অনন্ত আম্বানির প্রাক বিবাহে অর্থের অশ্লীল প্রদর্শন! আম্বানিরা কি দেশের নতুন মুঘল?

Anant Ambani-Radhika Merchant Pre-Wedding: দেশের এই ধনকুবেররাই, অর্থাৎ আদানি-আম্বানিরাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছে বিজেপিকে।

মুকেশ আম্বানির পুত্রের বিয়ে। বিয়ের অবশ্য ঢের দেরি, সেই জুলাই মাসে। তবে প্রি-ওয়েডিং চলল। প্রি-ওয়েডিং দেখল ভারতবর্ষ। প্রি-ওয়েডিং যদি এমন হয়, ওয়েডিং কেমন হতে পারে সেই নিয়ে কল্পনাতেও বিভোর রইল দেশ, টানা তিন দিন। মুকেশ আম্বানি এশিয়ার ধনীতম ব্যক্তি। হলিউড-বলিউড, দেশনেতা, রাষ্ট্র নেতা প্রায় সবই পকেটে তাঁর। খোদ মার্ক জুকারবার্গেরও আম্বানির পুত্রের ঘড়ি দেখে চোয়াল ঝুলে যায়। সূত্রের খবর, অনন্ত আম্বানি এবং রাধিকা মার্চেন্টের এই প্রাক-বিবাহ উৎসবে খরচ হয়েছে প্রায় ১২৫৯ কোটি টাকা! দেশ-বিদেশ মিলে অতিথি ছিল ১২০০ জন। মুকেশ আম্বানির মোট সম্পত্তির পরিমাণ এই মুহূর্তে প্রায় ৯.৭ লক্ষ কোটি টাকা। সেই রাজকোষ থেকে কিছু খুচরোমাত্র খরচ করেছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, বিয়ের ক্যাটারিংয়েই খরচ হয়েছে প্রায় ২১০ কোটি টাকা। রিহানার পারফর্ম্যান্স বাবদ পারিশ্রমিক প্রায় ৬৬-৭৪ কোটি টাকা। ছেলের প্রাক-বিবাহের উত্সবে মেয়ে ঈশা আম্বানি এবং আনন্দ পিরামলের বিয়ের চেয়েও বেশি খরচা করেছেন আম্বানিরা। ২০১৮ সালে মেয়ের বিয়ের খরচ ছিল প্রায় ৮২৮ কোটি টাকা। সেবার পপ আইকন বিয়ন্সের জন্য খরচ হয়েছিল প্রায় ৩৩-৪৯ কোটি টাকা।

জামনগরে অনন্ত আম্বানিদের আদি বাড়ি। সেখানে তিন দিনের প্রাক বিবাহ উৎসবে আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী রিহানা, সুইডেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্ডট, কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার, গুগলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড হ্যারিসন, বলিভিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জর্জ কুইরোগা, অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চেয়ারপার্সন ক্লাউস শোয়াব, মেটা সিইও মার্ক জুকারবার্গ এবং তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান, মাইক্রোসফ্টের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। এই জামনগরেই জামনগরে রিলায়েন্সের প্রধান তেল শোধনাগার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের জন্য ভারতীয় লোকেশন বাছার কথা বলেছেন বহুবার। আম্বানিরা মোদির ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে দেখিয়ে দিয়েছেন প্রি-ওয়েডিং কাকে বলে!

আরও পড়ুন-ভোর পাঁচটায় ওঠা থেকে রাতের ঘুম, যে রুটিনে লুকিয়ে মুকেশ আম্বানির সাফল্যের রহস্য

এই প্রাক-বিবাহের জন্য গুজরাতের জামনগর বিমানবন্দরকে রাতারাতি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করে দেওয়া হয়েছে ১০ দিনের জন্য। অথচ জামনগর বিমানবন্দর কিন্তু ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটি, এটি একটি প্রতিরক্ষা বিমানবন্দর। এখানে চাইলে ব্যক্তিগত প্লেন, বিয়ের গাড়ি ঢুকতে পারে না। অথচ, বিয়ের অতিথিদের যাতে অসুবিধা না হয় তাই যাত্রী টার্মিনালের আকার দ্বিগুণ করা হয়েছে। সবটাই ভারতীয় জনগণের করের টাকায়। জামনগর বিমানবন্দর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি হওয়াতে প্রতিরক্ষার দিক দিয়েও যথেষ্ট সংবেদনশীল। কিন্তু আম্বানিদের বিয়ের জন্য অতিথিদের ব্যক্তিগত জেট ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রযুক্তিগত এলাকায় ঘোরাঘুরি করেছে। যথেচ্ছ চাটার্ড প্লেন, ব্যক্তিগত বিমান নেমেছে-উড়েছে, লোকজন ঘোরাঘুরি করেছে হাই সিকিউরিটি জোনে! দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে এত বড় আপোষ কেন্দ্র সরকার করেছে কেবল আম্বানিদের জন্য? কেন?

দেশের এই ধনকুবেররাই, অর্থাৎ আদানি-আম্বানিরাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছে বিজেপিকে। মোদির মেয়াদে কর্পোরেট অনুদানের ৭০% এরও বেশি পেয়েছে কেবল বিজেপি। মনে রাখতে হবে, এই মুকেশ আম্বানি কিন্তু মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম চার বছরে দ্বিগুণ ধনী হয়েছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয় ৫৫ বিলিয়ন ডলার।

মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স গ্রুপের মালিকানাধীন জিও প্ল্যাটফর্মের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান NEWJ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়াতে বিজেপির এজেন্ডা প্রচারে ব্যাপক সাহায্য করেছিল। আম্বানির NEWJ ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপনের জায়গা কিনে মোদির নির্বাচনী এজেন্ডা ভিডিও প্রচার করতে থাকে।

মোদিকে যেমন আর্থিক সাহায্য করেন আম্বানি, মোদিও ভরিয়ে দেন তাঁকে! ২০১৬ সালে আম্বানির রিলায়েন্স জিও বাজারে আসে। জিও ব্র্যান্ডের অনুমোদন করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদি। জিও লোগোর রঙের সঙ্গে ম্যাচিং পোশাক পরে বিজ্ঞাপনে দেখা যেত তাঁকে।

আরও পড়ুন-কী নেই অ্যান্টিলিয়ার অন্দরে! মুকেশ আম্বানির রাজপ্রাসাদ কেন আজও কৌতূহলের

সরকারি সংস্থাদের বঞ্চিত করে রাফাল চুক্তিতে নিয়ে আসা হয়েছিল মুকেশ আম্বানির দেউলিয়া ভাই অনিল আম্বানিকে। রাফাল চুক্তি ছাড়াও মোদি সুইডেন, রাশিয়া, ইজরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশে অনিল আম্বানির জন্য কমপক্ষে পাঁচটি চুক্তির ব্যবস্থা করেন।

অথচ এই দেশেই কেভিডের সময় হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। ক্লান্ত অবসন্ন দেহে রেলপথেই শুয়ে পড়েছেন তারা, দেহের উপর দিয়ে চলে গেছে ট্রেন। রক্তমাখা রুটির টুকরো কি ভুলে গেল দেশ? ভুলে গেল সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়েও বাড়ি ফিরতে না পারা হাউহাউ করে কেঁদে ওঠা বাবার সেই ছবি? আম জনতার বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা সরকার না করতে পারলেও আম্বানিদের প্রাক বিয়েতে রাতারাতি বিমানবন্দরের ভোল বদলে দিয়েছে।

যে দেশে ৯০ শতাংশ মানুষ বার্ষিক ২৫ হাজার টাকার নীচে রোজগার করে আজও, যে দেশে ২২ কোটি মানুষ অপুষ্টির শিকার, যে দেশে ৫৩ শতাংশ মহিলা রক্তাল্পতায় ভোগেন, ৮০ কোটি মানুষ আজও বিনামূল্যে রেশনের চাল নিতে বাধ্য হয়, সেই দেশে অর্থের ও ক্ষমতার এই প্রদর্শন লজ্জাজনক নয়?

More Articles