রামকৃষ্ণ মিশন সত্যিই বিজেপির আজ্ঞাবহ? সাধু বিতর্কে ভোট হারাবেন মমতা?

Mamata Banerjee Ramkrishna Mission: রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আক্রমণ করার পরে বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী স্বাভাবিকভাবেই হাজির করেছেন ইমাম প্রসঙ্গ।

রামকৃষ্ণ মিশন বা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সঙ্গে গেরুয়া যোগের ইঙ্গিত নিয়ে বহুকাল থেকেই চর্চা হয়েছে। বিশেষত নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর, সাধুদের সরাসরি রাজনৈতিক যোগ নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। লোকসভা নির্বাচনের আবহে ফের রামকৃষ্ণ মিশন প্রসঙ্গই কি মোড় ঘোরাতে চলেছে এ রাজ্যের সংসদীয় রাজনীতির? রামকৃষ্ণ মিশনের সাধুদের নিয়ে মমতা-মোদির টানাপড়েনে ভোটবাক্সে কার লাভ কার ক্ষতি? মমতা বলেছেন, রামকৃষ্ণ মিশনের সাধুদের কেউ কেউ তৃণমূলের এজেন্ট বসতে দেননি বুথে। সাধুদের নিয়ে কথা উঠতেই পাল্টা ইমামদের নিয়ে রাজনৈতিক সমরে হাজির হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বলছেন, সব মহারাজকে উদ্দেশ্য করে তিনি একথা বলেননি। তিনি নির্দিষ্টভাবে একজনের কথা বলতে চেয়েছিলেন, কার্তিক মহারাজ। বলছেন, “যে লোকটা বলে, তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্ট বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। তার কারণ, সে ডাইরেক্ট পলিটিক্স করে দেশটার সর্বনাশ করছে।’’ মমতা মারাত্মক অভিযোগ করেছেন যে মুর্শিদাবাদে যে দাঙ্গা হয়েছিল ভোটের আগে, তার নেপথ্যে হাত রয়েছে কার্তিক মহারাজের।

আরও পড়ুন- ভোটের পরে কী হাল হবে স্বৈরাচারী মোদির? ভবিষ্যদ্বাণী পরাকলা প্রভাকরের

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বলছেন, রামকৃষ্ণ মিশনের সাধুদের একাংশ ‘দিল্লির আজ্ঞাবহ’ হিসেবে কাজ করছেন। মমতার অভিযোগ, ‘‘দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে। বলে, বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলো। কেন করবে সাধু-সন্তেরা এই কাজ? রামকৃষ্ণ মিশনকে সবাই সম্মান করে... তাদের আমি ভালবাসতে পারি। আমি দীক্ষা নিতে পারি। কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশন ভোট দেয় না কোনও দিনও। এটা আমি জানি। তা হলে আমি অন্যকে কেন ভোট দিতে বলব?’’

এই প্রসঙ্গে বারেবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্বামীজির জন্য, মিশনের জন্য তিনি ঠিক কী কী করেছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন, স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি রক্ষা করেছেন তিনি। তিনি কিনে নিয়েছিলেন বিবেকানন্দের বাড়ি, নাহলে কলকাতায় স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভিটে মাফিয়াদের হাত থেকে বাঁচানো যেত না বলে দাবি তাঁর। ভগিনী নিবেদিতার বাড়িও তিনিই কিনে বাঁচিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মমতা। মনে করিয়ে দিয়েছেন দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের স্কাইওয়াক কে তৈরি করে দিয়েছে? বেলুড় মঠের এত জেটি কে করে তৈরি দিয়েছে?

আরও পড়ুন- অধীরের লড়াইয়ে জল ঢালছে কংগ্রেস হাইকমান্ডই

রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আক্রমণ করার পরে বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী স্বাভাবিকভাবেই হাজির করেছেন ইমাম প্রসঙ্গ। শুভেন্দু বলেন, ‘‘ইমামেরা আবেদন করতে পারেন আর কার্তিক মহারাজ প্রতিবাদ করলে অসুবিধা?” এই মিশন বিতর্কের জেরে ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি শুরু হয়েছে। রবিবার গভীর রাতে জলাপাইগুড়িতে রামকৃষ্ণ মিশনের একটি ভবনে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। ঝাড়গ্রামে ভোটপ্রচারে গিয়ে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিশানা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রামকষ্ণ মিশন, ইসকন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ বাংলার আধ্যাত্মিক পরিচয়। এখন তো হিন্দু সন্তদের হুমকি দিচ্ছে খোদ এখানকার মুখ্যমন্ত্রী। এর ফলে তৃণমূলের গুন্ডাদের সাহস বেড়ে গিয়েছে। কাল রাতে জলপাইগুড়িতে রামকৃষ্ণ মিশনে আশ্রমে হামলা হয়েছে। মিশনের কর্মীদের মারধর করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বাংলায় রামকৃষ্ণ মিশনকে হুমকি দেওয়া হবে, ভাবতে পারে না দেশবাসী। রামকৃষ্ণ মিশনকে অপমান মানে দেশের সাধু ও সন্তদের অপমান। এই অন্যায় সহ্য করবে না বাংলা।”

প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন, ‘‘ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ, স্বামী বিবেকানন্দ এবং স্বামী প্রণবানন্দের মতো আধ্যাত্মিক গুরুদের অপমান এই দেশ কখনও সহ্য করবে না।’’ শুধু মোদি শুভেন্দু নন। মমতার এই মন্তব্যের জেরে ভারত সেবাশ্রম সংঘ ও রামকৃষ্ণ মিশনের বহু সদস্যই ক্ষুব্ধ। দুর্গাপুরের ভারত সেবাশ্রম সংঘ মুখ্যমন্ত্রীকে অসংলগ্ন বলেও মনে করছেন। এবার প্রশ্ন, মমতার অভিযোগ কি সম্পূর্ণ মিথ্যা? রামকৃষ্ণ মিশন বা সেবাশ্রমের আড়ালে কি হিন্দুত্বের প্রচার করে না বিজেপি বা আরএসএস? অন্যদিকে এই রাজ্যে মমতা মিশন বা সংঘকে 'অপমান' করে কি বেশ কিছু ভোট হাতছাড়া করে ফেলছেন না? এই প্রশ্নেই বিভক্ত রাজনৈতিক মহলও।

More Articles