হত্যায় অভিযুক্ত! তাও কীভাবে বাংলাদেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পালালেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি?
Bangladesh Ex President Abdul Hamid: কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ৮১ বছর বয়সি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ হাসিনার সঙ্গেই সহ-অভিযুক্ত।
ভোর তিনটে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানে উঠে বসলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদ। পরনে একেবারে সাধারণ পোশাক। দেশ ছেড়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি চলে গেলেন থাইল্যান্ডে। ঘুম ভেঙে উঠে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানতে পারেন, ততক্ষণে নাগালের বাইরে আবদুল হামিদ। তড়িঘড়ি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত ও বদলি করে দিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আবদুল হামিদকে দেশে ধরে রাখতে পারল না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালী সরকার। ২০২৪ সালের শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থার জন্য যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হামিদ।
আবদুল হামিদ দুই মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন - ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। ২০২৪ সালে আন্দোলনের সময় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অজস্র মামলার মধ্যে একটি হত্যা মামলায় তিনি সহ-অভিযুক্ত। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, হাসিনা বিরোধী অভ্যুত্থানের বিক্ষোভকারীদের নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল আওয়ামী সরকার।
ঢাকা ট্রিবিউনের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ৮১ বছর বয়সি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ হাসিনার সঙ্গেই সহ-অভিযুক্ত। এই মামলায় প্রাক্তন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সহ-অভিযুক্ত।
আরও পড়ুন-ভোট হলে ক্ষমতায় আসবে কে? যা উঠে এল বাংলাদেশের সমীক্ষায়
ইউনাইটেড নিউজ অফ বাংলাদেশের খবর অনুযায়ী, মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের থাইল্যান্ডে যাওয়ার ঘটনার তদন্তের জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরারের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। কীভাবে ঢাকা বিমানবন্দরে এত লোকজন, এত নিরাপত্তাকে ফাঁকি দিয়ে হামিদ দেশ ছেড়ে চলে গেলেন? প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু পুলিশ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছে, কিছুজনকে বদলি করেছে। আবদুল হামিদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি চিকিৎসার জন্য তাঁর ভাই এবং শ্যালকের সঙ্গে বিদেশে চলে গেছেন। যদিও রাজনৈতিক বিরোধীদের বক্তব্য, খুনের মামলার বিচার থেকে বাঁচতেই থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন শুরু করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ আবদুল হামিদকে দেশ ছেড়ে পালাতে সাহায্য করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ হান্নান মাসুদ দাবি করেছেন, ক্ষমতাসীনদের, বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর অনুমতিতেই হামিদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে, আবদুল হামিদ হাসিনার আওয়ামী লীগের সাংসদ ছিলেন। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন - ছাত্রলীগের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে।
গত ফেব্রুয়ারি জুড়ে বাংলাদেশে চলে বুলডোজার কর্মসূচি। অভিযোগ, মৌলবাদী এবং ইসলামিক উগ্রপন্থীরা বাংলাদেশের বহু বিরোধী নেতার বাড়ি ভেঙে ফেলে। এর মধ্যে আবদুল হামিদের বাড়িও ছিল। ওই বিক্ষোভেই শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি তথা জাদুঘরটিও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন-আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে সতর্ক! বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী বলছেন অমর্ত্য সেন?
গত সপ্তাহেই মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে। সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে হাসিনার আওয়ামী লীগকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে যে আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে, যার ফলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না আওয়ামী লীগ। তারপরেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগ করলেন। হাসিনা এবং আরও বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা আগেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হামিদের থাইল্যান্ডে চলে যাওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, তাহলে নিরাপত্তা কোথায়? প্রশাসনের অন্দরে হাসিনাপন্থীরা আছেন বলেই কি ফাঁকি দিয়ে দেশ থেকে চলে যাওয়া এত সহজ? লুঙ্গি পরে রাতের অন্ধকারে হুইলচেয়ারে বিমানবন্দরে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আসছেন, তাঁর বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের মতো অভিযোগ আছে— অথচ তাঁকে কেউ বাধা দিল না বিমানবন্দরে?
“সংবিধানের ৩৪ এবং ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে, আদালতের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা না থাকলে কোনও বাংলাদেশি নাগরিককে ভ্রমণে বাধা দেওয়া যাবে না। আমরা তাঁকে নিষিদ্ধ করার কোনও নির্দেশ পাইনি। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও মামলায় তাঁকে আটক বা গ্রেফতার করার কোনও অনুরোধ বা আবেদন করা হয়নি,” বলেছেন ঢাকা বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা।