পতৌদি-শর্মিলার প্রাইভেট রুমে বজ্রপাত! বিখ্যাত দাম্পত্যের বিস্ফোরক সত্যি

Pataudi-Sharmila: শর্মিলা: টাইগার, তুমিও আমাকে কম যন্ত্রণা দাওনি। পতৌদি: রিংকু প্লিজ, এসব কথা বন্ধ করো। সামনে টেপরেকর্ডার চলছে। খেয়াল নেই?

১৯৮৬-র ৩১ জুলাই। প্রকাশিত হলো 'সানন্দা' পত্রিকার প্রথম সংখ্যা। সম্পাদক অপর্ণা সেন। সহ-সম্পাদক আমি। প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদকাহিনি পতৌদি-শর্মিলার বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার। অপর্ণা আমাকে দিল্লি পাঠালেন টাইগার পতৌদি আর শর্মিলাকে ইন্টারভিউ করার জন্য, তাঁদের দিল্লির বাড়িতে। আমার সাংবাদিক জীবনে এই সাক্ষাৎকার এক ল্যান্ডমার্ক!

টাইগার পতৌদি, ইংল্যান্ডে বড় হওয়া খানদানি মুসলমান। শর্মিলা ঠাকুর, ঠাকুরবাড়ির মেয়ে। আমি যখন এঁদের সঙ্গে দিল্লির বাড়িতে দেখা করলাম, ততদিনে এঁদের বিয়ের বয়স ১৮। এক ছেলে। দুই মেয়ে। এই নিয়ে সংসার। টাইগারকে বিয়ে করার জন্য শর্মিলাকে মুসলমান হতে হয়েছে। নিয়মিত নামাজ পড়েন শর্মিলা। আগে কালীঘাটের মন্দিরে পুজো দিতেন। এখন তাঁর নাম, বেগম আয়েশা সুলতানা!শর্মিলা আর পতৌদি পাশাপাশি। আমি তাঁদের সামনে। শর্মিলার প্রাইভেট রুমে।

আরও পড়ুন: দুর্ঘটনায় একা হয়ে যাওয়া, আদরের উপোস! কাবেরী বসুকে যেভাবে চিনেছি

আমি: আপনাদের প্রথম দেখা হলো কোথায়, কীভাবে?
পতৌদি: বিয়ে করেছিলাম ১৯৬৮ সালে। সেটা মনে আছে।
শর্মিলা: ১৯৬৮-র ২৭ ডিসেম্বর আমাদের বিয়ের দিন।
পাতৌদি: বিয়ের আগে দু'-বছর রিংকুর (শর্মিলার ডাকনাম) সঙ্গে মেলামেশা করেছি। বোধহয় বম্বেতে কোনও বন্ধুর বাড়িতে আমাদের প্রথম দেখা।
শর্মিলা: না। আমাদের প্রথম দেখা কলকাতায় একটা পার্টিতে। তারপর বম্বেতে। তখন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে। আমি তখন এক বন্ধুর সঙ্গে থাকতাম। বম্বে-তে আমার তখন কোনও নিজের ফ্ল্যাট ছিল না। একদিন ফোন করে আমাকে একটা অদ্ভুত মেসেজ দিয়েছিলে।
পতৌদি: কী মেসেজ রিংকু?
শর্মিলা: আই হ্যাভ বট ফাইভ ফ্রিজেস ফর ইউ!
তোমাকে খুব ডিপ্রেসড মনে হয়েছিল। খুব করুণভাবে আমার জন্য পাঁচটা ফ্রিজ কেনার কথা বলেছিলে। ওই একটা বাক্য, আমি তোমার জন্য পাঁচটা ফ্রিজ কিনেছি- এই ডাহা মিথ্যুককে ভালবেসে ফেলমাম।


আমি: এক ধরনের করুণা থেকে টাইগারের প্রতি দুর্বলতা?
শর্মিলা: পাগল! টাইগার তো আমার প্রথম প্রেম নয়। ওর আগে আরও দু'জনকে অন্তত 'আই লাভ ইউ' বলেছি। স্কুললাইফে এক জার্মান ছেলেকে ভালবেসে ফেলেছিলাম। বরং টাইগারকে কোনও দিন তেমনভাবে ভালবাসার কথা বলিনি। আবার টাইগারের জীবনে আমিও প্রথম প্রেমিকা নয়।
পতৌদি: অক্সফোর্ডে আমার অনেক বান্ধবী ছিল। তবে শোয়াশুয়ি তখন খুব সহজ ছিল না। অক্সফোর্ড এই ব্যাপারে একটু বেশি স্ট্রিক্ট ছিল।
শর্মিলা: একটা কথা, সাসেক্সের ক্যাপ্টেন হওয়ার পর টাইগারের ডিপ্রেশন অনেক কেটে গেল।
পতৌদি: রিংকু, তুমি আমাকে চিরদিন ভুল বুঝেছ। আমি কখনও ডিপ্রেশনে ভুগিনি। তবে একটা ব্যাপারে আমার ডিপ্রেশন ছিল। তুমি ঠাকুরবাড়ির মেয়ে। আর আমি একেবারে বাংলার সংস্কৃতি বুঝি না। কী করে তোমাকে ইমপ্রেস করব, ভেবে পাচ্ছিলাম না।
শর্মিলা: তুমি কিন্তু আমাকে খুব সহজে ইমপ্রেস করেছিলে, যে রাতে তুমি আমাকে জুহু হোটেলে ডিনারে নেমন্তন্ন করে গল্প করতে করতে খাবার অর্ডার দিতে ভুলে গেলে! যখন হুঁশ হলো, তখন ডিনার সার্ভ করা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা সমুদ্রের ধারে বসে গল্প করেছিলাম। ওই ঘটনাটার পরে আমি প্রথম ভাবলাম, তোমাকে বিয়ে করা যেতে পারে।
পতৌদি: আর কিছু ভাবোনি ?
শর্মিলা: হ্যাঁ, ভেবেছি। তুমি নবাববাড়ির ছেলে। ইংল্যান্ডে মানুষ। ক্রিকেট খেলে তুমি তো হিরো! ইচ্ছে করলে শো অফ করতে পারতে। কিন্তু সেটা করোনি। আমার ভালো লেগেছিল।
পতৌদি: শুধুই এই কারণে প্রেম, বিয়ে?
শর্মিলা: অন্য কারণ তো আছেই। তখন তোমার বয়স ২৪, আমার ২০। আমরা দু'জনেই বম্বেতে। একা। যা খুশি করার মতো স্বাধীন। কোনও রকম গোঁড়ামি নেই। মানসিক বাধা নেই। এবার ভাবো কতদূর গড়াতে পারে... (হাসি)।
পতৌদি: রিংকু প্রেমের ব্যাপারে রোম‍্যান্টিক ইলিউশনে ভুগত! আমি ওকে সারিয়ে তুলি। সেই কারণে আমাদের সেক্স লাইফ খুব স্বাভাবিক। কোনও সমস্যা নেই।
শর্মিলা: টাইগার, হোয়াট আর ইউ সেইং! সমস্যাহীন সেক্স লাইফ? সম্ভব?
আমি: ঠিক ঠিক। আপনি যাঁর স্ত্রী, তাঁর বিবাহিত জীবনে কোনও সমস্যা নেই, হতে পারে?
শর্মিলা (সরাসরি আমার চোখে চোখ রেখে): আপনি নিশ্চয়ই গুলজার, রাজেশ খান্না, ধর্মেন্দ্র, শশী, সঞ্জীবকুমার, এঁদের কথা ভাবছেন। অশান্তি হওয়ার মতো কোনও প্রমাণ টাইগার পেয়েছে কি না, ওকে জিজ্ঞেস করুন।

রাজেশ খান্নার সঙ্গে

ঘরে আচমকা বজ্রপাত! শর্মিলা এতটা অ্যাগ্রেসিভ হতে পারেন, ভাবতে পারিনি। পতৌদির মুখ লাল।

পতৌদি: প্রমাণটাই রিংকু সব নয়। অন্তত প্রথম প্রথম ফিল্ম পত্রিকায় তোমাকে নিয়ে যেসব কুৎসা বেরিয়েছে, সেসব খুব যন্ত্রণা দিয়েছে। কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে আমি কোনও প্রমাণও পাইনি। সেটা আরও যন্ত্রনার।
শর্মিলা: টাইগার, তুমিও আমাকে কম যন্ত্রণা দাওনি।
পতৌদি: রিংকু প্লিজ, এসব কথা বন্ধ করো। সামনে টেপরেকর্ডার চলছে। খেয়াল নেই?
শর্মিলা: খেয়াল আছে বলেই সত্যি কথাটা বলব। হঠাৎ এক পরম-আত্মীয়ের কাছে শুনলাম টাইগার নাকি প্রেমে পড়েছে। ওরা ডেট করছে, ওদের একসঙ্গে নানা জায়গায় দেখা যাচ্ছে! প্রথমে বিশ্বাস করিনি। তারপর নানা মুখে টাইগারের এই নতুন প্রেমের কথা রটে গেল। আর আমার চোখের সামনে আমার সাজানো সংসার ভাঙতে লাগল।
আমি: আপনার কাছে কোনও প্রমাণ ছিল?
শর্মিলা: আমি টাইগারকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম। এবং টাইগার অস্বীকার করেনি। একটা সত্যিকে ঢাকতে দশটা মিথ্যে বলেনি। খুব ঠান্ডাভাবে আমার কাছে সব স্বীকার করল। আমাদের সম্পর্কে চিড় ধরল। অনেকদিন লেগেছিল সেই ক্ষত সারতে।
পতৌদি: ব্যাপারটা যখন ঘটে ছিল তখন রিংকুর কেরিয়ার তুঙ্গে। আর আমার ক্রিকেট শেষ হয়ে আসছে। কনসিসটেন্সি থাকছে না। চেষ্টা করেও খেলতে পারছি না। হতাশা থেকে রিংকুর কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলাম। রিংকু ইচ্ছে করলেই আমাকে ত্যাগ করতে পারত। কিন্তু রিংকু আমাকে আরও কাছে টেনে নিল। আমাদের বিয়েটা যে টিকে গেল, সেটা রিংকুর জন্যই। আমি কৃতজ্ঞ।

More Articles