বিশ্বভারতীতে অমর্ত্য সেনের উপর বক্তৃতায় বাধার অভিযোগ! আসলে কী হয়েছিল?
Amartya Sen: অনুষ্ঠানটি বিশ্বভারতীর সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সভাকক্ষে আয়োজন করার কথা ছিল। কিন্তু, তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে সরানো হয়।
ফের শিরোনামে বিশ্বভারতী। সম্প্রতি খবর ছড়ায়, বিশ্বভারতীর লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে অমর্ত্য সেনের উপর একটি বক্তৃতার আয়োজন করা হয়েছিল, কিন্তু সেই অনুষ্ঠান স্থানান্তরিত করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ কী তেমনই? খোঁজ নিয়েছিল ইনস্ক্রিপ্ট।
১৪ অগাস্ট বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহের শান্তিদেব সভাকক্ষে একটি বিশেষ বক্তৃতা সভার আয়োজন করেছিল অনুষ্টুপ। খবর ছড়ায় অনুষ্ঠানটি বিশ্বভারতীর সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সভাকক্ষে আয়োজন করার কথা ছিল, কিন্তু তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে সরানো হয়।
এই মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দ্য ওয়্যার-এর মতো সংবাদমাধ্যমেও। যেহেতু অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতীর তিক্ততার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, ফলে সারস্বতসমাজও মন্তব্য করতে শুরু করে। এই আবহেই ইনস্ক্রিপ্ট যোগযোগ করে অনুষ্টুপ কর্ণধার অনিল আচার্য-র সঙ্গে।
আরও পড়ুন-আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে সতর্ক! বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী বলছেন অমর্ত্য সেন?
অনিল আচার্য জানান, সংস্থার সিদ্ধান্তেই অনুষ্ঠানটি গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে হয়েছে। এতে বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের কোনো হাত নেই। তাঁর কথায়, "বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুষ্ঠান না করার বিষয়ে কিছুই বলেনি। এই নিয়ে কোনো চিঠি চালাচালি হয়নি।"
তিনি আরও বলেন, "সংস্থার সুবিধের জন্য গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে এই অনুষ্ঠান করেছি। এর সঙ্গে বিশ্বভারতীর কোনো সম্পর্কই নেই। এবং এই দিন অমর্ত্য সেনকে নিয়ে যে সংখ্যাটি বেরিয়েছে তা বিশ্বভারতীর কোলাবরেশনে বেরয়নি। গত পাঁচ বছর ধরে নিজেরা কাজ করে আমরা এই পত্রিকা প্রকাশ করেছি।" কাজ করেছেন কুমার রানা, অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য, ওই দিনের সভায় অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ ‘লার্নিং ফ্রম অমর্ত্য সেন’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন।
জঁ দ্রেজ পরে দ্য হিন্দু-কে বলেছেন, “অমর্ত্য সেন শান্তিনিকেতন গ্রন্থাগারের ফসল, ভারতের বিদগ্ধ পণ্ডিতদের একজন। অবাক করার মতো বিষয়, তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য করা একটি অনুষ্ঠান গ্রন্থাগার থেকে বোলপুরের একটি স্থানীয় হলে স্থানান্তরিত করতে হল।” তিনি আরও বলেন, "আজ আমরা অমর্ত্য সেনের কথা বলার জন্য জায়গা পাচ্ছি না।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধ্যাপক দ্য হিন্দুকে বলেন, "অনুষ্ঠানটি অন্যত্র করার আসল কারণ হল, অমর্ত্য সেন এবং জঁ দ্রেজ উভয়ই কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের চক্ষুশূল"।
আরও পড়ুন- রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর স্বপ্ন বিশ্বভারতী
দ্য ওয়্যার-এ আবার লেখা হয়েছে, বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এই মুহূর্তে রবীন্দ্র সপ্তাহ উদযাপিত হচ্ছে। তাই একই সময়ে অন্য অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবিরুদ্ধ বলেই প্রকাশনার অনুষ্ঠানটি করা যায়নি।
এখানেই অস্বস্তি। যে ঘটনা ঘটেইনি তা নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বা জনসংযোগ আধিকারিকের মন্তব্য সামনে এল কেন? ওয়্যার বা হিন্দুর মতো অতি বিচক্ষণ সংবাদমাধ্যমগুলি বা এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করবার আগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করল না কেন?
প্রসঙ্গত, অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে নোটিস দিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তুলেছিল বাড়তি জায়গা দখলের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছিল, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ১৩ ডেসিমেল জায়গা বাড়তি দখল করে রয়েছেন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদ নোটিস পর্যন্ত ধরানো হয়েছিল। এমনকি জমি খালি করার জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ১৫ দিনের মধ্যে জায়গা না ছাড়লে বলপ্রয়োগেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেই সময় বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। পরে জমি বিবাদ মামলায় সিউড়ি জেলা আদালতে অমর্ত্য সেনের পক্ষেই রায় দেয় সিউড়ি জেলা আদালত।

Whatsapp
