হলুদ ফুল, কাঁচা হলুদ আর হলুদ শাড়ি! সরস্বতী পুজোয় কেন এত জরুরি এই রং?
Saraswati Puja 2024: ছোটদের সরস্বতীপুজোর শাড়ি মানেই হলুদ ডুরে। শুধু কি ছোটরাই, আলমারি খুঁজে সবচেয়ে হলুদ শাড়িটা বের করে আনতেই হবে বড়দেরও। সরস্বতী পুজোর উপাচারেও হলুদের রমরমা।
বসন্ত মানেই প্রকৃতির উজার করা রূপ। আর সেই বসন্তকাল শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে বাণীবন্দনা। বসন্তে নানা রঙে সাজে প্রকৃতি, কিন্তু সরস্বতী পুজো জুড়ে হলুদের প্রাধান্য। ছোটদের সরস্বতীপুজোর শাড়ি মানেই হলুদ ডুরে। শুধু কি ছোটরাই, আলমারি খুঁজে সবচেয়ে হলুদ শাড়িটা বের করে আনতেই হবে বড়দেরও। সরস্বতী পুজোর উপাচারেও হলুদের রমরমা। কাঁচা হলুদ থেকে শুরু করে হলুদ-বাসন্তী গাঁদাফুলে ঢাকা অঞ্জলির থালা। ছেলেদের এই দিনে হলুদ পাঞ্জাবি পরা চাই-ই চাই। কিন্তু কেন বসন্তপঞ্চমীতে হলুদের এত মাখামাখি জানেন?
সরস্বতী পুজো বাঙালির প্রেমের দিন। ভোরে উঠে স্নান সেরে শাড়ি পরে বিদ্যার দেবীর পায়ে অঞ্জলি। হাতেখড়ি থেকে শুরু করে এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে বাঙালির অন্য আবেগ। এ উৎসব বিশেষ করে ছোটদের। স্কুল-কলেজে এই একটা দিনে তারাই রাজা। নতুন বছর পড়তে না পড়তেই অপেক্ষা শুরু হয় এই উৎসবের। চলতি বছর আবার একই দিনে পড়েছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে। অর্থাৎ বাংলা এবং ইংরেজি প্রেমের দিবস মিলেমিশে একাকার। প্রেমের রং সাধারণত লাল ভাবা হলেও সরস্বতী পুজোয় কিন্তু হলুদের রাজত্ব। বসন্তকালে পলাশ,শিমুল, কৃষ্ণচূড়ার ভিড়ে প্রকৃতিতেও কিন্তু হলুদের সম্ভার কম নেই। আর সেই হলুদের ছোঁয়াই লাগে বসন্তপঞ্চমীতে।
হলুদের সঙ্গে কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতির যোগাযোগ গভীর। হলুদ রঙকে শুভ, সমৃদ্ধি ও সুখের প্রতীক মনে করা হয়। প্রাচীন কালে আমাদের দেশের মুনিঋষিদের পোশাকে মিলত এই হলুদ রঙের ছোঁয়া। সূ্র্যের আলোতেও তো মিশে থাকে এই হলুদ রঙ, যা একদিক থেকে শক্তির প্রতীক। হলুদ রং যেন আমাদের জীবনে নতুন আশা ও নতুন উৎসাহের সঞ্চার করে। একরকম ভাবে হলুদ যেন বসন্তের আগমনবার্তার কথাই ঘোষণা করে প্রকৃতিতে। হলুদ রং শুভ এবং হলুদ আদতে বীজাণুনাশকও। সে কারণেই বিয়ের আগে গায়ে হলুদের রেওয়াজ রয়েছে। হলুদ রঙকে মঙ্গলময় শক্তিকে আকর্ষণ করে বলেই বিশ্বাস। বিয়ের আমন্ত্রণপত্র থেকে অনুষ্ঠানেও তাই হলুদের রমরমা। যৌবন ও ভালোবাসার রং বলেও মনে করা হয় এই হলুদকে।
বাগদেবীর প্রিয় রং এই হলুদ বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই দেবী সারদাকে সন্তুষ্ট করতেই এ দিন হলুদ পরার রীতি। দেবীর আসনে দেখা যায় হলুদ কাপড় বিছানো। হলুদ ফুল ছাড়া সরস্বতী পুজো অসম্পূর্ণ। সরস্বতী পুজোর দিন সকালে কাঁচা হলুদ মেখে স্নানের রীতি রয়েছে। হলুদের ভেষজ শক্তির কথা তো প্রায় সকলেই জানেন। কাঁচা হলুদের অনাত্রম্যতা জীবাণু তাড়ায়। বসন্তকালে পক্স, হামের প্রকোপ বাড়ে। সে সবের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য় করে এই হলুদ।হলুদের মধ্যে কারকিউমিন নামের এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ম্যাজিকের মত কাজ করে। হলুদের মধ্যে অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান রয়েছে। শীতের ত্বকের শুষ্কতা দূর করা, ব্রণর সমস্যা, ত্বকের দাগছোপ দূর করার ক্ষেত্রে হলুদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সে কারণেই হলুদ মাখার চল ছিল পুজোর দিন সকালে। অবশ্য এখন অনেকেই তা আর মানেন না। আসলে মনে করা হয়, প্রাণবন্ত হলুদ রং আমাদের ভিতরের অশুভ অনুভূতিকে ধ্বংস করে সাফল্যের ইঙ্গিত বয়ে আনে। হলুদ রং আত্মবিশ্বাস বাড়ায় বলেও মনে করেন মনোবিদেরা। অনেকে সরস্বতী পুজোয় হলুদ পোলাও নিবেদন করেন, আর এই দিনে খিচুড়ি-আলুরদমের মাহাত্ম্য তো বাঙালি মাত্রেই জানেন।
এ সবের পাশাপাশি হলুদ রং ঔজ্জ্বল্যের রং। বসন্তে তাই হলুদের চেয়ে মনকাড়া রং আর কী-ই বা হতে পারে। আর তাই হলুদের সাজেই সেজে ওঠেন শ্বেতশুভ্র দেবী সারদা। ফলে সরস্বতী পুজোর দিনে হলুদের মাহাত্ম্য যেন একটু বেশিই