আজ রাতেই পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি চাঁদ! দেখা মিলবে বিরল সুপারমুনের
Supermoon 2025:এই সুপারমুনের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ার সৃষ্টি করার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত পেরিজিতে পূর্ণিমা বা অমাবস্যার সময় উচ্চ জোয়ারকে বলে পেরিজিয়ান স্প্রিং জোয়ার।
গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে বিরল এক ব্লাড মুনের সাক্ষী থেকেছে মহাকাশ প্রেমী মানুষজন। প্রায় ৮২ মিনিট ধরে চলে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ, রক্তিম চাঁদের শোভা মুগ্ধ করে নীল গ্রহের বাসিন্দাদের। এই অক্টোবরের ৭ তারিখেও স্বাভাবিক পূর্ণিমার চাইতেও প্রজ্জ্বল চন্দ্রের সাক্ষী থাকতে চলেছি আমরা। বিজ্ঞানীরা একে বলেন সুপারমুন। কী সেটি?
পৃথিবীর চারপাশে চাঁদ উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরতে থাকে, ফলে পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। ছেলেবেলা ভূগোলের বইতে আমরা পড়েছি, এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চলে আসে তখন অমাবস্যা দেখা যায়, আবার পৃথিবী যখন সূর্য ও চাঁদের মাঝে চলে আসে তখনই পূর্ণিমার দেখা মেলে। চাঁদ তার উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে এমন বিন্দুতে এসে পৌঁছায়, যেখান থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে কম, যাকে বলা হয় পেরিজি (Perigee) (পেরি অর্থ- কাছাকাছি এবং জিয়া ( 'gē') অর্থ পৃথিবী)। আবার উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে দূরের বিন্দুতে পৌঁছায়, তখন তাকে বলে অ্যাপোজি (Apogee); গ্রিক শব্দ ‘অ্যাপো’(Apo) অর্থাৎ থেকে এর উৎপত্তি। পেরিজি-তে, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব হয় প্রায় ৩৫৬,০০০ কিলোমিটার, আবার অ্যাপোজি-তে এটি ৪০৬,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে থাকতে পারে।
আরও পড়ুন
আমেরিকা বনাম চিন! চাঁদ জয়ের যুদ্ধে কে এগিয়ে?
চাঁদ পেরিজিতে অবস্থান করার সময় পূর্ণিমা হলে, তাকে স্বাভাবিকের থেকে বড় ও উজ্জ্বল দেখায়। বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী, এ বছর ৭ অক্টোবর চাঁদ পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৬১,৪৫৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করবে, যা অন্য সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রায় ১০% কম দূরত্বে অবস্থান করছে। এই সময় চাঁদের আকার স্বাভাবিক পূর্ণিমার থেকে ১৪% পর্যন্ত বড় হতে পারে, এবং ঔজ্জ্বল্য হবে প্রায় ৩০% বেশি। ১৯৭৯ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী রিচার্ড নোলে সর্বপ্রথম এর নামকরণ করেন সুপারমুন। তার আগে পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এই চাঁদগুলোকে পেরিজিয়ান পূর্ণিমা বলতেন। ঐতিহ্যগতভাবে অক্টোবর মাসে ফসল সংগ্রহের সময় এই পূর্ণ শশীর দেখা মেলে বলে, অনেকে একে ‘হার্ভেস্ট মুন’ নামেও চেনেন। এখন গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে, আগে উত্তর গোলার্ধের চাষিরা এই সময়ে চাঁদের আলোয় ফসল সংগ্রহ করতেন।
আবার চাঁদ ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে অর্থাৎ অ্যাপোজিতে চলে গেলে পূর্ণিমার চাঁদের আকার অনেকটা ছোট হয়, ঔজ্জ্বল্যও কম হয়, যাকে বলা হয় মাইক্রোমুন। এই দুই পূর্ণিমার ছবি পাশাপাশি রাখলে পার্থক্যটা আমাদের খালি চোখে দৃশ্যমান হয়।

রাতের বর্ণময় আলো ছাড়া এই সুপার মুনের কি আর কোনো প্রভাব আমরা পৃথিবী থেকে অনুভব করতে পারি? হ্যাঁ পারি। পৃথিবীতে জোয়ার ভাঁটা হয় মূলত চাঁদের মহাকর্ষ টানের কারণে (সুর্য অপেক্ষাকৃত দূরে অবস্থান করায় তার টান অতটা প্রভাব ফেলে না)। এই সুপারমুনের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ার সৃষ্টি করার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত পেরিজিতে পূর্ণিমা বা অমাবস্যার সময় উচ্চ জোয়ারকে বলে পেরিজিয়ান স্প্রিং জোয়ার। আজকাল অনেকে এটিকে সুপারমুন জোয়ার বলে থাকেন। এই জোয়ার পূর্ণিমার পরে একদিন বা তারও বেশি সময় ধরে আসে।
বর্ষার সময়ে, সুপারমুন জোয়ার কি বন্যা সৃষ্টি করতে পারে? এ প্রশ্ন হয়ত আমাদের অনেকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা অনেকাংশে নির্ভর করে স্থানীয় উপকূলরেখার আকার ও আবহাওয়ার উপর। বৈজ্ঞানিক গণনা অনুযায়ী সুপারমুনের সময় চাঁদের মহাকর্ষীয় টান বছরের অন্যান্য সময়ের সাধারণ পূর্ণিমার তুলনায় ৪% বেশি থাকে।
আরও পড়ুন
খুলছে রহস্যের জট! চাঁদের মাটিতে আশ্চর্য বস্তু খুঁজে পেল রোভার ‘প্রজ্ঞান’
আকাশ পরিষ্কার থাকলে খালি চোখেই আমরা উপভোগ করতে পারব এবছরের প্রথম সুপারমুনের বর্ণময় সৌন্দর্য। বাইনোকুলারে চোখ রাখলে দৃশ্যমান হতে পারে চাঁদের গায়ে থাকা বড় বড় গর্তগুলো। এরপর আবার ৫ নভেম্বর দেখতে পাব সুপারমুন। সাধারণত উত্তর-পূর্ব আমেরিকায় বছরের এই সময়ে শীতকালীন বাঁধ তৈরি হয়, এবং উত্তর আমেরিকার বিভাররা এই সময় শীতের জন্য তাদের লজ প্রস্তুত করে, সেজন্য এটিকে বিভারমুনও বলে ।
এই বছরের শেষ সুপারমুনের দেখা মিলবে ডিসেম্বরের ৪ তারিখে; যা কোল্ড মুন নামে বহুল পরিচিত। শীতের শুরুতে দীর্ঘ রাত এই ধরা বর্ণময় হয়ে উঠবে শশীকিরণে। এখানেই শেষ নয়- জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৬ সালের প্রথম সুপারমুনের দেখা মিলবে ৩ জানুয়ারি। অতএব সামনের তিন মাসে এক গণ্ডা প্রজ্জ্বল শশীর সাক্ষী থাকতে চলেছে বিশ্বের মহাকাশ প্রেমী মানুষজন।

Whatsapp
