মোবাইল জ্বেলে প্রসব আজও! যোগীর সব গ্রামে বিদ্যুতের প্রতিশ্রুতির আসল চিত্র এটাই?
UP Electricity Supply: বালিয়ার বেরুয়ারবাড়ি ব্লকের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে মোবাইল ফোনের টর্চলাইট দিয়ে সন্তান প্রসব করানোর এই ঘটনা ভারতে নতুন নয়।
প্রসব যন্ত্রণা তুঙ্গে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র অবধিও পৌঁছে গেছেন। অথচ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুৎ নেই। এদিকে, বাড়ছে প্রসব বেদনা। তাই স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে সেই আলোতে প্রসব করালেন গর্ভবতীর। একজন নয়, দু'জন নয়। চার জন প্রসূতির! রাজ্যের নাম উত্তরপ্রদেশ, জেলা বালিয়া। বালিয়ার বেরুয়ারবাড়ি ব্লকের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে মোবাইল ফোনের টর্চলাইট দিয়ে সন্তান প্রসব করানোর এই ঘটনা ভারতে নতুন নয়। হামেশাই, নানা রাজ্য থেকেই বেশ কিছু এমন ঘটনা খবরে উঠে আসে। কিন্তু এই রাজ্য খোদ যোগী আদিত্যনাথের। আর আদিত্যনাথ নিজে দাবি করেছিলেন, ২০২৪ সালে যে তাঁর রাজ্যে কক্ষনও বিদ্যুৎ পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটে না।
জানা গিয়েছে, ট্রান্সফর্মারের সমস্যার কারণে বালিয়ার ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বালিয়ার প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ সঞ্জীব বর্মন বলেছেন ঘটনাটি জানার পরে তিনি বেরুয়ারবাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। যখন জানা যায় যে হাসপাতালের ট্রান্সফর্মারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তখন তা বদলে দেওয়া হয়েছিল এবং জেনারেটরটিও কার্যকরী অবস্থাতেই ছিল। তারপরেও ফোনের টর্চলাইটের আলোয় যে চারটি প্রসবের অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন আসার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বেরুয়ারবাড়ির স্থানীয়দের দাবি, জেলা সদর দফতর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে স্থাপিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ট্রান্সফর্মারটি খারাপ ছিল। বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তির ব্যবস্থা থাকলেও তা চালু করা যায়নি। ফলস্বরূপ সন্ধ্যার দিকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মোবাইল ফোনের আলো ব্যবহার করেই চিকিৎসক এবং অন্য কর্মীদের কাজ করতে হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত কয়েকদিনে এই ধরনের চারটি ঘটনা ঘটেছে। গত ২৬ মে এই পরিস্থিতিতে সন্তান প্রসব করেন রাজপুরের বাসিন্দা নীতু দেবী, আছুহির বাসিন্দা মঞ্জু দেবী, আদারের বাসিন্দা পিঙ্কি দেবী এবং আপয়ালের বাসিন্দা রাজিয়া খাতুন।
আরও পড়ুন- লাগাম নেই খোদ যোগী আদিত্যনাথের! কেন বিজেপি নেতারাই ফুঁসছেন পুলিশের বিরুদ্ধে?
অনেক রোগীর পরিচারিকারাই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের জন্য খাবার বা পানীয়ের মতো সাধারণ সুযোগ-সুবিধা না থাকারও অভিযোগ করেছেন। আশেপাশের ২৬টি গ্রামের ৭০,০০০ এরও বেশি মানুষ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই নির্ভর করেন। অথচ সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুতের মতো জরুরি পরিষেবায় এমন গাফিলতি! তাহলে যোগী যে দাবি করেছিলেন, তা মোটেও সত্য নয়?
ঠিক এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ২৯ মে বিহারের আরাহ-তে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী আর কে সিংয়ের সমর্থনে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, উত্তরপ্রদেশের ১.২ লক্ষ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে এবং ১.৫৩ কোটি দরিদ্র পরিবারে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ এখন ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে, বলে দাবি করেছিলেন যোগী।
বাস্তবে দেখা গেছে, উত্তরপ্রদেশের গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা এখনও চরম বিদ্যুৎ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। বহু জায়গাতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলে। মনে রাখতে হবে, এই উত্তরপ্রদেশেই আছে চান্দৌলি জেলা, সেখানকার ইটাওয়া গ্রামে স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরেও বিদ্যুৎ সংযোগ আসেনি।
28th April 2018 will be remembered as a historic day in the development journey of India. Yesterday, we fulfilled a commitment due to which the lives of several Indians will be transformed forever! I am delighted that every single village of India now has access to electricity.
— Narendra Modi (@narendramodi) April 29, 2018
ইটাওয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। রাজধানী লখনউ থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির, মূলত রাজভর সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তারপরেও, ২০২৩ সালের ২৯ এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি X-এ পোস্ট করেছিলেন যে ভারতের প্রতিটি গ্রামেই বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে। ভুয়ো দাবির ক্ষেত্রে তাহলে যাহাই যোগী, তাহাই মোদি?