"পিসি, ধর্ষণ কী?" গণধর্ষিতা হওয়ার ২ দিন আগে জিজ্ঞেস করেছিল অসমের নাবালিকা
Assam Gang Rape: এই গণধর্ষণ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত তফাজুল ইসলাম পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেছে বলে অভিযোগ
২০২২ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রেকর্ড বলছে, প্রতি ১৬ মিনিটে ভারতবর্ষে একজন মহিলা ধর্ষিতা হন। অর্থাৎ, যখন আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে পথে নামছেন মেয়েরা, ক্ষুব্ধ মানুষ চিৎকার করে স্লোগান তুলছেন, ঠিক সেই মুহূর্তেও কোথাও না কোথাও, কেউ না কেউ ধর্ষিত হচ্ছেন। গত ২২ অগাস্ট আরেকটি মর্মান্তিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অসমের নগাঁও জেলায়। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নাবালিকা। সবচেয়ে আশ্চর্যের, সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, এই ঘটনার ঠিক ২ দিন আগেই নিজের পিসিকে এই মেয়েটি জিজ্ঞাসা করেছিল, ধর্ষণ মানে কী?
খবরের কাগজে দেশ জুড়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধে চলা বিক্ষোভের খবর চোখে পড়েছিল ওই নাবালিকার। পিসিকে আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের মর্মান্তিক হত্যা ও ধর্ষণের খবর পড়তে দেখে জিজ্ঞেস করেছিল সে, "পিসি, ধর্ষণ কী?” ঠিক দুই দিন পরেই যে নিজের বাড়ির সন্তানের সঙ্গে এমন ভয়ানক ঘটনা ঘটবে কল্পনাও করেননি তিনি। এই ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছেন ওই নাবালিকার পিসি। বলেছেন, "আমি কখনই ভাবতেও পারিনি, এখানে এত ভয়ঙ্কর কিছু ঘটবে। আমি ওকে রক্ষা করতে পারলাম না।"
আরও পড়ুন- লজ্জা! গুগলে, পর্ন সাইটে আরজি করের নির্যাতিতার ভিডিও খোঁজার হিড়িক…
১৪ বছরের এই স্বপ্নদর্শী বালিকা বড় হয়ে ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি) হওয়ার স্বপ্ন দেখত। গণধর্ষণের শিকার হয়ে যখন হাসপাতালে দিন কাটছে এই মেয়ের, সেখানে ডিএসপি দেখা করতে এসেছেন তাঁর সঙ্গে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে, সারা দেহজুড়ে যন্ত্রণা নিয়ে ডিএসপির সঙ্গে কথা বলেছে সেই মেয়ে, যন্ত্রণা সহ্য করেও হেসেছে।
গত ২২ অগাস্ট টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার সময় নগাঁওয়ের ধিং-এ নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে গণধর্ষণ করা হয় চোদ্দ বছরের এই মেয়েকে। মেয়েটি তার পিসি এবং দাদু-ঠাকুমার সঙ্গেই থাকত। সাধারণত পিসির সঙ্গে বা রিকশা ধরে টিউশন থেকে বাড়ি ফিরে আসত। ২২ অগাস্ট সাইকেলে টিউশনে গিয়েছিল এই নাবালিকা। সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ বাড়ি ফেরার সময় তিনজন লোক তার বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে একটি জঙ্গলের মধ্যে তাকে ধর্ষণ করে।
স্থানীয়রা মেয়েটিকে একটি জঙ্গলে অচেতন অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অসমে এই ঘটনার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ওই নাবালিকার জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে এবং অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে পথে নেমেছেন মানুষ।
পিসি জানিয়েছেন, মেয়েটির বাবা গুয়াহাটিতে আছেন। মেয়েকে মানুষ করার মতো আর্থিক সামর্থ না থাকায় তিনি কন্যাকে ধিং-এ পিসির সঙ্গে থাকতে পাঠিয়ে দেন। পিসি প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা উপার্জন করেন। তিনিই এই কন্যার শিক্ষা এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদার দায়িত্ব নিয়েছেন।
আরও পড়ুন- আরজি করে মাদক, যৌনচক্র, মানব অঙ্গ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ! কেন চুপ মুখ্যমন্ত্রী?
গণধর্ষণের শিকার ওই নাবালিকার বাবা বলছেন, "আমার মেয়েকে হাসপাতালে এমন অবস্থায় দেখতে হচ্ছে ভাবতে পারছি না। ও ভালো করে কথাও বলতে পারছে না।" বাবা বলেছেন, মেয়ে একবার সুস্থ হয়ে উঠলেই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তাকে ধিং থেকে সরিয়ে নেবেন তিনি।
উল্লেখ্য, এই গণধর্ষণ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত তফাজুল ইসলাম পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেছে বলে অভিযোগ। আরও তদন্ত চলছে। অন্য অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই ঘটনার নিন্দা করে জানিয়েছেন, একজন নাবালিকার সঙ্গে ধিং-এ যে ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। নাগরিকদের সম্মিলিত বিবেকে আঘাত করেছে এই ঘটনা। কাউকে ছাড়া হবে না, অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া বিচার হবে। যেমনটা সকল প্রশাসনিক প্রধান বলে থাকেন, এ তার অতিরিক্ত কিছু নয়। ধর্ষণ তবু কমে না। সারা দেশের প্রতিবাদে ধর্ষকদের কিছুই যায় আসে না, তারই প্রমাণ অসমের এই ঘটনা।