‘অন্তত অন্ত্যেষ্টিতে আসবেন...!‘ এ কী বললেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে?

Lok Sabha Election 2024: খুব বেশিদিন হয়নি, কংগ্রেস সভাপতির পদ পেয়েছেন। তার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হয়েছেন তিনি ইন্ডিয়া জোটের তরফে। তবে বয়সের কারণে লোকসভা ভোটে তাঁকে প্রার্থী করেনি কংগ্রেস।

দেশ জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে লোকসভা ভোট। যে ভোটের আগে বিজেপিকে গদি থেকে টলাতে জোট গড়েছিল দেশের সবকটি অবিজেপি দল। তার মধ্যে যেমন ছিল কংগ্রেস, তেমনই ছিল তৃণমূল, সিপিআইএম থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যের ছোটবড় বিজেপি-বিরোধী দলগুলি। সেই ইন্ডিয়া জোটের তরফে প্রধানমন্ত্রীর মুখ করা হয়েছিল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে। ভোটের আগে ইন্ডিয়া জোট যতটা জোশের সঙ্গে ময়দানে নেমেছিল, কিছুদিন যেতে না যেতেই মতানৈক্য এমন চড়া হয়ে বসে, যে আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে একমত হতে পারেনি প্রায় কোনও দলই। ভোট যত কাছে আসতে থাকে, তত কমতে থাকে ইন্ডিয়া জোটে উদ্যম। আপাতত ইন্ডিয়া জোটকে পশ্চাতে রেখে লোকসভা ভোটের জন্য যে যার দলের জন্য প্রচারেই বেশি ব্যস্ত।

গত নভেম্বরে পাঁচ রাজ্যে যে বিধানসভা ভোট হয়েছিল, তাতে বাকি পাঁচটি রাজ্যে হারলেও কর্ণাটকে ব্যাপক ভোটে জিতেছিল হাতফুল শিবির। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের মতো জেতা আসনও হাত ফস্কেছিল কংগ্রেসের। মুখ রেখেছিল শুধু কর্নাটক। লোকসভা ভোটের মুখে সেই কর্নাটকে যে বিশেষ নজর দেবে কংগ্রেস, তাতে আর অবাক কথা কী? এবার কর্ণাটকের কালবুর্গিতে প্রচারে গিয়ে বিশেষ আবেগপ্রবণ দেখালো কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে। এমনকী তুললেন নিজের মৃত্যুর কথাও। বললেন, কেউ ভোট দিক বা না দিক, তাঁরা যেন খাড়্গের শেষকৃত্যে যোগ দেন।

আরও পড়ুন: ‘৪০০ পার’ করতে বিজেপির নিশানা কোন ৬ টি রাজ্য?

কেন এ কথা বললেন ৮১ বছরের প্রবীণ এই কংগ্রেসনেতা। খুব বেশিদিন হয়নি, কংগ্রেস সভাপতির পদ পেয়েছেন। তার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হয়েছেন তিনি ইন্ডিয়া জোটের তরফে। তবে বয়সের কারণে লোকসভা ভোটে তাঁকে প্রার্থী করেনি কংগ্রেস। তবে নিজে প্রার্থী না হলেও তাঁর দলের প্রার্থীরা যাতে ভোটতরী পার হতে পারে, তার জন্য প্রায়শই প্রচারে দেখা যাচ্ছে প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতাকে। কোথাও তাস ইন্দিরা-সনিয়ার ত্যাগ, কোথায় স্বাধীনতার সময়কার ইতিহাস তো কোথাও আবেগ, বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে গিয়ে বিভিন্ন কৌশল নিতে দেখা যাচ্ছে হাতশিবিরকে। আর কর্ণাটকরে কালবুর্গিতে এসে সেই আবেগ-তাসই খেললেন দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে।

খাড়্গে এদিন কালবুর্গিবাসীর উদ্দেশে বলেন, তারা যদি কংগ্রেসপ্রার্থীকে ভোট দিতে না-ও চান, তাহলেও যেন কংগ্রেসের উন্নয়নমূলক কাজগুলির কথা মনে করেন। এবং তার জন্য তাঁরা যেন প্রবীণ এই নেতার অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ায় অন্তত যোগ দেন। খাড়্গের দাবি, কংগ্রেস ভোট পাক বা না- পাক, আপনি অন্তত আমাদের ভালো কাজের কথা মনে রেখে শেষকৃত্যে আসবেন। দাহ করলে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন, যদি কবর দেওয়া হয়, তাহলে এক মুঠো মাটি ছড়িয়ে দিন। একই সঙ্গে খাড়্গে এ-ও বলেন, তার দল যদি এই কর্নাটকে ভোট না পায়, তাহলে বুঝতে হবে, তাঁর জন্য এই কালবুর্গির মনে কোনও জায়গা নেই।

'At least come for my funeral...', Congress chief Mallikarjun Kharge's emotional pitch at rally on home turf

আদতে কর্ণাটকের ভূমিপুত্র মল্লিকার্জুন খাড়্গে। বিদর জেলার ভালকি তালুকে তাঁর জন্ম। সেখানেই পড়াশোনা এবং রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া। ১৯৭২ সালে কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম লড়াই তাঁর। গুরমিতকাল কেন্দ্র থেকে জিতেও যান খাড়্গে। সেখান থেকে রাজনীতির পথে হাঁটতে হাঁটতে ২০০৫ সালে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হওয়া। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি খাড়্গেকে। ২০২২ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। তাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি তো বটেই, একটা বড় অংশের পথচলা এই কর্ণাটক থেকেই। ফলে নিজের জায়গা নিয়ে আলাদা একটা আবেগ তো থাকারই কথা।

আর সেই আবেগেরই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে এবার প্রচারে গিয়ে। তার উপর কালবুর্গি থেকে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে খাড়্গের জামাই রাধাকৃষ্ণ দোদ্দামনিকে। তাঁর বিপরীতে বিজেপির প্রার্থী সেখানকার বিধায়ক উমেশ যাদব। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, কর্ণাটক কংগ্রেসের ক্ষমতায় থাকলেও ওই কালবুর্গি এলাকার ক্ষমতা অনেকটাই বিজেপির হাতে। ফলে সেখানে যে রাধাকৃষ্ণের লড়াই বেশ কঠিন হতে চলেছে, তা ভালোই বুঝতে পারছেন দুদে রাজনীতিবিদ খাড়্গে। ফলে প্রমাদ গুনে আগে থেকেই আবেগের তাসটি খেলে রাখলেন সেখানে কংগ্রেস সভাপতি। তাঁর বক্তব্য, "বাসিন্দারা যদি কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট না দেন, তাহলে বুঝতে হবে আমার এই মাটিতে কোনও জায়গা নেই। আমিই ব্যর্থ মানুষের মন জিততে।"

আরও পড়ুন: মোদির ‘মুসলিম’ বনাম ইন্দিরার ‘মঙ্গলসূত্র’: সারা ভারত কাঁপছে যে বিতর্কে

একই সঙ্গে বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ জানান, রাজনীতির জন্যই তাঁর জন্ম। এই রাজনীতি বাদ দিয়ে না তিনি কিছু বোঝেন, না কিছু দেখেন। আরএসএস ও বিজেপির আদর্শের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই চলবে তাঁর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। রাজনীতির ময়দান থেকে তাঁর অবসর সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দেন খাড়্গে। কর্ণাটকের মাটিতে জয় নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী কংগ্রেস। অন্তত বিধানসভা ভোটের ফল তো সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। আর সেই মতোই ভোটের আগে গুটিও সাজিয়েছে কংগ্রেস। এবার খাড়্গের এই আবেগ-তাসে সত্যিই মজবে কালবুর্গি না পদ্মেই তাঁদের মজবে মন, তা অবশ্য বোঝা যাবে ভোটের ফলাফল হাতে এলে।

More Articles