'সরকার কোটা সংস্কারের পক্ষে', শুনানির দিন এগনোয় কী বলছেন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী?

Bangladesh Quota Case Hearing: "আমার মনে হয় আজ থেকে আর আন্দোলন করার কোনো প্রয়োজন নেই," বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

কথা ছিল ৭ অগাস্ট হবে শুনানি। উত্তাল বাংলাদেশে ৭ অগাস্ট অবধি পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তাই অজানা। ছাত্রমৃত্যু আর পুলিশ দমনের মাঝে রক্তাক্ত বাংলাদেশে তাই সরকারি চাকরিতে নিয়োগের কোটা বিষয়ে শুনানি এগিয়ে আনা হয়েছে রবিবার, ২১ জুলাইয়ে। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যে লিভ টু আপিল করা হয়েছিল সেই আবেদনের শুনানির জন্য ২১ এপ্রিল দিনটি ধার্য করে চেম্বার আদালত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এই আদেশ দেন। বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, "মামলাটি আদালতে আছে, তাও সর্বোচ্চ আদালতে। যখন আদালতে এ মামলার শুনানি শুরু হবে তখন সরকার এই কোটার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব দেবে। আমরা কোটা সংস্কারের পক্ষে।"

দেশে কোটা সংস্কার চেয়ে ইতিমধ্যেই বিক্ষোভ আন্দোলনে ৩০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে, প্রাণ গেছে নাবালক পড়ুয়াদের। আইনমন্ত্রী বলছেন, পড়ুয়ারা কোটাবিরোধী আন্দোলনে যে সব দাবিতে শামিল হয়েছেন, তা বিশদভাবে পর্যালোচনা করে দেখেছে সরকার। "যেহেতু সরকার তাদের বিষয়গুলো বিবেচনা করে এই দাবিগুলোতে রাজি হয়েছে, আমার মনে হয় আজ থেকে আর আন্দোলন করার কোনও প্রয়োজন নেই," বলেছেন আনিসুল হক। আন্দোলন প্রত্যাহার বা স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন সে দেশের মন্ত্রী।

আরও পড়ুন- আন্দোলন দমাতে ইন্টারনেট বন্ধ! কী ঘটছে বাংলাদেশে জানবেন না আর কেউই?

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই কোটা বাতিল করা হয়েছিল। এই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা হাইকোর্টে যান। এবছরের জুন মাসে আদালত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পক্ষে রায় দিয়ে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে। তারপরেই শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (নবম থেকে তেরোতম গ্রেড পর্যন্ত) কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মন্ত্রক। এই পরিপত্রের বৈধতা নিয়ে আবার লিখিত আবেদন দায়ের করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সাত সন্তান। গত ৫ জুন চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে।

হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আপিল করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ১০ জুলাই আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল দায়ের করা পর্যন্ত কোটা বিষয়ে সব পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের রায় সে সময় পর্যন্ত অকার্যকর থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। তখনই আগামী শুনানির দিন ধার্য হয় ৭ অগাস্ট।

আরও পড়ুন- হাসিনা সরকারকে না হটানো অবধি নড়বে না পড়ুয়ারা: শহিদুল আলম

এরপর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এই রায়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল ও অন্যান্য কোটা (জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী, উপজাতি ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কোটা) বজায় রাখতেই নির্দেশ দেওয়া হয়। ফের কোটাবিরোধী আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। সরকার এই রায়ে স্থগিতাদেশ চাইলেও চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ না করে আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়। গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য ওঠে। শুনানির পর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল দায়ের করে।

রাষ্ট্রপক্ষের এই লিভ টু আপিল করার মধ্যেই হাইকোর্টের রায় স্থগিতাদেশ চেয়ে গত ৯ জুলাই আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। সেই আবেদনে শুনানির পর কোটা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর উপর স্থিতাবস্থা জারি করে সর্বোচ্চ আদালত।

More Articles