লক্ষ্মীবারে লক্ষ্মীলাভ! বেতনবৃদ্ধির পর মাস গেলে কত পাচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কেরা?

Salary Hike, Mamata Banerjee: পশ্চিমবাংলার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং রাজ্যের বিধায়ক, প্রায় প্রতিটি স্তরেই প্রায় ৪০ হাজার টাকা করে বেতনবৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাতে এ রাজ্যের বিধায়ক-মন্ত্রীদের বেতন গিয়...

আর্থিক অবস্থা রাজ্যের ভালো নয়। তার জেরে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দিতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেই অঙ্ক খাটল না রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের বেলায়। বরং এক ধাক্কায় বেশ অনেকখানি বেতন বৃদ্ধি হল তাঁদের। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় তেমন ঘোষণাই করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন একাধিক কর্মসূচি ব্যাগে ভরে বিধানসভার পথে রওনা হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রীতিমতো লড়াই করে বিধানসভায় বাংলা দিবসের অধিকার এদিন ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। তারই সঙ্গে মিলেছে বাংলার নিজস্ব রাজ্য সঙ্গীতও। তবে এখানেই শেষ নয়। বৃহস্পতিবার বিধানসভা থেকেই আরও বড় একটি সিদ্ধান্ত সামনে নিয়ে এলেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়। লক্ষ্মীবারে লক্ষ্মীলাভ হল রাজ্যের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও বিধায়কদের। বিরাট অঙ্কের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা করা হল এদিন বিধানসভা থেকে।

পশ্চিমবাংলার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং রাজ্যের বিধায়ক, প্রায় প্রতিটি স্তরেই প্রায় ৪০ হাজার টাকা করে বেতনবৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সকলের বেতন বাড়লেও ব্রাত্য রাখলেন নিজেকে। না, মুখ্যমন্ত্রীর বেতনে কোনও রকমফের হচ্ছে না। এদিন বিধানসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, নিজের বেতন বাড়াচ্ছি না। বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে এদিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি মনে করেন, তাঁর রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতনই সবচেয়ে কম। যার জেরেই বছরের মাঝখানে এমন বেতনবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বেতনবৃদ্ধির ঘোষণায় নেতামন্ত্রীদের মধ্যে আনন্দের ঝড়। এক ধাক্কায় ৪০ হাজার টাকা কি মুখের কথা নাকি।

আরও পড়ুন: ১ বৈশাখেই ‘বাংলা দিবস’ কেন? কোথা থেকেই বা এল রাজ্যসঙ্গীতের ধারণা?

এতদিন পর্যন্ত রাজ্যের বিধায়কেরা পেতেন মাসে ১০ হাজার টাকা করে। তা একধাক্কায় বেড়ে হল ৫০ হাজার টাকা। বিধায়কদের ভাতা সহ এতদিন যে বেতন ছিল ৮১ হাজার টাকা, তা বেড়ে দাঁড়াল ১,২১,০০০ টাকায়। প্রতিমন্ত্রীদের বেতন ছিল মাসে ১০,৯০০ টাকা, যা বেড়ে হল ৫০,৯০০ টাকার কাছে। ফলে প্রতিমন্ত্রী-ভাতা সহ যেখানে তাঁদের মাসিক বেতন ছিল ১,০৯,৯০০ টাকা, তা বেড়ে দাঁড়াল ১,৪৯,৯০০ টাকায়। এবার আসা যাক, পূর্ণমন্ত্রীদের বেতনে। তাঁদের মাসিক বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা, ভাতা মিলিয়ে যা দাঁড়াত ১, ১০,০০০ টাকায়। আজকের পর তা গিয়ে দাঁড়াবে ১,৫০,০০০ টাকায়। ফলে আনন্দের কারণটা যে ভিত্তিহীন নয়, তা পরিষ্কার।

এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ-র ব্য়বধান প্রতিদিন বাড়ছে। সেই ঘাটতি মেটানোর কোনও চেষ্টা রাজ্য সরকারের তরফে দেখা যায়নি। মামলা, মোকদ্দমা করে হকের টাকা পাননি সরকারি কর্মীরা। সেই প্রশ্ন উঠলেই গলা শুকোন রাজ্য সরকার। কথায় কথায় টেনে আনেন বাম জমানার দেনার কথা। আর্থিক সংকট থেকে কেন্দ্র সরকারের অসহযোগিতার একগাদা অভিযোগ ফুটে ওঠে মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্যের শাসকদলের গলায়। অথচ বিধায়ক মন্ত্রীদের 'সামান্য' বেতনকে অসামান্য করে তোলার সময় সেই আর্থিক অনটনের ছায়াটুকুও দেখা গেল না মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে।

যদিও নিজের বেতনে কোনও বদল আনার একেবারে বিপক্ষে মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দিলেন, প্রাক্তন সাংসদ হিসেবে পেনশন বাবদ এক লক্ষ টাকা করে পান তিনি। তার উপর মুখ্যমন্ত্রীর বেতন রয়েছে। সেই বেতনটুকু অবশ্য নেন না বলেই দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। মমতার দাবি, বই বিক্রির স্বত্ত্ব বাবদ যে টাকাটা পান তিনি, তাতেই দিন চলে যায় তাঁর।

আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের পকেট ফুলছে, বাংলার বেহাল দশা! কেন্দ্র-রাজ্য ডিএ-র এত কেন ফারাক?

মুখ্যমন্ত্রীর এই বেতনবৃদ্ধির ঘোষণার পরে স্বাভাবিক ভাবেই রেগে আগুন রাজ্যের বঞ্চিত সরকারি কর্মীরা। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সরবও হয়েছেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। যদিও সে ব্যাপারটি নিয়ে আপাতত কিছু বলতে চাইছেন না রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা নেতামন্ত্রীরা। বরং একই ভাবে দোষ ঠেলছেন কেন্দ্রের ঘাড়ে। কেন্দ্রের বঞ্চনার কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। মানুষের ক্ষোভ-দুঃখের কথা একটু পাশে সরিয়ে এমন আনন্দঘন মুহূর্তের মৌতাতটুকু উপভোগ করতে কে না চায় বলুন তো!

More Articles