দেশের রং সত্যিই গেরুয়া? ২০২৪ সালের আগে ঠিক কী অবস্থায় আছে বিজেপি?
BJP in India : মোদি বলেন, রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির 'হ্যাটট্রিক' আসলে দলের ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের হ্যাটট্রিক' এর এক গ্যারান্টি।
২০২৪ এ ফাইনাল ম্যাচ। তার আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল। ডিসেম্বরের শুরুতেই পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল দু'টি বিষয়স্পষ্ট করে দিয়েছে। এক, বিজেপি ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য; দুই, ভারতকে জুড়তে পারেনি কংগ্রেস-ইন্ডিয়া। বিজেপি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে জিতে প্রমাণ করে ফেলেছে, মধ্যভারত তাদের একপ্রকার দখলেই। লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে দেশে এই ফলাফল বিরোধীদের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ। সারা দেশে বিজেপির অবস্থা দেখলেই চ্যালেঞ্জের মাত্রা খানিক টের পাওয়া যাবে। বিজেপি এখন ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ১২টিতেই ক্ষমতায় এবং অন্য ৪ টিতে ক্ষমতাসীন জোটে রয়েছে। অন্যদিকে কংগ্রেসের কাছে এখন মাত্র তিনটি রাজ্য রয়েছে - কর্ণাটক, হিমাচল প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা, যেখানে তারা সদ্য কেসিআর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে জিতেছে।
২০১৪ সাল থেকে বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের রাজ্যে রাজ্যে দলের কী অবস্থা এক ঝলক দেখা যাক। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসেব বলছে, বিজেপি শাসিত যে রাজ্যগুলি রয়েছে তা ভারতের মোট ভূমির ৫৮ শতাংশ! এবং দেশের জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশ। বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি দেশের ৪১ শতাংশ ভূমি আর ৪৩ শতাংশ জনসংখ্যাকে নিজেদের দখলে রেখেছে৷
মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে বিজেপির জয় ২০২৪ সালের আগে দলের এক বিশাল ওভার বাউন্ডারি। জয়ের কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির 'হ্যাটট্রিক' আসলে দলের ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের হ্যাটট্রিক' এর এক গ্যারান্টি। নরেন্দ্র মোদি এই বিধানসভা হ্যাটট্রিককে দলের 'সুশাসন ও স্বচ্ছতার রাজনীতির' প্রতি মানুষের সমর্থন হিসেবেই দেখছেন।
আরও পড়ুন- ২০২৪ এর আগেই কেন ‘ফেল’ কংগ্রেস : সুমন চট্টোপাধ্যায়
এই তিনটি রাজ্যের জয়ের ফলে বিজেপি এখন ৫৪৩টি লোকসভা আসনের প্রায় অর্ধেক নিজেদের দখলে রেখেছে। কংগ্রেস তেলেঙ্গানা জিতেছে, এই বছর দক্ষিণভারতে কংগ্রেসের এটি দ্বিতীয় জয় ঠিকই। তবে বিধানসভার সার্বিক ফলাফল ইন্ডিয়া জোটের কাছে এক বড় ধাক্কা। চারটি রাজ্য মিলে ১৬০ মিলিয়নেরও বেশি ভোটার ছিলেন এবং ৫৪৩ সদস্যের সংসদে ৮২টি আসন ছিল।
বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা ফলপ্রকাশের পরপরই বলছেন, "আমরা সবসময়ই বলেছি যে দেশের কেন্দ্রের রাজ্যগুলি জিতবই। এই রায় আমাদের সেরা রাজনৈতিক কৌশল এবং তৃণমূল স্তরে কাজ করার ফলাফল।" মধ্যভারত যে বিজেপির দখলে তা অস্বীকার করার উপায়ও নেই। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি দিল্লি এবং পঞ্জাবের সরকার গড়ার ফলে এখন দেশের তৃতীয় বৃহত্তম জাতীয় দল হয়ে উঠেছে৷
বিজেপির রাজনৈতিক মানচিত্রের বিবর্তন
২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে, তখন রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া এবং ছত্তিশগড় সহ কয়েকটি রাজ্যে ইতিমধ্যেই বিজেপির সরকার ছিল। তারপর থেকে, বিজেপি আরও ১২ টি রাজ্য দখল করেছে। নরেন্দ্র মোদিই এখন দেশে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন- বিজেপিকেই বেছে নিলেন রাজস্থানের মেয়েরা, কেন ভোটে মুখ পুড়ল কংগ্রেসের?
২০১৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ দেখা যায়, ভারতের জনসংখ্যার ৬৯ শতাংশ সহ বিজেপি-শাসিত বা বিজেপির জোটভুক্ত রাজ্যগুলির ভূমির আয়তন ৭৮ শতাংশে বেড়েছে। বিরোধী রাজ্যগুলির হাতে রয়েছে দেশের জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ এবং মাত্র ২২ শতাংশ জমি।
এই নয় বছরে বিজেপির রাজনৈতিক যাত্রায় বিশাল উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে উত্তর পূর্বে গেরুয়ার উপস্থিতি। ২০১৪ সালে উত্তরপূর্বে বিজেপির উপস্থিতি ছিল নগণ্য। কিন্তু ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিজেপি এককভাবেই উত্তরপূর্বের তিনটি রাজ্য দখল করে এবং মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও সিকিমে বিজেপি রয়েছে জোট সরকারে রয়েছে। মিজোরামে কেবল অ-বিজেপি দলগুলি শাসন করেছে।
মোদি বলেছেন, সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের সময়, 'জাতের ভিত্তিতে দেশকে ভাগ করার চেষ্টা" করা হয়েছিল। জয়ের পরে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, "আমি বলেছিলাম যে আমার জন্য, চারটি জাতিই গুরুত্বপূর্ণ - নারী শক্তি, যুব শক্তি, কিষাণ এবং গরিব পরিবার"। এবারের বিধানসভা ভোটে এই চার ক্ষেত্র যে বিজেপির কী প্রবল লাভ করেছে তা ভোটের পরিসংখ্যানই বলছে।
কংগ্রেসের নির্বাচন জয়ের ক্ষমতা যে দিনের পর দিন ক্ষয়িষ্ণু তা আবারও প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। কাজে আসেনি ভারত জোড়ো যাত্রা, কাজে আসেনি ইন্ডিয়া জোট! কংগ্রেসের হারের পরে বিরোধীদের মধ্যে ফাটল আরও চওড়া হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ২০২৪ শিয়রে নিয়েও বিরোধী জোট কীভাবে ঐক্যের অভাবে ভুগতে পারে, প্রশ্ন ভাবিয়েছে আম জনতাকেও৷ জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ স্পষ্টই জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি থাকলে ইন্ডিয়া জোট ২০২৪ সালে জিততে পারবে না। দেশের মানচিত্র কি তবে আরও গেরুয়া হওয়ার পথেই?