অচিনপুরের রূপকথা: ইন্দ্রনীল সান্যাল

Bengali Short Story: চাঙ্গা নদীর ধারের বেঞ্চিতে বসে মোনালিসা তার প্রেমিক বাবুরাম গায়েনকে সংক্ষেপে শোনাল বাবার কী হয়েছে। তারপর বলল, “চার মাসের মধ্যে এক লাখ টাকা জোগাড় করে দে।”

“এক লাখ টাকা?” চমকে উঠেছে মোনালিসা।

“হার্ট অপারেশান করতে খরচ তো হবেই। আপনি আমাদের কোম্পানির অন্য ডিভিশানের কর্মচারী বলে কিছুটা টাকা কম করা হয়েছে,” বললেন অচিনপুর রাজ্যের খালকাটা শহরের ‘বাজার-কিং নার্সিং হোম’-এর কার্ডিয়াক সার্জেন বিপুল মাল।

“এতগুলো টাকা জোগাড় করতে সময় লাগবে স্যার,” হাতজোড় করে বলল আঠাশ বছরের মোনালিসা মন্ডল।

বিপুল মাল দেঁতো হেসে বললেন, “আপনার বাবার হাতে বেশি সময় নেই। রিদয়বাবুর হৃদয়ে যে পরিমাণ ব্লকেজ দেখতে পাচ্ছি, তাতে মাস তিনেক... বড় জোর মাস চারেক সময় দেওয়া যেতে পারে। অবশ্য তার আগে যে কিছু হবে না, সে গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি না।”

“আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি। একটু দেখবেন স্যার!” নমস্কার করে বিপুলের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এল মোনালিসা। তার বাবা হৃদয়হরণ মন্ডল, যাঁর ডাকনাম রিদয়, অপেক্ষার ঘরের চেয়ারে মুখ শুকিয়ে বসেছিলেন। রিদয়ের ঠিক পাশেই বসে রয়েছেন স্ত্রী ছায়ারানি। মেয়েকে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরোতে দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কী বলল রে? গ্যাস থেকে বুকে ব্যথা হচ্ছে, তাই না?”

“চার মাসের মধ্যে এক লাখ টাকা জোগাড় করতে হবে,” চোয়াল শক্ত করে বলল মোনালিসা।

ছায়া করাঘাত করে বললেন, “ডাক্তার না টাকা নিংড়ে নেওয়ার কল? বুকে ব্যথা গ্যাসের থেকে হচ্ছে। রোজ মেথি ভেজানো জল খেলে তিনদিনের মধ্যে গায়েব হয়ে যাবে! অপারেশান করালে ওই গ্যাস মাথায় উঠে ‘স্টোক’ হয়ে যাবে। এই আমি বলে দিলুম!”

ছায়াকে ইশারায় চুপ করতে বলে মোনালিসা খালকাটা শহরের নার্সিং হোম থেকে বেরোল।

মোনালিসারা থাকে চাঙ্গা নদীর অন্য পারে, শ্যাওড়া জেলার ফালকিয়ায়। গলির গলি, তস্য গলিতে দু’ কামরার বাড়ি। এই এলাকায় বর্ষাকালে এত জল জমে যে বাড়ির মধ্যে মাছ আর সাপ ঘুরে বাড়ায়। ছায়া নাকি বেশ কয়েকবার খাটের তলায় শুশুক দেখেছেন। রিদয় অবশ্য বলেন, যে ওটা শুশুক নয়, গ্যাস। যাই হোক, জলাতঙ্কের কারণে জমি হাঙরের চোখ এই বাড়ির ওপরে পড়েনি। পড়বে বলে মনেও হয় না।

রিদয় লালহৌসি স্কোয়্যারের ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’তে চাকরি করতেন। দু’ বছর চাকরি বাকি থাকতে তাঁকে ‘সোনালি ঘাড়ধাক্কা’ দেওয়া হয়। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের কারণ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।

চাকরি যাওয়ার পরে পরিবার চালাতে সমস্যা তেমন হয়নি। কারণ রিদয় খুবই কম মাইনে পেতেন। অল্প টাকায় সংসার চালানোর কায়দা পরিবারের সবাই জানেন। তা ছাড়া সেই সময়ে মোনালিসা একটা চাকরি পেয়ে যায়। ভারতের সব থেকে বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর চেন ‘বাজার-কিং মার্ট’-এর শ্যাওড়া শাখার উদ্বোধন হল। সেখানে লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ দিয়ে, ইংরিজি আর হিন্দি ভাষায় কথা বলতে পারার প্রমাণ দাখিল করে সে চাকরি পেয়েছে। আই কার্ডে লেখা আছে ‘ফ্লোর ম্যানেজার। ফ্রেশ ভেজিটেবল সেকশান।’ মোদ্দা কথা হল, মোনালিসাকে আলু-পটল বিক্রি করতে হয়। সে লাউকে ‘লকি,’ ঢ্যাঁড়শকে ‘ভিন্ডি,’ পটলকে ‘পর্ভল’ বলা শিখে গেছে। তরু আর নেনুয়া, বেগুনি রঙের বাঁধাকপি আর আভোকাডোর গুণাগুণ গড়গড়িয়ে বলতে পারে। প্রতিদিন বারো ঘণ্টা মুখের রক্ত তুলে খেটে মাসান্তে যে টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকে, সেটা রিদয়ের অতীতের মাইনের থেকে সামান্য হলেও বেশি। কাজেই সংসার চলে যায়। তবে হার্ট অপারেশানের মতো বড় আর্থিক ধাক্কার জন্যে মন্ডল পরিবার প্রস্তুত ছিল না।

মোনালিসার ছোট বোন সোনালিসাও উপার্জন করে। সে কচুরিপানা থেকে ঠোঙা বানিয়ে বিক্রি করে। ‘চুরি’ ব্র্যান্ডের অর্গানিক ঠোঙার চাহিদা দেশ জুড়ে ক্রমশ বাড়ছে।

সোনালিসা বাবার জন্যে এক নয়া পয়সা খরচ করতে রাজি হল না। দিদির অনুরোধ শুনে ক্যাঁটক্যাঁট করে বলল, “সোজা কথাটা সোজা করে বলি। জানোয়ার শাহ রোডে ফ্ল্যাট দেখেছি। চিকনা দেখতে একটা বিজনেস পার্টনার পেয়েছি। শালপাতা থেকে শাড়ি বানায়। ওকে বিয়ে করে ফ্ল্যাটে শিফ্‌ট করব বলে টাকা জমাচ্ছি। বাজে খরচ করা যাবে না। তুই অফিসে লোনের জন্যে অ্যাপ্লাই করেছিস?”

“করেছিলাম। বলেছে দেবে না।” দুঃখিত মুখে ঘাড় নাড়ে মোনালিসা।

“তোর লাভার? গুড ফর নাথিং বাবুরাম?” জেনেশুনেই কাটা ঘায়ে নুনের চিঠি দিল সোনালিসা।

মোনালিসা কঠিন গলায় বলল, “আজ ওকে চাঙ্গা নদীর ধারে ডেকেছি কথা বলব বলে।”

।।২।।

চাঙ্গা নদীর ধারের বেঞ্চিতে বসে মোনালিসা তার প্রেমিক বাবুরাম গায়েনকে সংক্ষেপে শোনাল বাবার কী হয়েছে। তারপর বলল, “চার মাসের মধ্যে এক লাখ টাকা জোগাড় করে দে।”

প্রেম করতে এসে এ কী যন্ত্রণা! ঊনত্রিশ বছরের বাবুরাম ইয়ার্কি মেরে বলল, “চার মাসের মধ্যে এক লাখ? তুই পাগল না পেঁপে গাছ?”

“বডি শেমিং না করে টাকা জোগাড় কর। না হলে বাজার-কিং মার্টে আমার যে বস, সেই বেচারাম জানাকে বিয়ে করব। আলকাতরার মতো কালো, জলহস্তীর মতো মোটা, কথা বললে মনে হয় জলহস্তীর মেটিং কল— কিন্তু ওই জানোয়ারটাকে বিয়ে করলে বাবা বেঁচে যাবে। আমিও তোর হাত থেকে রেহাই পাব।”

“বেচারাম জানার বডি শেমিং হল না বলছিস?”

“ছেলেরা বললে বডি শেমিং। মেয়েরা বললে ইমোশনাল আউটবার্স্ট। সিম্পল! পণ্ডিতি না করে টাকার জোগাড় কর।” ছ্যারছ্যার করে কথা শুনিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল মোনালিসা। বাবুরাম হাই তুলে বলল, “ধুস! ভাল্লাগে না।”

বাবুরামের বাড়ি রাধাঘাটে। ফালকিয়া থেকে হাঁটাপথ। তবে ওর বাড়ির পরিস্থিতি মোনালিসাদের বাড়ির মতো নয়। রাস্তায় জল জমে না, বাড়িতেও জল ঢোকে না। জমি হাঙরের দল নিয়মিত বাবুরামের বাবা হরেরামের কাছে কুপ্রস্তাব নিয়ে আসে।

হরেরাম চাকরি করতেন ফাইটার্স বিল্ডিং-এ। মিনিবাসে চাপলে আধঘণ্টায় আপিস। বেলা বারোটায় বেরিয়ে বিকেল চারটের মধ্যে বাড়ি ঢুকে একটু বিশ্রাম নিয়েই বিপ্লব করতে বেরিয়ে পড়তেন। চাকরি থেকে অবসরের পরে চপের দোকান দিয়েছেন। নাম, ‘চপের ঢপ।’ হরেরাম চান রাজ্যের চপ শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে। তাঁর বিপ্লবের স্বপ্ন আজও মরেনি, শুধু দিশা বদলে ফেলেছে।

বাবুরামের মা সুমতিও ব্যাবসা করেন। তিনি কাশফুলের বালিশ তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। তাঁর প্রোডাক্টের নাম ‘কাশের দেশ।’

এই অর্গানিক প্রোডাক্টেরও খুব চাহিদা।

এরকম উদ্যমী বাবামায়ের সন্তান হয়ে বাবুলাল হয়েছে অকম্মার ঢেঁকি! সে এমএ পাশ করে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে বসে আছে। চাকরি পায়নি। তাই নিয়ে বাবুরামের কোনও দুঃখ নেই। কারণ সে চাকরি করতে চায় না। ইনফ্যাক্ট, সে কিছুই করতে চায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল ঘাঁটে। সুমতির ধাঁতানি খেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দু’কাপ চা খায়। বাথরুমে গিয়ে যা যা করার, সেগুলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও করে আবার ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার সুমতির ধাঁতানি। এবারে প্রাতঃরাশ। আবার মোবাইল ও ঘুম। এই রুটিন সারাদিন চলে। সুমতির ধাঁতানিতে বাবুরামের সুমতি হয়নি।

মোনালিসার ধমক খেয়ে বাড়ি ফিরে মোবাইল ঘাঁটছিল বাবুরাম। ফেসবুকে চক্কর কাটতে কাটতে একটি বিজ্ঞাপনে চোখ পড়ল। এ কখনও হতে পারে?
এটা ঠিক যে সময় দ্রুত বদলাচ্ছে। তা বলে এই রকম একটা চাকরি? আজকের দিনে? এ কি রূপকথা? না ডিজিটাল ফ্রড। নাকি দুটোই?

ওয়েব সাইটে একটা ফোন নম্বর আর একটা মেল আইডি দেওয়া আছে। ফোন করে বাবুরাম বুঝতে পারল যে এটা আর যাই হোক, জালিয়াতি নয়। সবটাই সত্যি। সে নিজের বায়োডেটা মেল করে ঘুমিয়ে পড়ল। রাতের খাবারের সময় ঘুম থেকে উঠে দেখে মেলের উত্তর এসেছে। কাজটা সে পেয়েছে। তিন মাসের কনট্র্যাক্ট। পুরোটাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম। এবং শুধুই নাইট শিফ্‌ট। বাবুরাম চাকরি করতে রাজি থাকলে কোম্পানির লোক বাড়িতে কাজের সব উপাদান পাঠিয়ে দেবে।

‘আমি রাজি’ লিখে ফিরতি মেল পাঠাল বাবুরাম। তার চারদিনের মাথায় সকাল এগারোটার সময় এক টেম্পো মালপত্র বাড়িতে চলে এল। তখন হরেরাম বা সুমতি বাড়িতে নেই। তাঁদের অজান্তেই মেশিন ইনস্টল হয়ে গেল। কোম্পানির প্রতিনিধি দেখিয়ে দিলেন কী ভাবে মেশিন ব্যবহার করতে হয়। চুক্তিভিত্তিক চাকরির নিয়োগপত্রে সই করিয়ে একটা কপিও দিয়ে গেলেন। আজ রাত থেকেই শুরু হবে কাজ।

বিকেলবেলা মোনালিসাকে ফোন করে বাবুলাল বলল, “একশো দিনের মধ্যে এক লাখ টাকা পেয়ে যাবি।”

“কী ভাবে?” তেড়ে উঠেছে মোনালিসা।

“কোনও প্রশ্ন করা যাবে না। প্লাস, আমার একটা শর্ত আছে। আগামী একশো দিন আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখা যাবে না।”

“এ আবার কী শর্ত?” মোনালিসার রাগ কমেনি। “করবি তো একশো দিনের কাজ। আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটা সাফ করে দিয়ে যাস।”

“বিএ-এমএ পাশ করে অচিনপুরের বাসিন্দা হয়ে তুই আলু-পটল বেচবি আর আমি রাস্তার ময়লা সাফ করব। এতে দোষের কিছু নেই। সব কাজই সমান। এনিওয়ে, ওই কথাই রইল। আমিই তোকে একশো দিন পরে ফোন করে জানাব, কাকুর অপারেশান কবে রাখবি।” ফোন কেটে বড় একটা হাই তুলল বাবুরাম। সামনে বিশাল কাজ।

।।৩।।

বাজার-কিং নার্সিং হোমের অপারেশান থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে মোনালিসা বলল, “হার্ট কাটতে কতক্ষণ লাগে রে?”

বাবুরাম বলল, “মাছ মাংস কাটতেই কত্ত সময় লাগে! আর এ হল বাজারের সব থেকে দামি মাংস। হৃদয়বাবুর হৃদয়। অনেকক্ষণ সময় লাগবে। চল, আমরা চা খেয়ে আসি”

“আমি কোত্থাও যাব না।” ওটি সংলগ্ন অপেক্ষার ঘরের চেয়ারে বসে মোনালিসা। বাবুরামকেও পাশে বসায়।

এই ঘরের চেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রয়েছেন ছায়ারানি আর সোনালিসা। মোনালিসাকে দেখে ছায়া বললেন, “গ্যাস, গ্যাস। সব গ্যাসের খেলা। তোর বাবাকে রোজ সকালে আমলকি, হত্তুকি আর বয়ড়া গুঁড়ো জলে মিশিয়ে খাওয়ালে সব ঠিক হয়ে যেত। শুদুমুদু বিপুল মালকে বিপুল মাল সাপ্লাই করলি।”
সোনালিসা বলল, “আহ, মা! চুপ করো না। আমি সেল্‌ফি তুলছি।”

“সারাদিন সেল্‌ফি আর সেল্‌ফি! তোদের জেনারেশানটা নষ্ট হয়ে গেল কেন জানিস? মাথায় গ্যাস উঠেছে বলে। মোবাইল কানে সেঁটে রাখলে ওই গ্যাস একদিন গদাম করে ফেটে ‘স্টোক’ হবে।”

মা আর ছোটবোনের ঝগড়ায় কান না দিয়ে বাবুরাম বলল, “নার্সিং হোমের নাম বাজার-কিং? হেল্‌থ একটা নোব্‌ল প্রফেশন। এর সঙ্গে বাজারটা ঠিক যায় না। অন্য কোনও নার্সিং হোমে ভর্তি করতে পারলি না?”

“আমি যে কোম্পানিতে কাজ করি, এই নার্সিং হোম তার সিস্টার কনসার্ন। এখানে অপারেশান করালে অনেকটা ছাড় পাব। তা ছাড়া, সব কিছুই তো এখন বাজার। হেল্‌থ তার বাইরে থাকবে কেন?”

“তা বটে। আলু-পটল আর হার্ট-লাং-এর মধ্যে কোনও তফাত নেই।” হাই তুলল বাবুরাম।

“বাতেলা না করে আসল কথা বল। তোর মতো আলসে মানুষ এত টাকা রোজগার করল কী করে? বাজারে কিডনির ভাল দাম। সেটা বেচে দিসনি তো?”

সাধুদের মতো প্রশান্ত হেসে বাবুরাম বলল, “সেদিন বাড়ি ফিরে ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে দেখি পাঙ্গালুরু রাজ্যের স্টার্ট আপ কোম্পানি ‘ড্রিমল্যান্ড’ ফ্রেশার্স খুঁজছে ইন্টার্নশিপের জন্যে। ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানলাম যে একশো দিন কাজ করলে রেমুনারেশান এক লাখ টাকা। তবে কাজটা পুরো করতে হবে এবং মন দিয়ে করতে হবে। সেই জন্যই একশো দিন মোবাইল বন্ধ রেখেছিলাম। বাড়ির বাইরে বেরোইনি পর্যন্ত!”

“কাজটা কী ছিল?” ভুরু কুঁচকে গেছে মোনালিসার।

“ড্রিমল্যান্ড কোম্পানি ম্যাট্রেস বা বিছানার গদি তৈরি করে। ওই গদিতে প্রতিটি ইন্টার্নকে রোজ ন’ ঘণ্টা ঘুমোতে হবে। টানা একশো দিন। ঘুমের সময় আমার শরীরে নানান যন্ত্রপাতি লাগানো থাকবে। নাক ডাকে কিনা, পাশ ফিরে শুই না চিত হয়ে, পাল্‌স কত থাকে, ব্লাড প্রেশার কত থাকে, রক্তে অক্সিজেন কত থাকে— সব রেকর্ড হত এবং চলে যেত ড্রিমল্যান্ডের স্লিপ ল্যাবে। এ ছাড়া ওদের লোক এসে আমার ঘরে সিসিটিভি লাগিয়ে গিয়েছিল। সত্যিই ঘুমোচ্ছি কিনা বোঝার জন্যে। ড্রিমল্যান্ডের তৈরি করা গদিতে শুয়ে, ড্রিমল্যান্ডের দেওয়া বালিশ মাথায় দিয়ে, ড্রিমল্যান্ডের দেওয়া রাত পোশাক পরে টানা একশো দিন ন’ ঘণ্টা করে ঘুমিয়ে টাকাটা পেয়েছি।”

“যেভাবেই হোক না কেন, টাকাটা পাওয়া গেছে। বাবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেই তোকে আমি বিয়ে করব।”

“বিয়ে পরে হবে মোনা।” আড়মোড়া ভাঙে বাবুরাম। “আমি এখন ড্রিমল্যান্ডের স্লিপ অ্যাম্বাস্যাডার। আমার কাজ হল অচিনপুরের প্রতিটি জেলায় ঘুরে ছেলেমেয়েদের ঘুমোতে শেখানো।”

ওদের কথার মধ্যে রিদয়বাবুর হৃদয় নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। আর অচিনপুরের ঘরে ঘরে শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা বাবুরামের কৃতিত্বে আপ্লুত হয়ে কাশফুলের বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ছে।

More Articles