বারবার মাজার ভাঙা, আক্রমণ বাউলকে! অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারল বাংলাদেশ?
Bangladesh extremism: বিশ্লেষকরা অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশ ক্রমেই মবের মুক্তমঞ্চে পরিণত হয়েছে। কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন বাংলাদেশ ইসলামফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দিকে এগচ্ছে।
বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে ভক্তদের উপর হামলার ঘটনা শুধু একটি স্থানীয় সংঘর্ষ নয়— এটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ধর্মীয় উত্তেজনা ও সাংস্কৃতিক পরিসরের সংকোচনের বড় লক্ষণ হয়ে উঠেছে। কেন বলা হচ্ছে এ কথা?
বাউল শিল্পী আবুল সরকারের বিরুদ্ধে ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগ উঠেছিল চলতি মাসের শুরুর দিকে। ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের ঘিওর উপজেলার জাবরা মেলায় তাঁর কিছু বক্তব্য নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়, পরে মামলা হয়। ১৯ নভেম্বর রাতে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর থেকেই বিষয়টি দু'পক্ষের বিরোধে রূপ নেয়। একদল তাঁর শাস্তি দাবি করছে, আরেক দল মুক্তির জন্য আন্দোলনে নেমেছে। রোববার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে মানিকগঞ্জে আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে ভক্তরা মানববন্ধন করছিলেন। ঠিক একই সময়ে 'আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা' নামে একটি গোষ্ঠী তাঁর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভে নামে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য উত্তেজনা বাড়তে থাকলে শাস্তি দাবি করা দলের কয়েকজন লাঠি, লোহার রড ও ইট নিয়ে ভক্তদের উপর হামলা চালায়। চারজন আহত হন— তিনজন বাউলভক্ত এবং অপরপক্ষের একজন।
‘তৌহিদী জনতা’ কারা? ‘তৌহিদী’ শব্দের উৎস আরবি ‘তাওহীদ’থেকে; অর্থ আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস। বাংলাদেশে এই নামটি কোনো নির্দিষ্ট নিবন্ধিত সংগঠনের নয়। বরং ধর্মীয় ইস্যুতে হঠাৎ সংগঠিত সাধারণ মুসলিম জনতা, বিভিন্ন মাদ্রাসা-মসজিদ কেন্দ্রিক গোষ্ঠী। ইসলামি আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনানুষ্ঠানিক দলসমূহ বিভিন্ন সময় নিজেদেরকে ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয় দেয়।
সমালোচকরা বলছেন, 'নিরাপত্তার' নামে আবুল সরকারকে আখড়া থেকে তুলে নেওয়া হলেও এর পরিণতি হয়েছে কারাবাসে। এ ঘটনায় বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কবি ও গবেষক ফরহাদ মজহার কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়ে বলেন,
“ইসলামের নামে যা করা হচ্ছে, এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। বাউল-মাজার-লোকসংস্কৃতির উপর পরিকল্পিত হামলা চলছে।”
ফরহাদ মজহার সম্প্রতি মানিকগঞ্জে বড় আকারে বাউল সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা করেন। সমাবেশে শিল্পীর স্ত্রী আলেয়া বেগমও অভিযোগ করেন, হামলাকারীরাই আবার থানায় গিয়ে উল্টো অভিযোগ করেছে, তাঁদের পরিবার পুলিশি হয়রানির মুখে পড়ছে। মানবাধিকারকর্মী, বাউলভক্ত, শিল্পী ও সাংবাদিকরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বাউল, মাজার ও লোকাচার চর্চাকারীদের উপর হামলা বেড়েছে, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেই।
আরও পড়ুন
ঠিক কোন কোন অভিযোগে শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ড পেলেন
বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এক বিবৃতিতে ঘটনাটিকে, “সাংস্কৃতিক চর্চার উপর পরিকল্পিত আঘাত” বলে উল্লেখ করে। সংগঠনের অভিযোগ, বাউল ও লোকসংস্কৃতির উপর হামলা, ভয়ভীতি ও হয়রানি সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগকে অস্ত্র বানিয়ে বাউলদের বিরুদ্ধে সংগঠিত নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। তারা বলে, লোকসংস্কৃতি ও বাউলদর্শন বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রাণ। এ ধারাকে সংকুচিত করা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ভয়ংকর। সংগঠনটি আবুল সরকারের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানায়।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের ১৫ মাসে বাংলাদেশের নানা জায়গায় মাজার ভাঙচুরের ঘটনা বেড়েছে, সংখ্যা শতাধিক বলে জানা যাচ্ছে। অনেক ঘটনায় সঠিক তদন্ত, বিচার বা প্রতিরোধ দেখা যায়নি। একই সময়ে সংখ্যালঘুও বারবার হামলার মুখে পড়েছে। সমালোচকদের মতে, সরকারের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আন্তর্জাতিক চাপের সুযোগে ইসলামোফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীগুলি আগের থেকেও বেশি শক্তি দেখাতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ কি তবে ‘তৌহিদী জনতার’ হাতে চলে গেল?
বাংলাদেশে বাউলদের লক্ষ্য করে ধারাবাহিক হামলার অভিযোগ
মানিকগঞ্জের সাম্প্রতিক হামলা দেখিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন দু’ধরনের শক্তির চাপে: এক, সাম্রাজ্যবাদী প্রভাব ও বৈদেশিক রাজনৈতিক চাপ; দুই ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর উত্থান। এই দুই প্রবল চাপের মাঝখানে রাষ্ট্র সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু-সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছে না। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বাউল, ফকির ও লোকসংস্কৃতি-চর্চাকারীদের উপর হামলা, মাজার ভাঙচুর এবং শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা-গ্রেফতারের মতো ঘটনা বেড়েছে।
মনে রাখতে হবে, অতীতেও নাসিরনগর বা রামুর হামলা, ২০২১ সালের শারদীয় দুর্গোৎসবের সহিংসতা, ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাউল শিল্পী ফয়সাল আহমেদ টুটুলকে ছুরি মেরে হত্যা কিংবা ২০১১ সালে রাজবাড়ীতে বাউল-সাধকদের আখড়ায় সংগঠিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। একইভাবে এখন আবুল সরকারের মুক্তি দাবি করা ও কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বলতেই হয় অন্তবর্তী সরকারের থেকে মানুষের প্রতাশ্যা ছিল ভিন্ন,কিন্তু সেই প্রতাশ্যা রাখতে পারেনি। প্রতিটি ঘটনা একই চিত্র দেখায়— ধর্মীয় উগ্রতায় রাষ্ট্রের দুর্বল প্রতিক্রিয়া, এবং নিরাপত্তাহীনতা। এগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছে, এই উগ্রতা এখন ভয়ংকরভাবে সংগঠিত।
এখানে বলা দরকার, একসময় একটি আইন আনা হয়েছিল ‘ন্যাশনাল হেরিটেজ প্রোটেকশন অ্যাক্ট’। এতে প্রস্তাব করা হয়েছিল বাউল-ফকিরদের আখড়া, মাজার ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনসমূহ যেন রক্ষা করা যায়। তবে আইন থাকলেই হবে না; রাষ্ট্রকে সক্রিয়ভাবে এসব সাংস্কৃতিক ধারার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জুলাইয়ের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল মুক্ত ও নির্ভয় একটি সমাজ গড়ে উঠবে। কিন্তু পরিস্থিতি বলছে, সেই সময়ের আন্দোলনে যে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার বার্তা ছিল, অভ্যুত্থানের পর তার সঙ্গে বাস্তবতার অমিল এখন স্পষ্ট। বরং বাউল-ফকিরদের প্রতি আক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে, যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
মাজার ভাঙা, কবর থেকে মৃতদেহ তোলা, বাউলদের গ্রেফতার— এসবকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছেন না সমালোচকরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বহুত্ববাদ, লোকাচার ও মানবতাবাদী ধারার উপর উদ্দেশ্য় নিয়ে সংগঠিত আঘাত হানা হচ্ছে। সমালোচকরা এও বলছেন, এই আক্রমণগুলো ঠেকাতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে উঠতে দেখা যায়নি; শুধু বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে, যারা লোকসংস্কৃতিকে ভালোবাসেন ও সংরক্ষণ করতে চান, তারা বাধ্য হয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন।
রিপোর্ট বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মাত্র সাত মাসে মব-ভায়োলেন্সের অন্তত ১১৪টি ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে ‘তৌহিদি জনতা’ কর্তৃক একের পর এক মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা। শুধুমাত্র মবকে দমন করা হবে বলাই যথেষ্ট নয়, এক-একটি ঘটনা ঘটে গেলে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা খুব জরুরি। ঘটনাগুলি শুধুই স্থানীয় সংঘর্ষ নয়, এটি একটি উপসর্গের পুনরাবৃত্তি। বিশ্লেষকরা অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশ ক্রমেই মবের মুক্তমঞ্চে পরিণত হয়েছে। কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন বাংলাদেশ ইসলামফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দিকে এগচ্ছে। বরংবার ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা এবং সাংস্কৃতিক পরিসর সংকোচন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তমনা মানুষের কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজের মতে,
"দেশে বর্তমানে কোনো ঘোষিত ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় নেই। গত পাঁচ দশকেও এমন কোনো দল রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল না। কেবল একসময় জামায়াতে ইসলামী বিএনপির জোটসঙ্গী হিসেবে ক্ষমতায় অংশ নিয়েছিল। এখন ক্ষমতায় রয়েছে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের গঠিত সরকার। তবু আশ্চর্যজনকভাবে মাঠে সবচেয়ে বেশি দাপট দেখাচ্ছে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীগুলো। যেখানে সুযোগ পাচ্ছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা চালানো। বাউল শিল্পীদের ধরে চুল কেটে দেওয়া, তাঁদের উপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর—এসব ঘটনা প্রায় নিয়মিত। বিভিন্ন মাজার ভাঙচুর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাধা— এ ধরনের ঘটনাও বাড়ছে। নারীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।"
নারী কমিশনের সদস্যদের অপমান করার ঘটনাকে তিনি এর বড় উদাহরণ হিসেবে দেখান। তাঁর মতে,
"এ পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই দেশে দক্ষিণপন্থার জমিন প্রস্তুত হচ্ছিল। কয়েক দশক ধরে নানা উপাদান মিলিয়ে এই পরিবেশ তৈরি হয়েছে।"
গণতান্ত্রিক শক্তির ব্যর্থতা, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা, ধারাবাহিক সরকারের কুশাসন, পপুলিস্ট বুদ্ধিজীবীদের ইন্ধন, দক্ষিণপন্থী ইউটিউবারদের লাগাতার উস্কানি, এবং প্রতিবেশী ভারতে বিজেপির উত্থান— এসব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন এক ধরনের দক্ষিণপন্থী ফ্যাসিবাদী সামাজিক পাটাতন তৈরি হয়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন। এই পাটাতনের উপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতে কে ক্ষমতায় আসবে তা আজ বলা কঠিন বলে মত তাঁর। তবে আলতাফ পারভেজ মনে করেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে তা অনুমান করা খুব দুরূহ নয়— এ প্রবণতা আরও গভীর সংকটের দিকেই ইঙ্গিত দেয়।
আবার লেখক ও গবেষক সহুল আহমদ মনে করেন, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহকে গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্নের মৃত্যু হিসেবে দেখা সঠিক হবে না। তাঁর মতে, গান বা ‘অনুভূতি’-তে আঘাতের অভিযোগে মামলা হওয়ার ঘটনা নতুন নয়; বরং এটি বিগত সরকারের আমল থেকে চলে আসা একটি ধারাবাহিকতা। হাসিনা সরকারের সময়েও বাউলদের উপর একই ধরনের মামলা, গ্রেফতার ও জেলখাটার ঘটনা ঘটেছে। তবে তাঁর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর যে পরিবর্তনটি সবচেয়ে লক্ষণীয়, তা হলো উগ্রডানপন্থী গোষ্ঠীর শক্তি বৃদ্ধি। গত এক-দেড় বছর ধরে সংগঠিতভাবে বিভিন্ন মাজার ভাঙচুরের ঘটনাকে তিনি এর স্পষ্ট উদাহরণ হিসেবে দেখান। অর্থাৎ পুরনো ধারাবাহিকতা ও নতুন বাস্তবতার সংমিশ্রণেই বর্তমান পরিস্থিতিকে বোঝা উচিত।
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে কী প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশে
সহুল বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলেও উগ্র ডানপন্থার উত্থানের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। এখানে তিনি শুধু ধর্মীয় ডানপন্থার কথা বলছেন না জাতিবাদী-ডানপন্থার প্রবণতাও সে সময় সক্রিয় ছিল, যা ধর্মীয় ডানপন্থীদের আরও শক্তি জুগিয়েছিল। আজ তার ফল দৃশ্যমান। অন্যদিকে, বর্তমান সরকারের নমনীয় অবস্থানও এসব হামলা ও ভাঙচুরকে আরও উৎসাহিত করছে বলে তাঁর মন্তব্য। বাউল ও ফকির সম্প্রদায়ের মাজারে যেসব তীব্র ভাঙচুর হচ্ছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। নাগরিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র নীরব বরং সংখ্যাগরিষ্ঠের ‘অনুভূতি’র প্রতি পাহারাদারের ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে,
"রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা এই মুহূর্তে ‘মব’ বা তাদের ভাষায় ‘প্রেসার গ্রুপ’-এর আক্রমণ নিয়ে ভীত।"
তবু সহুল মনে করেন, এর বিরুদ্ধে সমাজে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ চলছে— এজন্য তিনি এটিকে গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্নের মৃত্যু মানতে নারাজ। তবে তিনি স্বীকার করেন, অভ্যুত্থানের পর যে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি সামনে এসেছিল, তা বারবার হোঁচট খাচ্ছে। সহুলের বক্তব্য,
“স্বৈরাচার থেকে মুক্তি পেলেই সব অন্যায় মুহূর্তে দূর হয়ে যায় না। নাগরিক অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের কৌশল এখন ভিন্ন পথ ধরে এগোবে।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন এক ধরনের সংক্রমণকালে রয়েছে। গ্রামসির তত্ত্ব টেনে তিনি ব্যাখ্যা করেন, পুরনো কাঠামো ভেঙে পড়ছে, কিন্তু নতুন কিছু এখনও জন্ম নেয়নি। এই অস্থিরতার ঢেউ সেই পরিবর্তন-সংকটেরই লক্ষণ।
কিছু বিশ্লেষক আবার বলছেন সংবাদমাধ্যম এবং সরকার কেবল 'মব ভায়োলেন্স' শব্দটি ব্যবহার করছে এবং এভাবে সহিংসতা এক ধরনের সংজ্ঞায়িত রূপ পাচ্ছে, যা বিচার প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করতে পারে। ন্যায্য বিচার, আইন শৃঙ্খলা ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং সামাজিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সক্রিয় সংলাপ ও দৃষ্টান্তমূলক কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে বলে মত বিশ্লেষকদের একাংশের। যদি সরকার শুধু বারেবারে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না বলেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করতে চায়, আদপেই কোনো সরকারি প্রস্তাব সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করে, তাহলে মানুষের মধ্যে আইন নিজের হাতে নেওয়ার প্রবণতা আরও বাড়তে পারে, এবং এটি আইনশাসনের আস্থা নষ্ট করতে পারে।
সমালোচকরা এও বলছেন, মব ভায়োলেন্সকে সাধারণ অপরাধের মতো দেখিয়ে বিষয়টিকে গুটিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা আসলে একটি বড় মানবাধিকার এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার চ্যালেঞ্জ। মানিকগঞ্জে বাউলভক্তদের উপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক শেকড়, ধর্মীয় সহনশীলতা ও নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি বাড়তে থাকা চাপের আরেকটি দৃষ্টান্ত। গবেষকদের মতে, বাংলাদেশ এখন এমন এক পরিস্থিতিতে পড়ছে, যেখানে ‘তৌহিদী জনতার ভীতি’ আর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সমাজকে জড়িয়ে ধরছে। গান, দর্শন, শিল্প আর লোকসংস্কৃতির মতো বিষয়গুলোও এই উগ্রতার সামনে ক্রমেই অসহায় হয়ে পড়ছে।

Whatsapp
