সুন্দরবনে জোয়ারের সাথে যাপিত জীবনে শুধু আর্থিক নয়, ক্ষতি হয় মনেরও
Solastalgia: সুন্দরবনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফল শুধুমাত্র কৃষিকাজ বিপন্ন হওয়া কিংবা বাসস্থান হারিয়ে যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই- এটি মানুষের মনের মধ্যেও অদ্ভুতভাবে বাস করে। দীর্ঘ মেয়াদী ভাবে থেকে যায়।
শুভজিত নস্কর ও সিদ্ধান্ত গোস্বামী: সুন্দরবন। নামটা শুনলেই কেমন চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঘন জঙ্গল, লঞ্চে করে সুস্বাদু চিংড়ি, ইলিশ খেতে খেতে ভ্রমণ আর বাঘের জন্য অপেক্ষা। তাই নাহ? নিদেনপক্ষে যারা একটু খোঁজখবর রাখেন বা রাখতে চান তারা হয়তো জানেন— সুন্দরবন একটি সুবিশাল অঞ্চল যেখানে ঝড় ঝঞ্ঝা লেগেই আছে। বাঁধের ধারের এক দুঃসহ জীবন। শহর থেকে কেউ কেউ পালা করে যান পুজোর আগে আগে নতুন কিংবা পুরনো জামাকাপড় বিলি করতে। কখনও কখনও ত্রাণ দিতে।
কিন্তু সুন্দরবনের মনের খবর কজন রাখেন?
কাকদ্বীপ থেকে নৌকা পার করেই ঘোড়ামারা দ্বীপ। সুন্দরবনের অন্যতম বিপদসংকুল অঞ্চল। সেই ঘোড়ামারা দ্বীপের গৌরী বড়ুয়া প্রায় ছয় মাস কাকদ্বীপ সরকারি হাসপাতালের বিছানায় দিন কাটিয়েছিলেন। বিভ্রান্তি, বিষণ্ণতা ও অনিদ্রায় ভরা সেই দিনগুলি আজও তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তাঁর কথায়, "জলই আমার জীবনকে উন্মত্ত করে তুলেছিল।" হ্যাঁ, প্রায় পাগলপারা করে তুলেছিল তাঁকে নদীর জল। কাব্যের ছন্দে নয়, বরং বাস্তবের তান্ডবে।

বিপদের মেঘ বারবার ঘনিয়ে আসে সুন্দরবনের দ্বীপে | ছবি: শুভজিৎ নস্কর
২০২০ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আমফান এসে সুন্দরবনের বহু দ্বীপ তছনছ করে দেয়। একসময় সাগরদ্বীপের অংশ থাকা ঘোড়ামারা প্রায় ভেসে যায় জলের তলায়। একই ঘটনা ঘটে ইয়াশের সময়ও। ক্রমাগত নদীভাঙন, নোনা জলের অনুপ্রবেশ আর দুর্যোগের দাপটে ভেঙে পড়ছে মানুষের জীবন, ঘরবাড়ি এবং মানসিক স্থিতি। ঘোড়ামারা অঞ্চলে কর্মরত আশাকর্মী স্নিগ্ধা সামসা বলেন, "কৃষিজমি হারানো মানেই খাদ্য আর বাসস্থানের অনিশ্চয়তা। পুরুষেরা বাইরে কাজ খুঁজতে গেলেও মহিলারা দ্বীপেই থেকে যান, আতঙ্কে দিন কাটান।"
আরও পড়ুন- সুন্দরবনের বর্ষা: ভেঙে যাওয়া গ্রাম ও হারানো চাষের উৎসবগুলি
এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের সাথে যুক্ত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ অরবিন্দ নারায়ণ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৯৮-২০০৫ সালে চালানো এক সমীক্ষায় দেখা যায় সুন্দরবনে বাসস্থান হারানো মানুষের মধ্যে অনিদ্রা, উদ্বেগ ও হৃদকম্পনজনিত রোগ বাড়ছে। মহিলাদের মধ্যে এর প্রকোপ চোখে পড়ার মতো। প্রায় গোটা সুন্দরবনেই মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ পেশা হলো মীন ধরা। মীন অর্থাৎ ছোট ছোট চিংড়ির চারা, যেগুলোকে ধরবার জন্য ৮ থেকে ১০ ঘন্টা একজন মহিলাকে লবণাক্ত জলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ডঃ জয়তী চৌরের গবেষণাতে দেখা যাচ্ছে, এই নোনাজলে কাজ করার দরুণ মহিলাদের ঋতুচক্র বিশেষভাবে প্রভাবিত হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও বিঘ্নিত হচ্ছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বিহেভিয়ারাল সায়েন্স এর একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ২০০৯ সালের আয়লার পর সুন্দরবনে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)-এর উপসর্গ দ্রুত বেড়েছে। গবেষণাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ কেদার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান— রোগীরা প্রায়শই এসে নানান পুরনো ঘটনার ফ্ল্যাশব্যাকের কথা বলেন। কখনও তা জলে ভেসে যাওয়া গবাদি পশু, কখনও ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি। ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান যে, এমনও ঘটনা আছে যেখানে তার কাছে রোগী এসেছেন অন্য কোন কারণ নিয়ে কিন্তু তাকে তিনি অ্যান্টি ডিপ্রেসান্ট অর্থাৎ মানসিক অবসাদ কমানোর ওষুধ খেতে দিয়েছেন। পরে দেখা গেছে, রোগী অনেকটাই সুস্থবোধ করছেন।

জলে ভেসে যাওয়ার স্মৃতি এভাবেই ভেসে আসে বারবার মনে | প্রতীকী ছবি | ছবি: শুভজিৎ নস্কর
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত হাজরার গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক দশকে সাগরদ্বীপে প্রায় ৩৪ বর্গকিলোমিটার জমি হারিয়ে গেছে। নদীভাঙনে বসতভিটে, চাষের জমি ও ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস হচ্ছে। সাগরদ্বীপের বাসিন্দা বিকাশ দাস বলেন, "প্রতিবছর জোয়ার একটু একটু করে আমাদের গিলে নিচ্ছে। আজ যেখানে ঢেউ, একসময় সেখানে ছিল এক প্রতিবেশীর বাড়ি।"
আরও পড়ুন- উন্নয়নের নামে যেভাবে বিপর্যয় ডেকে আনা হলো উত্তরবঙ্গে
বিশ্বের যেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রতি বছর প্রায় ২ মিলিমিটার বাড়ছে, সেখানে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপে তা ৩ মিলিমিটার ছাড়িয়ে গেছে। গবেষকদের মতে, সেই অতিরিক্ত এক মিলিমিটারই সুন্দরবনের প্রতিটি পরিবারের কাছে জীবনের বিপদের ঘণ্টাধ্বনি।
ঘোড়ামারার ৭০ বছরের বাসিন্দা শেখ শাহ জাহান কথা প্রসঙ্গে বলেন— "যদি ঘোড়ামারা নিশ্চিহ্ন হয়, সাগরদ্বীপ এক নিমিষেই হারিয়ে যাবে।" বৃদ্ধ শাহ জাহান তার ভাঙ্গা ঘরে মেয়ে সাজিদাকে নিয়ে বাস করেন। সাজিদার মধ্যে ডাউন সিনড্রোমের লক্ষণ পাওয়া যায়। শাহ জাহানের ছেলেরা কেউ আর বাড়ি ফেরেনা, তারা রাজ্যের বাইরে অন্যত্র কাজ করেন। "তারা আর কোনদিন ফিরবেও না", সাজিদা যখন এই কথা বলছিল, তখন তার গলা ভারি হয়ে এসেছিল।

ঘোড়ামারায় রাত | ছবি: শুভজিৎ নস্কর
শেখ শাহ জাহান বর্ণনা করেন গত পঞ্চাশ বছরে ঘোড়ামারার কৃষিজমি কতটা কমে গিয়েছে সেই ব্যাপারে। তাঁর কথায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ১৮৬৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে সুন্দরবনের ডিভিশনাল কমিশনার আর বি. চ্যাপম্যানের পর্যবেক্ষণ:
"Sagar Island is more valuable...as a breakwater to save the mainland from the full destructive forces of storm waves than a precarious field of agriculture"
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ক্লেয়ার লিজামিট স্যামলিং তাঁর পিএইচডি থিসিস "Being Displaced: Livelihood and Settlement in the Indian Sundarbans"-এ সুন্দরবনের ইতিহাস উন্মোচন করেছেন। সেখানে দেখা যায়, সাগরদ্বীপ ঔপনিবেশিক যুগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। একরের পর একর জলাজমি কৃষিজমিতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। বন কেটে ফেলে এবং ম্যানগ্রোভ পরিষ্কার করে একটি কৃষিনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা হয়েছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর, জমির অবস্থা যাই হোক না কেন চাষ করতে হতো কৃষকদের, কারণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ কর বা খাজনা চালু করা হয়েছিল।
সুন্দরবনে বড় পরিসরে জমির চরিত্রবদল স্বাধীনতার আগে থেকেই শুরু হয়েছিল, মার্কসীয় দর্শন যাকে বলে 'মেটাবলিক রিফট' অর্থাৎ, ঔপনিবেশিক শাসকরা উপনিবেশ থেকে মুনাফা আদায়ের জন্য নতুন অঞ্চলের সম্প্রসারণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, একই সাথে ভেঙে দিয়েছিল পরিবেশের কাঠামোও। যার সুদূর প্রসারী প্রভাব আজকের জনজীবনকে বিপর্যন্ত করে তুলেছে।
আরও পড়ুন- তাপপ্রবাহ থেকে ঝড়ঝঞ্ঝা, আরও করাল হবে প্রকৃতি! কী কারণে এত দুর্যোগ?
"রাতে ভালো করে ঘুম আসে না। সমুদ্র শান্ত থাকলেও মনের মধ্যে অদ্ভুত ভয় কাজ করে, মনে হয় এই যেন সমুদ্র অশান্ত হয়ে উঠবে। আমাদের জীবনটা যেন পাখির বাসার মতো, সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি এই যেন কোন একটা ঝড় এসে সব তছনছ করে দিয়ে গেল", বললেন সাগরদ্বীপের বাসিন্দা বিকাশ দাস।
সাগরদ্বীপের মহিষামারির শঙ্কর বেরা বলেন, "প্রত্যেকটা রাত, যখন আমার পরিবারের বাকিরা ঘুমায়, আমি জেগে থাকি। ঘড়ির টিকটিক আওয়াজটা যেন আমার বুকে বাজে। যখন জোয়ার আসে রাতের দিকে আমি ভয়ে ঘর ছেড়ে বাঁধের ওপর উঠে এসে দেখি বাঁধটা ঠিক আছে কিনা, এ এক অদ্ভুত যন্ত্রণা।"

জলের ধাক্কা স্মৃতিতে অদ্ভুতভাবে থেকে যায় যন্ত্রণা হয়ে | ছবি: শুভজিৎ নস্কর
সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ভূমিক্ষয়ের সাথে অভিবাসন ও খাদ্য নিরপত্তাহীনতার একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। বাসন্তী দেবী কলেজের অধ্যাপিকা ড: ইন্দ্রিলা গুহ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ড: চন্দন রায় তাদের গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন যে ঘূর্ণিঝড়ের পর খাদ্য নিরাপত্তা একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, অভিবাসনের হারও সেসময় অনেকাংশে বেড়ে যায়। বিংশ শতাব্দীতে সুন্দরবনে অভিবাসনের মূল কারণ হল জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে কৃষিজমি হারানো। উল্লেখ্য, যখন অধিকাংশ অভিবাসী পুরুষ হয়, তখন মহিলারা ঘরে থেকে বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে বাধ্য হন, বৃহদাংশে মীন ধরা।
ঘোড়ামারা দ্বীপের বসুমতি মাইতি তার শ্বশুর বদল মাইতির প্রসঙ্গে বলেন, বন্যার সময় ঘরের জল ঢুকে ভাসিয়ে দিয়েছিল। সেই জলের গতি দেখে আমার শ্বশুর মানসিকভাবে কেমন একটা হয়ে যান, যা আজও ঠিক হয়নি। তিনি আমাকে কিছু বলেন এবং পরে তা ভুলে যান। আমি এই পরিবর্তনটি ঘূর্ণিঝড় আয়লা (২০০৯)-এর পর থেকে লক্ষ্য করছি।"
বসুমতি আরও বলেন, "বহুদিন ধরে ঘরে জমে থাকা জলের যে গন্ধ তা ভীষণ অস্বস্তিকর। সেই গন্ধ নাকে এলে বারবার সেই সব দুর্যোগের স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে, অসহ্যকর হয়ে ওঠে সেসব মুহূর্ত। আজও মাঝেমধ্যে মনে হয় নাকের সামনে সেই গন্ধ ভাসছে"।

সুন্দরবনের ফেরিঘাট | ছবি: শুভজিৎ নস্কর
সুন্দরবনের বাসিন্দাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে চলেছেন Sound of Silence নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংস্থার কর্মীরা মাসিকভাবে গ্রামসভা আয়োজন করেন, যেখানে গ্রামবাসীদের নিজেদের কথা লিখতে বলা হয়। এসব লিখিত বক্তব্যগুলি চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসা প্রদানের সেরকম পরিকাঠামো নেই। মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা করাতে গেলেও তাদের যেতে হয় দূরবর্তী কোনো অঞ্চলে। ঘোড়ামারা দ্বীপের কমিউনিটি হেলথ অফিসার (CHO) প্রীতিকণা হালদার বলেন, "অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষজন দূরত্বের কারণে নিয়মিত চিকিৎসার সুবিধা নিতে যেতে পারেন না ওতো দূরে"
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (ডেপুটি-২) ডঃ আত্রেয়ী চক্রবর্তীর মতে, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিষেবা এখনও যথেষ্ট নয়। তিনি জানান, আশা কর্মীরা তাদের নির্দিষ্ট কাজের জন্য Incentive পান। কোন কোন কাজের জন্য তারা এই Incentive পাবেন তার একটি তালিকা নির্দিষ্ট করা আছে। মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো বিষয় এই তালিকায় পড়ে না।
ড: চক্রবর্তী আরও বলেন যে, রিসর্ট বানানোর জন্য সুন্দরবনে প্রচুর ম্যানগ্রোভ কেটে ফেলা হয়। পর্যটকের আগমন বাড়ছে সেসব রিসর্টে। কিন্তু এই কাণ্ডকারখানা সুন্দরবনকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। প্রায় প্রত্যেক মে মাসেই সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় লেগেই আছে, তাদের মধ্যে কিছু কিছু বিধ্বংসী হয়ে যায়। ড: চক্রবর্তীর কথায় যথেষ্ট স্পষ্টতার সুর রয়েছে যে এই বিপর্যয়ের অনেকটাই আসলে মানুষের হাতে তৈরি। মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্যই পরিবেশের সাম্যতা বিঘ্নিত হচ্ছে, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা। অবশ্য এই কথা আমরা প্রথম শুনছি এমন না, এ কথা এখন বহু আলোচ্য বিষয়।
সুন্দরবনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফল শুধুমাত্র কৃষিকাজ বিপন্ন হওয়া কিংবা বাসস্থান হারিয়ে যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই- এটি মানুষের মনের মধ্যেও অদ্ভুতভাবে বাস করে। দীর্ঘ মেয়াদী ভাবে থেকে যায়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে সোলাস্ট্যালজিয়া— এক অসহনীয় উদ্বেগ, যা তখন জন্মায় যখন নিজের বসবাসের পরিবেশ এতটাই পরিবর্তিত হয় যে নিজের বাসস্থানকে আর 'ঘর' বলে মনে হয় না। অর্থাৎ ক্ষতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, তা চূড়ান্ত ভাবে মানসিকও বটে।

জলই যখন সোলাস্ট্যালজিয়ার মূল কারণ । প্রতীকী ছবি | ছবি: শুভজিত নস্কর
গবেষকরা বলছেন সুন্দরবনের নানান পরিস্থিতিকে নতুন পরিবেশগত মানবিকতা'র দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখতে হবে। নৈতিকতার সাথে দেখতে হবে। একথাও সত্য, সেই ঔপনিবেশিক কাল থেকে এখনও পর্যন্ত সুন্দরবনের শাসনব্যবস্থার পরিকাঠামোতে অজস্র ফাঁকফোঁকড় থেকে গেছে। এই ফাঁকগুলো পূরণ করতে হবে গবেষণা এবং বাস্তব জীবনের সংমিশ্রণ দ্বারা। ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কয়েকজন জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হিসেবে তাদের না দেখে মানবিকতার লেন্স দিয়ে সুন্দরবনকে দেখতে হবে।
প্রতিবেদনটি ইন্টারনিউজের আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।

Whatsapp
