বিজেপি-আরএসএস দ্বন্দ্ব! কীভাবে নেতৃত্ব খুঁজবে বিজেপি?

BJP-RSS conflict: কিন্তু প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা এখন দলের সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নানা রকম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। এতে সভাপতি নির্বাচনেও দেরি হচ্ছে।

কে হবেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি? ইতিমধ্যেই এই প্রশ্ন নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন হয়নি। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও পদে রয়েছেন জেপি নাড্ডা। শোনা যাচ্ছিল, শীঘ্রই বিজেপির নতুন সভাপতি বাছাই করা হবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাচ্ছিল না কোনো ভাবেই। বিজেপির উচ্চপদস্থ নেতারাও এই বিষয়ে নীরবতা বজার রাখছিলেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি এবং আরএসএস-এর মধ্যে দ্বন্দ্বও চলছে মুখবাছাই নিয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে নেতৃত্ব খুঁজবে বিজেপি? শীর্ষ পদাধিকারের যুদ্ধে কাদের এগিয়ে রাখছেন বিশ্লেষকরা?

চলতি বছর ফেব্রুয়ারির মাসের মধ্যেই বিজেপির জাতীয় সভাপতি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। শেষ সময়সীমা ছিল সংসদের বাদল অধিবেশন। সেখানেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। বিজেপির নিয়ম, এক ব্যক্তি, এক পদ। অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি একের বেশি পদে থাকতে পারবেন না। কিন্তু গত বছর লোকসভা নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী করা হয় জেপি নাড্ডাকে, তারপরও আজ অবধি সেই জায়গায় নতুন করে সর্বভারতীয় সভাপতি নিয়োগই করা হয়নি। এক বছর ধরে তিনি দুই পদই সামলাচ্ছেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও পিছিয়ে যাচ্ছে বিজেপি আরএসএস কোন্দলে। কেন এই নিয়ে বিবাদ?

১৯৮০ সালে বিজেপির প্রতিষ্ঠার সময় আরএসএস তিনটি শর্ত দিয়েছিল—

১) আরএসএস-এর সদর দফতর নাগপুরে। সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরএসএস-এর নাগপুরের উচ্চপদস্থ সদস্যদের পরামর্শ ও সম্মতি বাধ্যতামূলক,

২) বিজেপি নেতারা আরএসএস-এর আদর্শ মানবেন, তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকতে পারে,

৩) সাধারণ সম্পাদকের পদে সব সময় আরএসএস-এর নাগপুরের উচ্চপদস্থ সদস্য থাকবে

আরও পড়ুন- কেন স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চ আরএসএস প্রশস্তির জন্য বেছে নিলেন মোদি?

যেমন, বেশ কিছু বছর সুন্দর সিং ভাণ্ডারী এই পদে ছিলেন। অটল বিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সে সময়ে বিজেপির সভাপতি সব সময় আরএসএস-এর সিদ্ধান্তেই নির্বাচিত হত। শুধু তাই নয়, “চিন্তন বৈঠক” বলে একটি আলোচনাসভারও আয়োজন করা হত। কিন্তু, সেই নিয়মে ছেদ পড়েছে গত এক দশকে। প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা আরএসএস-এর মনঃপুত হয়নি। এবং সেই দরকষাকষি এখনও অব্যহত।

বিজেপির অন্দরের খবর, প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চান এমন কেউ সভাপতির পদে আসুক, যিনি সর্বদাই মোদি-শাহের নির্দেশ পালন করবেন। অন্যদিকে, আরএসএস চায় নাগপুর থেকে একজন বিশ্বাসযোগ্য কেউ সভাপতির পদে বসুক, যিনি পুরো পরিবারকে এক সঙ্গে বেঁধে রাখবেন। শুধু মাত্র একজন দলীয় কর্মীকে ওই পদে বসাতে চাইছে না আরএসএস, চাইছে আরএসএস অনুগামী কোনো মুখ।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আরএসএস নেতা বলছেন, ২০১৩ সালে মোদি আরএসএস-কে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁর দল প্রতি পদক্ষেপেই আরএসএস-এর অনুমতি ক্রমে এগোবে। কিন্তু একটা সময় পর দেখা যায় মোদি নিজেই নিজেকে ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ হিসেবে উত্থাপিত করতে চাইছেন, অর্থাৎ আরএসএস এর চেয়েও বড় হয়ে উঠছেন তিনি। এর পর থেকেই আরএসএস-এর উদ্বেগ জন্মায়। মোহন ভাগবত মোদির এই একমেবদ্বিতীয়ম রূপ মেনে নিতে চান না।

আরও পড়ুন- মণিপুরের দুর্দশার জন্য দায়ি মোদিই? যা বলছেন আরএসএসের মোহন ভাগবত…

বিজেপি সভাপতি হিসেবে মোদি-শাহ যাঁদের নাম সামনে এনেছেন তাঁরা হলেন- বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া, সঞ্জয় জোশী, দেবেন্দ্র ফডণবীস, শিবরাজ সিং চৌহান, ধর্মেন্দ্র প্রধান, ভূপেন্দ্র যাদব, নির্মলা সীতারামন, এস.ডি. শর্মা, সুনীল বান্সল, রামন সিং, বিনোদ তাভঁডে, ডি. পুরান্ডেশ্বরী, ভানতী শ্রীনিবাসন। আরএসএস এখনও কোনো নাম প্রকাশ করেনি।

দলের নিয়ম অনুযায়ী, অন্তত অর্ধেক নতুন রাজ্য সভাপতি নির্বাচন হয়ে গেলে, তবে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন করা হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতির ক্ষেত্রে সাধারণত একজনই মনোনয়ন জমা দেন এবং তিনিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিজেপি ১৪টি রাজ্যের নতুন সভাপতি ও ৩৭ জন রাজ্য ইউনিটের সদস্য বাছাই করেছে। এ ক্ষেত্রে ১৯টি রাজ্যের সভাপতি নির্বাচন হওয়াও জরুরি। কিন্তু তার থেকেও বড় প্রশ্ন, প্রধান মুখ কে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা কে বাঁধবে?

More Articles