বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি! বাংলাদেশ আবার মৌলবাদীদের হাতেই?

Khaleda Zia Released: ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট জন্ম খালেদা জিয়ার। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানের হত্যার পর থেকে।

বাংলাদেশের এই ছাত্র আন্দোলন কি স্রেফ ছাত্র আন্দোলন রয়ে গেল? শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেন, দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গড়ার কথাও বলা হলো। তবে, হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আন্দোলনের যে রূপ দেখল বাংলাদেশ তাতে এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে ছাত্রদের আন্দোলনকে কি বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধার্থে ব্যবহার করল না? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগের সোমবার রাতেই সে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহাবুদ্দিন ঘোষণা করে দেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দেওয়া হবে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে এর আগে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। নিজের বাড়িতেই গৃহবন্দি ছিলেন তিনি। এবার পাকাপাকি মুক্তি। বিএনপি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী দল। হাসিনাকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে কি ক্রমেই অপ্রাসঙ্গিক করে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত?

বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দু’টি পৃথক মামলায় সাজা পেয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন তিনি। প্রায় দু’বছরের বেশি সময়কালই তিনি জেলে বন্দি ছিলেন। তাঁর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনার সরকারই এক অন্তর্বর্তী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাঁকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সেই মুক্তির মেয়াদ ছিল ছ’মাস।

আরও পড়ুন- অন্তর্বর্তী সরকার গড়ে আপাতত চলবে দেশ, জাতির উদ্দেশে ভাষণে যে বার্তা বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের

যদিও এরপর থেকে ছ’মাস পরপর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় হাসিনা সরকার। তবে জেল থেকে মুক্তি পেলেও অসুস্থ খালেদা জিয়া তাঁর গুলশনের বাড়িতেই গৃহবন্দি ছিলেন। যাতায়াতে বিধিনিষেধ ছিল। অসুস্থ হয়ে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খালেদা। ফলে এখন মুক্তি পেলেও, সক্রিয় রাজনীতিতে তিনি আদৌ ফিরতে পারবেন কিনা সংশয় রয়েছে।

সোমবার সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর প্রধান এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা এক বৈঠকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় আটক সকলকেই মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশের দুইবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৮। হাসিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী খালেদার বিরুদ্ধে একটি অনাথাশ্রমের ট্রাস্টের অনুদানের প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। তারপরেই ১৭ বছরের জেল হয় তাঁর। যদিও বিএনপি বলে এসেছে, এই মামলাগুলি সবই ছিল হাসিনার মনগড়া।বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার লক্ষ্যেই হাসিনা সরকার পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে।

হাসিনা আর খালেদার রাজনীতিতে আসা উত্তরাধিকারসূত্রেই। হাসিনা পেয়েছেন বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে এবং জিয়া স্বামী জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে। ১৯৭৫ সালে মুজিব হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ১৯৮১ সালে তাঁকেও হত্যা করা হয়। ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট জন্ম খালেদা জিয়ার। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানের হত্যার পর থেকে। জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। জিয়াউর রহমানই ১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ নিজেকে মধ্যপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শের দল হিসেবে তুলে ধরতে চায়। বিএনপির বিরুদ্ধে কিন্তু কট্টরপন্থী ও চরমপন্থীদের সমর্থনের অভিযোগ আছে।

আরও পড়ুন-ভাঙা হলো মুজিবের মূর্তিও! হাসিনার ইস্তফার পর ঠিক কী চলছে বাংলাদেশ জুড়ে?

খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টোর পরে মুসলিম-প্রধান একটি দেশটির নেতৃত্বে আসা দ্বিতীয় মহিলা ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে আবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হিংসার কারণে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের নির্বাচন বিলম্বিত হয়। যার ফলে সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা দখল করে। এই সময় খালেদা জিয়া ও তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় খালেদাকে ১৭ বছরের জন্য জেলে পাঠানো হয়।

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান হিংসা ও অস্থিরতার মধ্যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে আসেন এবং ঢাকা থেকে চলে আসেন ভারতে। বিক্ষোভকারীরা গণভবন দখল করে নেয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে গণভবনে মুজিবের মূর্তি ভাঙা হচ্ছে, চলছে অবাধ লুঠতরাজ। বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, এই আন্দোলন আর ছাত্রদের নেই। হাসিনার আকস্মিক পদত্যাগের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা করেন। সেনাবাহিনী জানায়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ছাত্রদের আন্দোলনকে যারা নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহারের দিকে নিয়ে গেলেন, তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রই ফেরাতে চান তো?

More Articles