আন্দামানের 'রাক্ষস'-দ্বীপের কাছে গেলেই মৃত্যু! কীভাবে বেঁচে ফিরেছিলেন এক বাঙালি মহিলা?
North Sentinil: কীভাবে মাত্র একজন বাঙালি মহিলা এই দ্বীপে গিয়েও বেঁচে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন?
আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ বাঙালি তো বটেই, বিশ্বের কাছে 'হট ডেস্টিনেশন'। ঘোরার জন্য আদর্শ জায়গা। কিন্তু এই আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রধান শহর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে এক 'ভয়াবহ' দ্বীপ! জানা যায়, এই দ্বীপের কাছে তো দূর, আশপাশের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে কাউকে দেখা গেলেই তার মৃত্যু অবধারিত! শেষনিঃশ্বাস ত্যাগের পর বালির তলায় চাপা দেওয়া হবে মৃতদেহ! এমনকী, সরকারের তরফেও এই দ্বীপে যাওয়ার বিষয়ে ছিল নিষেধাজ্ঞা। কেন এই পরিস্থিতি? কারা বসবাস করে এই দ্বীপে? কেন তাদের 'মানুষখেকো রাক্ষস' বলা হতো? কারা তারা? কেমন দেখতে ওদের? কী ওদের জীবিকা? কেন এমন অভিযোগ ছিল ওদের বিরুদ্ধে? কী পাওয়া যায় খুন হওয়া পর্যটকের ব্যক্তিগত ডায়েরিতে?
এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজব আমরা। জানব, কীভাবে মাত্র একজন বাঙালি মহিলা ওদের সঙ্গে দেখা করে, কথা বলেও বেঁচে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।
পর্যটক খুন
২০১৮ সাল। নভেম্বর মাস। দেশজুড়ে শোরগোল। আন্দামানে খুন পর্যটক। পোর্টব্লেয়ারের কাছে এক দ্বীপে আদিবাসীরা খুন করেছে আমেরিকান পর্যটককে। প্রথমে আন্দামানের জারোয়া, পরবর্তীতে এক অন্য প্রজাতির নাম উঠে আসে এই খুনের নেপথ্যে। তখনই ফের প্রকাশ্যে আসে প্রায় স্মৃতির অতলে যাওয়া আন্দামানের 'রাক্ষস' দ্বীপের 'মানুষখেকো' ইতিহাস! জানা যায়, আন্দামানের রাজধানী পোর্টব্লেয়ার থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে নর্থ সেন্টিনিল দ্বীপ। যে দ্বীপে বসবাস করে নর্থ সেন্টিলিনিজ প্রজাতির এক বিরল জনগোষ্ঠী। বাইরের জগতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন এই গোষ্ঠীর অধিবাসীরাই খুন করে আমেরিকান মিশনারিজ জন অ্যালেন চাও নামে ওই পর্যটককে, যিনি ধর্মান্ধতার বশবর্তী হয়ে ওই ভয়ংকর দ্বীপে অবৈধভাবে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
আরও পড়ুন: সভ্য সমাজের জারোয়া ঘৃণার পিছনে লুকিয়ে এক ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতার গল্প
ওই দ্বীপের কাছের একটি দ্বীপে পৌঁছে ২৫,০০০ টাকার বিনিময়ে এক মাঝিকে ভাড়া করেন জন। তারপর ১৪ নভেম্বর রাতে রওনা দেন। সঙ্গে নেন একটি ছোট নৌকো, ফুটবল, দামি একটি ক্যামেরা, শুকনো মাছ আর একটি বাইবেল। ১৫ নভেম্বর সকালে জন পৌঁছন ওই দ্বীপের কাছে। একটু দূরে মাঝিকে রেখে ছোট নৌকো করে জন পৌঁছন ওই দ্বীপে। গিয়েই কিছু লোকের কথা শুনতে পান। তিনি তাদের বলেন, আমি ''তোমাদের ভালবাসি, ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন।'' জনের কথা বুঝতে পারে না কেউ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওই জনগোষ্ঠী কী ভাষায় কথা বলে, তা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। জনের কথা বোঝার আগেই হামলার জন্য উদ্যত হয় ওই জনগোষ্ঠীর একাধিক ব্যক্তি। অ্যালেন চাও পালিয়ে আসেন। কয়েক ঘণ্টা পরে তিনি ওই দ্বীপের উত্তর দিক থেকে ফের প্রবেশ করেন। এবার আর সঙ্গে নৌকো ছিল না কাছে। বোঝানোর চেষ্টার আগেই জনকে লক্ষ্য করে তীর দিয়ে আক্রমণ করা হয়। সেটি গিয়ে হাতে থাকা বাইবেলে লাগে। জন উপহার রেখে পালান। সাঁতার কেটে নিজের ওই বোটের কাছে পৌঁছন। তিনি ডায়েরিতে লেখেন, ''ঈশ্বর ওরা কি রাক্ষস! ওরা যিশুর নামও শোনেনি?'' জন তাঁর মা, বাবার উদ্দেশে লেখেন, ''আমাকে যদি ওরা মেরেও ফেলে, ওদের দোষ দিও না।'' পরদিন ফের ওই দ্বীপে গেলে খুন করা হয় জনকে। মূলত, অন্ধ ধর্মবিশ্বাস আর অ্যাডভেঞ্চারের অতিরিক্ত নেশায় খুন হন ওই পর্যটক, দাবি করা হয় এমনই।
সেন্টিনিলের ইতিহাস
ওই পর্যটকের খুন হওয়ার পরেই ফের আলোচনার কেন্দ্রে আসে তথাকথিত সমাজে অজানা এই প্রজাতির নাম। জানা যায়, বিশ্বের অন্যতম আদিম প্রজাতি এটি। সরকারি কোনও স্বীকৃত নাম না দেওয়া হলেও ওই দ্বীপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নর্থ সেন্টিনিলিজ নামে অভিহিত করা হয় এই জনগোষ্ঠীকে। এদের ভাষা কী, সেই বিষয়ে বহুবিধ গবেষণা হলেও জানা যায়নি কিছুই। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে মোট ৫৭২টি দ্বীপ। এর মধ্যে ৩৮টি দ্বীপে মানুষ বসবাস করে। আর মাত্র ১২টি দ্বীপে পর্যটক যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। আর এই নিষিদ্ধ দ্বীপের আয়তন মাত্র ৫০ স্কোয়ার কিলোমিটার। জঙ্গলে ঘেরা। বলা হয়, ১০ থেকে ৩০ হাজার বছর আগে থেকেই ওই জনগোষ্ঠীর এই দ্বীপে বাস। কয়েকশো নিষিদ্ধ দ্বীপের মধ্যে সর্বাধিক ভয়ঙ্কর এই দ্বীপ। যদিও এই প্রজাতির বা জনগোষ্ঠীর ইতিহাস বহু পুরনো। বহু যুগ আগে থেকেই জানা যায় একাধিক তথ্যের কথা। এই জনগোষ্ঠীকে ঘিরে রয়েছে এক বাঙালির ইতিহাসও।
জানা যায়, আজ থেকে ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে একটা বড় অংশের মানুষ বেরিয়ে যান। যা 'আউট অফ্ আফ্রিকা' তত্ত্ব নামে পরিচিত। সেই গোষ্ঠী পূর্ব আফ্রিকা হয়ে ইয়েমেন থেকে ভারতের একাধিক অঞ্চলে ঘুরে মায়ানমার পৌঁছয়। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া-সহ একাধিক দেশ। যদিও একটি অংশ দেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দ্বীপে আস্তানা গড়ে। যাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই বিচ্ছিন্ন হয় মূলস্রোতের যোগাযোগ।
এই যোগাযোগহীন গোষ্ঠীর বাস সেন্টিলিনে। যাদের সঙ্গে বাইরের জগতের কোনও সম্পর্ক নেই। এমনকী, বাইরের জগৎ সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করলেই বিপদে পড়তে হয় যোগাযোগকারীদের। অন্য জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে মারাত্মক হিংস্র প্রজাতির এই জনগোষ্ঠীর বাসের কথা প্রথম জানা যায় দ্বিতীয় শতকে। গণিতজ্ঞ ক্লেডিয়াস পটোলেমি এক ব্যাখায় বলেন, ''এই দ্বীপ মানুষখেকোদের।'' এর পর ৬৭৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এক চিনা পর্যটক, সুমাত্রা থেকে ভারত সফরের সময়কাল উল্লেখ করে জানান, ''এই দ্বীপ রাক্ষসদের। এরা মানুষের মাংস খায়।'' অষ্টম এবং নবম শতকে এক আরব পর্যটক একই কথা বলেন। একাদশ শতাব্দীতে একটি মন্দির বানানো হয়, সেখানে লেখা হয় এই দ্বীপ সম্পর্কে। রাজা রাজা চোলার সময়ে। অশুদ্ধ দ্বীপ বলা হয় নর্থ সেন্টিনিলকে। এখানে মানুষখেকো থাকে এমনও দাবি করা হয়।
১৭৭১ সাল। এই দ্বীপ প্রথম দেখতে পান, 'ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি'-র জাহাজের কর্মীরা। আলো দেখতে পান ওই অঞ্চল থেকে। ১৮৬৭ নাগাদ ভযংকর ঝড়ের কবলে পড়ে একটি জাহাজ। ১০০ যাত্রী-সহ দুর্ঘটনা ঘটে ওই দ্বীপের কাছে। আহত যাত্রীদের উপর হামলা করে সেন্টিনিলরা। তখন ব্রিটিশ-ভারত রয়্যাল নেভির সাহায্যে বাঁচেন ওই জাহাজের যাত্রীরা। এই প্রথম ওই দ্বীপের কেউ প্রকাশ্যে বাইরের লোকের উপর হামলা করছে, দূরে সরাচ্ছে এটা দেখা যায়।
১৮৮০ সাল। মরিস বিডাল পোর্টম্যান নামে এক ব্রিটিশ অফিসার ওই দ্বীপের বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাদের বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ততদিনে এঁরা ওই অঞ্চলের বহু প্রত্যন্ত দ্বীপের বাসিন্দাদের বুঝিয়েছেন। সেই তিনিই কিছু লোক, যারা আন্দামানের বিভিন্ন দ্বীপে বসবাস করে এমন প্রজাতি। তাদের নিয়ে ওই দ্বীপে পৌঁছন। যাদের ভাষার সঙ্গে কিছুই মেলে না ওদের।
ব্যর্থ হওয়ার পর এই আধিকারিক ওই দ্বীপ থেকে একজন মহিলা-সহ কয়েকটি বাচ্চাকে অপহরণ করেন। নিয়ে আসেন পোর্টব্লেয়ারে। কিছু দিন পরে ওই মহিলা মারা যায়। পরে বাচ্চাগুলোকে ওই দ্বীপে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার একটা বড় কারণ হিসেবে ওই আধিকারিকের ঘটানো এই ঘটনাকে ধরা হয়। ওরা কেন বাইরের লোকের সঙ্গে আলাদা থাকে, এই বিষয়টিও বোঝা যায় খানিকটা।
১৯৬৭ সাল। ত্রিলোকনাথ পণ্ডিত। নৃতত্ত্ববিদ হিসেবে প্রথম ওই দ্বীপে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। ২০ জনের দল নিয়ে যান। বিজ্ঞানী, অস্ত্র-সহ পুলিশ। নেভির আধিকারিক। ওই দল সেন্টিনিলিজদের পায়ের ছাপ ফলো করে ১ কিলোমিটার পর্যন্ত গেলেও কোনও লোক দেখা যায় না। লুকিয়ে যায় ওরা। কিছু উপহার রেখে ফেরে ওই দল। ১৯৭০ সালে ফের একটি দল গিয়ে একটা পাথরে, এই দ্বীপ ভারতের, এটা লিখে বসিয়ে দিয়ে আসে।
সেন্টিনিলে সিনেমা ও তারপর
১৯৭৪ নাগাদ, একটি সিনেমা ক্রু-র দল ওই দ্বীপের কাছে যায়। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরির জন্য। ওই দ্বীপে কিছু উপহার এবং একটি শুকর রেখে দিয়ে আসেন ক্রু-র সদস্যরা। একটু দূর থেকে দেখতে থাকেন ওঁরা। তারপর সেন্টিনিলিজ জনগোষ্ঠীর লোকেরা আসে। ওঁদের ওপর তীর দিয়ে হামলা করে। ওই ডকুমেন্টারি বা তথ্যচিত্রের ডিরেক্টরের আঘাত লাগে। সেন্টিনিলিজরা শুকরটিকে মেরে বালির তলায় পুঁতে দেয়। নৃতত্ত্ববিদ ত্রিলোকনাথের উদ্যোগে একাধিক বার ওই দ্বীপে যাওয়ার চেষ্টা হয়। প্রত্যেক বার একই হামলা! উপহার হিসেবে ওদের জন্য একটি পুতুল দেওয়া হয় এক বার। সেটাও মেরে পুঁতে দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে প্রাইমরোজ নামের এক জাহাজ বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছিল। প্রবল ঝড় ওঠে। তারপর ওই জাহাজ দ্বীপের কাছে আশ্রয় নিলে সেন্টিনিলিজরা হামলা করে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় তীর লাগে না যাত্রীদের গায়ে। পরে হেলিকপ্টার দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। আজও ওই জাহাজ উদ্ধার হয়নি। ওই দ্বীপের উত্তর দিকে রয়েছে ধ্বংসাবশেষ। এই জাহাজ থেকে লোহা নিয়েই সেন্টিনিলদের লোহা চেনা বলে দাবি করেন কেউ কেউ। তারপর থেকে নাকি তীর ধনুকে লোহাও ব্যবহার করে ওরা।
সেন্টিনিল ও বাঙালি-যোগ
১৯৯১ সাল। ইতিহাস গড়েন নৃতত্ত্ববিদ মধুমালা চট্টোপাধ্যায়। এই বছরের জানুয়ারি মাসে একটি ছোট দল নিয়ে কোনও অস্ত্র ছাড়া ওই দ্বীপে যান তিনি। নারকেল তুলে দেন ওই জনগোষ্ঠীর হাতে। তারা সেটা গ্রহণ করে। এই প্রথম কোনও 'বাইরের' মহিলা এদের সঙ্গে দেখা করেন কোনও আক্রমণ ছাড়াই। তার সঙ্গে যোগাযোগ হয় বিচ্ছিন্নদের। এই দল চলে যায় কিছুক্ষণ পরেই। পরের দিন ফের ওরা আসেন। তখন এক সেন্টিনিলিজ পুরুষ ওদের মারার জন্য তীর ধনুক নিয়ে উদ্যত হলে দেখা যায়, এক নারী ওই লোকটিকে নিজের ভাষায় বারণ করছে মারতে। তারপর লোকটি মারেনি। তীর ধনুক নিয়ে বালির তলায় চাপা দেওয়া হয়। সবাইকে ওই দলের পক্ষে নারকেল দেওয়া হয়। ফের একবার মধুমালা আর ত্রিলোকনাথ একসঙ্গে যান। এবারও ওরা ভালোভাবে উপহারের নারকেল নিয়ে যায়।
নিষিদ্ধ দ্বীপ
কিন্তু এটাই শেষ। এরপর যতবার চেষ্টা হয়েছে, নেমে এসেছে আক্রমণ। ১৯৯৭ সালে সরকার ওই দ্বীপে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ওদের নিজের মতো বাঁচতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০০৪ সাল। সুনামি। হেলিকপ্টারে করে দেখতে যাওয়া হয় ওরা কেমন আছে। তখন হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে হামলা করে ওরা। ২০০৬। দুই মৎসজীবী ভুল করে ওই দ্বীপের কাছে গেলে হামলা হয়। মারা যান ওরা। এরপর সরকার এই দ্বীপের ৫ কিমির মধ্যে যেতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
সেন্টিনিলিজ কারা?
কেমন হয় এরা? জন অ্যালেনের ডায়েরি থেকে জানা যায়, এদের উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি থেকে ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির মতো। উজ্জ্বল কালো গায়ের রঙ। পরনে সূক্ষ্ম কিছু থাকে। অধিকাংশ জায়গায় ফাঁকা। গলায়, মাথায় আর কোমরে কিছু থাকে। বেশি মোটা বা রোগা নয় এরা। মহিলারা তীর ধনুক নয়, পুরুষদের হাতে তীর ধনুক থাকে। এরা ছোট ছোট নৌকা বানাতে পারে। নিজেদের মধ্যেই নিজেদের মত থাকতে ভালবাসে এই জনগোষ্ঠী। ১২ হাজার বছর আগে কৃষিকাজের আবিষ্কার হলেও এরা কৃষিকাজ জানে না। এই জগতের মোটামুটি যা কিছু সবটা জানে না। মাত্র ৩৬ কিলোমিটার দূরে দ্বীপ থাকলেও সেখানে অন্যরা বাস করলেও এদের তরফে কোনও হামলা হয়নি। এরা পশু শিকার করে খায়। ফলমূল খায়। ত্রিলোকনাথ পণ্ডিত একবার 'অঙ্গে' প্রজাতির লোক নিয়ে গিয়েছিলেন ওখানে। পারেননি ভাষা উদ্ধার করতে। জন বলেন; এরা বা, পা, লা- এই জাতীয় শব্দের ব্যবহার করে বেশি। বড় কুঁড়ে ঘরে পরিবার নিয়ে থাকে। জনের তথ্য অনুযায়ী, মোট ২৫০ সেন্টিলিন এখানে বাস করে। যদিও ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ভারত সরকারের আন্দাজ এখানে ৫০ থেকে ০০ সেন্টিনিল থাকতে পারে। এরা মরদেহ বালির তলায় চাপা দিয়ে দেয়। আর এরা মানুষ খায়, এই ঐতিহাসিক তথ্য মিথ্যা বলেও জানা যায়। বড় দল দেখলে এরা হামলা করে না। লুকিয়ে থাকে। ছোট দল হলে হামলা চলে। এরা জননক্ষেত্রে সমর্থ। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত বংশবৃদ্ধি করে। জানা যায়, এই প্রজাতির মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখেছে। যদিও এই প্রজাতির ভবিষ্যত কী? কী করা উচিৎ এদের জন্য? এই প্রসঙ্গের আবহে, কেউ কেউ এদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর কথা বলেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, দূরে থাকুক ওরা, ওদের মতো বাঁচুক। যদিও বাইরের জগতের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার ফল যে খুব একটা সুখের হয় না, তার প্রমাণও রয়েছে। ১৯৭০ সালাম আন্দামানের জারোয়া প্রজাতির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা শুরু হয়। তারপর অনেক চেষ্টায় ওরা সমাজের মূলস্রোতে ফেরে। কিন্তু এর ফলাফল একটুও ভাল হয়নি। ক্রমশ অসুস্থ আর নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে ভুগেছে ওরা। এদিকে অষ্টম শতাব্দীতে গ্রেট আন্দামান প্রজাতির লোকের সংখ্যা ৫০০০ থাকলেও, যা এই মূল স্রোতে ফেরানোর তাগিদে ৪০-এর কমে গিয়ে ঠেকেছে বলেও দাবি করেন কেউ কেউ। তাহলে কি আলাদা থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেই ভাল আছে ওরা! ওদের সমস্যা সৃষ্টি করলেই কি বিপদ! প্রশ্ন উঠেছে বারবার।