সুবর্ণরেখার তীরে সর্বমঙ্গলা দেবী! শতাব্দী প্রাচীন কেশিয়াড়ির মন্দিরের অজানা কাহিনি

Bengal Durga Puja: দেবী দুর্গার আরেক রূপ সর্বমঙ্গলা। পুজোর সময় সকল নিয়ম নীতি মেনে আজও পুজো হয়। শুধু গ্রামের মানুষ নয়, বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন একবার দেবীকে দর্শন করে নিতে।

MT

দুর্গার জাগরিত শক্তি ঐশ্বরিক, যার কাছে এই জগতের সুরক্ষার ভার। আর দেবী হলেন- 'শক্তিরুপেণ সংস্থিতা'। মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির মঙ্গলামাঁড়ো এলাকায় পাথরকে দেবী রূপে গণ্য করা হয়। বলা হয় এক বেনেঘরের বৌ সর্বমঙ্গলা দেবীর মায়ায় পাথর হয়ে যান। কেশিয়াড়ির শ্রী শ্রী সর্বমঙ্গলা দেবীর মন্দির বহু শতাব্দী প্রাচীন।

মন্দিরটি উড়িষ্যার সীমান্তের কাছে। একটু দূরে বয়ে গেছে সুবর্ণরেখা নদী। ওড়িশা রীতিতে নির্মিত মন্দির। নাটমণ্ডপ পেরিয়ে গর্ভগৃহ। মাথায় আছে আমলক। গর্ভগৃহতে দেবীর অধিষ্ঠান। দেবী দুর্গার আরেক রূপ সর্বমঙ্গলা। পুজোর সময় সকল নিয়ম নীতি মেনে আজও পুজো হয়। শুধু গ্রামের মানুষ নয়, বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন একবার দেবীকে দর্শন করে নিতে।

সুবর্ণরেখা নদী

এক সময় এই সমস্ত অঞ্চলে গঙ্গাবংশের রাজারা বহুকাল রাজত্ব করেছেন। মন্দিরের সামনে ওড়িয়া ভাষায় বিভিন্ন ফলক দেখা যায়। এই সকল জায়গা বহু উত্থান পতনের সাক্ষ্য বহন করছে। কেশিয়াড়ির বিখ্যাত শোলার কাজ। মালাকার বংশের সকলে এই কাজ করেন।

বিস্তারিত কমেন্টে- কন্ঠে উত্তম থেকে লতা-আশা! ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র তবু অদ্বিতীয়

ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, একসময় শৈব ধর্মের মানুষের প্রাধান্য ছিল এই সকল অঞ্চলে। শোনা যায়, কেশিয়াড়ির ৩৬টি গ্রামের মধ্যস্থলে একটি করে শিবলিঙ্গ ছিল। গাজনের দিন খুব বড় মেলা হয়। শ্রী শ্রী সর্বমঙ্গলা দেবী চতুর্ভুজা। অসুরকে বিনাশ করছেন। দেবীর উদ্দেশে পশুবলি দেওয়া হয়। এখানে একটি দেবী কুন্ড আছে।

দেবীকে পুজো দেবার জন্যে মিষ্টি বিক্রি

রাজা মানসিংহের আমলে ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে চক্রধর ভুঁইয়া সর্বমঙ্গলা দেবী মন্দির ও জগমোহন প্রতিষ্ঠা করেন। এক সময় এই অঞ্চল বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের অধীনে ছিল। পরে হিন্দুদের স্থান হয়। মন্দিরে নানা প্রথায় দুর্গাপুজোর সময়, আচার রীতি মেনে পুজো করা হয়। রাজা মানসিংহ কেশিয়াড়ির রাজস্ব কেন্দ্রে শাহ সুলতান নামে একজন শাসন কর্তাকে নিযুক্ত করেন। তিনিও এই মন্দিরের নির্মাণ কাজের খোঁজ খবর নিতেন। এলাকায় সর্বমঙ্গলা দেবীর মন্দির থাকায় অন্যান্য কোনা মূর্তি পুজো এখানে হয় না।

বহু ঐতিহ্য আজও টিম টিম করে এখানে জ্বলছে। শারদোৎসব কেন্দ্র করে মন্দির চত্বর জমজমাট হয়ে ওঠে। পুজোব্যাপী প্রতিদিন মাকে নিয়ম করে ভোগ দেওয়া হয়। আজও এই পুজোকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের সমাগম হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। সকলে দেবীকে পুজো দিয়ে ভোগ প্রসাদ গ্রহণ করেন। মায়ের আশীর্বাদ সকলের উপর বর্ষিত হয়। অতীতের বিবর্ণ পাতায় কেশিয়াড়ির সর্বমঙ্গলা দেবীর মন্দিরে বহু প্রাচীন ইতিহাস রক্ষিত আছে।

More Articles