্দ্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আর কেন্দ্রের তরফে দাবি, যে প্রতিষ্ঠান এই তকমা পায়, তা কোনও ভাবেই আর কোনও নির্দিষ্ট ধর্মীয় জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকতে পারে না। কেন্দ্রের আইনজীবী তথা সলিসিটর জেনারেস তুষার মেহতা তার সওয়ালে জানান, "১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক-স্বাধীনতা যুগেও জাতীয় স্তরের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। তাই তাকে কেবলমাত্র সংখ্যালঘুদের জন্য বলা যেতে পারে না।"

আরও পড়ুন: পাল্টে গেল মাদ্রাসা! সমস্ত বৈশিষ্ট্য ধুয়েমুছে ‘মি স্কুল’ গড়ল বিজেপি সরকার

আজ থেকে নয়, প্রথম থেকেই আলিগড় ও দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর থেকে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তকমা তুলে নেওয়ার পক্ষে। এ নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে বিরোধিতার মুখেও পড়েছে মোদি সরকার। তবে মোদি সরকারের যুক্তি হল, এই তকমা অসাংবিধানিক। সংসদের আইনের মাধ্যমে যে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে, পরে তাকে ধর্মের ভিত্তিতে বিশেষ তকমা দেওয়া দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরুদ্ধে। পাশাপাশি তাদের দাবি, সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্ধেক আসন সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত থাকায় বাকি তফসিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়ারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সুপ্রিম কোর্টে সলিসিটর জেনারেল এ-ও জানিয়েছেন যে ভারতীয় সংবিধান রচনার দায়িত্ব ছিল যে গণপরিষদের, সেখানেও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়কে সংখ্যালঘু তকমা দেওয়া নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয়েছিল আগেই। ১৯৮১ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির আমলেই আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সংশোধন করে একে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের তকমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০০৬ সালে আইন খারিজ হয়ে যায় ইলাহাবাদ হাইকোর্টে।

 

উচ্চ আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সে সময়েও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল ইউপিএ সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার ইউপিএ সরকারের সেই আবেদনই তুলে নেওয়ার দাবি করে শীর্ষ আদালতে গিয়েথে কেন্দ্র সরকার। সেখানে কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল জানিয়েছেন, সেন্ট্রাল এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন (ভর্তি সংরক্ষণ) আইন ২০০৬ (২০১২ সালে সংশোধিত)-এর ৩ নম্বর ধারা মেনে আলিগড়ে সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ বজায় রাখার কোনও প্রয়োজন নেই।

আরও পড়ুন:ঐতিহাসিক আলিগড়ের নাম বদলে দিচ্ছে বিজেপি? ‘আলি’ বাদ দিয়ে বসছে…

তিনি সাফ জানিয়ে দেন, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান দেশের সম্পদ। আর তা ধর্মনিরপেক্ষ হওয়াই প্রয়োজন। শিক্ষামন্ত্রকের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল ব়্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক-২০২৩ অনুযায়ী, ৯ নম্বরে রয়েছে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি। ইউনিভার্সিটি মঞ্জুরি কমিশন ও ন্যাকের হিসেবেও A+ গ্রেড পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ফলে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মনিরপেক্ষ হওয়াই সাংবিধানিক বলে মনে করছে কেন্দ্র সরকার।

প্রশ্ন উঠেছে, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যে পথে হেঁটেছে কেন্দ্র সরকার, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও কি একই পথে হাঁটবে দেশের বিজেপি সরকার? এমনিতেও সংবিধানে এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন ও ব্যতিক্রমী (সুই জেনেরিস) মামলা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এখন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই মনোভাব দেখায় কিনা কেন্দ্র সরকার, সেটাই এখন দেখার।

More Articles