ভেঙে পড়ছে অ্যামওয়ে সাম্রাজ্য! মারাত্মক অভিযোগ সংস্থার বিরুদ্ধে
বড় ধাক্কার সম্মুখীন অ্যামওয়ে ইন্ডিয়া। চলতি সপ্তাহের শুরুতে সংস্থার প্রায় ৭৫৮ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কেন্দ্রীয় এই সংস্থার দাবি, বেআইনি অর্থ লেনদেনের কারণেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কোম্পানি পিরামিড স্কিমের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা চালিয়ে গেছে। অথচ একসময় ভারতের বাজারে রমরমিয়ে ব্যবসা করেছে এই কোম্পানি।গত বছর অমিতাভ বচ্চনকে কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নিয়োগের কথাও ঘোষণা করেছিল তারা।তবে নতুন করে কী ঘটল? ইডি-র তরফ থেকে কোম্পানির বিরূদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে, তাও নাকি নতুন নয়। তাহলে প্রশ্ন, কীভাবে বছরের পর বছর ভারত তথা পৃথিবীর বাজারে টিকে রয়েছে এই কোম্পানি? চলুন চোখ বোলানো যাক 'অ্যামওয়ে ইন্ডিয়া'-র যাত্রাপথের দিকে।
ভারতে 'অ্যামওয়ে' কথা
অ্যামওয়ে একটি আমেরিকান মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি, যারা স্বাস্থ্য, ত্বক এবং বাড়ির পরিচর্যার জন্য বিবিধ পণ্য উৎপাদন করে। ১৯৫৯ সালে জে. ভ্যান অ্যান্ডেল এবং রিচার্ড ডিভোসের হাত ধরে শুরু হয় এই কোম্পানি। এই মুহূর্তে ছয়টি মহাদেশের প্রায় ১০০টিরও বেশি দেশে উপস্থিতি রয়েছে সংস্থার। তবে প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩৫ বছর পরে ভারতে পা রাখে অ্যামওয়ে কোম্পানি, ভারতের উদার অর্থনীতি খুলে দেয় সেই পথ। কোম্পানির ওয়েবসাইটে চোখ রাখলে দেখা যায়, ১৯৯৫ সালে ভারতে প্রতিষ্ঠা হয় এই কোম্পানির ভিত। তবে বাণিজ্যিক কার্যকলাপ শুরু করতে সময় লাগে আরও তিন বছর। প্রথম বছরেই জনপ্রিয় হয় এই কোম্পানির পণ্য। শীঘ্রই দেশের বৃহত্তম এফএমসিজি কোম্পানিতে পরিণত হয় এই সংস্থা। ভারতে এই কোম্পানির প্রথম উৎপাদন কেন্দ্রটি তামিলনাড়ুর ডিন্ডিগুল জেলার নীলাকোট্টাইতে অবস্থিত। ১৪০টিরও স্বতন্ত্র উন্নতমানের পণ্য উৎপানকারী এই কোম্পানিতে প্রায় ২,৫০০ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মী রয়েছেন।
মাত্র ছ'টি পণ্য নিয়ে ভারতের বাজার দখলে নামে অ্যামওয়ে সংস্থা। প্রথম বছরেই টার্নওভার ১০০ কোটি ছুঁয়ে ফেলে।২০০২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভারতে ২৭,৫৬২ কোটি টাকার মুনাফা করেছে এই কোম্পানি এবং এর মাত্র ৭,৫৮৮ কোটি টাকা ভারতের বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটর এবং সদস্যদের দিয়েছে। বাকি পুরোটাই চলে গেছে আমেরিকায়।
আরও পড়ুন: ১২০ বছর পূর্তি! যে ভাবে সাজছে লাখো বাইকারের প্রিয় রয়েল এনফিল্ড
ইডির অভিযোগ
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মতে, ডাইরেক্ট সেলিংয়ের বদলে কোম্পানি পিরামিড স্কিমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করেছে। এই কারণে ইডি কোম্পানির ৭৫৭.৭৭ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।এর মধ্যে রয়েছে তামিলনাড়ুর ডিন্ডিগুলে অবস্থিত কোম্পানির জমি ও কারখানা, কোম্পানির গাড়ি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ফিক্সড ডিপোজিট। বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির মধ্যে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৪১১.৮৩ কোটি টাকার। বাকি ৩৪৫.৯৪ কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অধীনস্থ ৩৬টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
কেন্দ্রীয় এই সংস্থার আরও দাবি, সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে সংস্থার সদস্য হিসেবে যোগ দিতে বলা হত এবং সংস্থার জিনিস কেনার জন্য চাপও দেওয়া হত। তাছাড়া বাজারে ওই একই ধরনের জিনিস অনেক দামেই পাওয়া যায়। অর্থাৎ, আকাশছোঁয়া দামে কোম্পানি তাদের পণ্য বিক্রি করত। তবে সংস্থার সদস্যরা সেই সামগ্রী নিজেদের জন্য কিনতেন না, বরং সেগুলি দেখিয়ে আরও সদস্য জোগাড় করতেন। এই ব্যবসায়িক পদ্ধতিকেই 'পিরামিড স্কিম' বলে।
তবে এর আগে ১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কোম্পানির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ওঠে। ২০১৩ সালে কেরল পুলিশ ভারতে অ্যামওয়ের প্রধান উইলিয়াম স্কট পিঙ্কনকে আটক করে পিরামিড স্কিমে ব্যবসা চালানোর অভিযোগে।
কোম্পানির বক্তব্য
ইডির অভিযোগের বিরুদ্ধে কোম্পানির পাল্টা দাবি, নতুন সদস্যদের কোম্পানিতে যোগ দিতে কোনওরকম অর্থের প্রয়োজন হয় না। তাঁরা শুধুমাত্র পণ্য বিক্রির পরই কোম্পানিকে অর্থ দিয়ে থাকে, তাই এটি কোনওভাবেই পিরামিড স্কিমের অন্তর্ভুক্ত নয়।
বিবৃতি দিয়ে কোম্পানি জানিয়েছে যে, এটি নতুন কোনও অভিযোগ নয়। বরং ২০১১ সালের একটি কেসের সঙ্গে এই অভিযোগ জড়িত এবং কোম্পানি তদন্তের স্বার্থে ইডিকে সাহায্যও করেছে। তারা ভবিষ্যতেও তদন্তের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সহযোগিতা করবে সবরকমভাবে।
কোম্পানির ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে, জিনিস ব্যবহার করে সন্তুষ্ট না হলে ক্রেতারা ফিরিয়েও দিতে পারেন পণ্যটি। সেক্ষেত্রে একশো শতাংশ টাকাই ফেরত পাবেন তাঁরা। তাহলে এই অভিযোগের ভিত্তি কী? এই প্রশ্নের জবাব মিলবে সম্পূর্ণ তদন্তের শেষে। তবে নতুন করে কি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে অ্যামওয়ে ? উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ।