আর আয়কর দিতে হবে না মধ্যবিত্তকে? ৯ বছর পর ব্যাপক বদলের দিকে মোদি সরকার
Income Tax: যদি আপনার আয় ৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তাহলে আপনাকে আয়কর দিতে হবে। আয়করের পরিমাণ কিছুটা কম হলেও আপনার ট্যাক্স ছাড়ের পুরো বিষয়টাও চলে যাবে আপনার হাত থেকে।
করদাতাদের জন্য দারুণ খবর। এতদিন পর্যন্ত বার্ষিক আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের সুবিধা দিত ভারত সরকার। কিন্তু এবার, এই সীমা বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভারত সরকারের অর্থ দপ্তর। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেট ঘোষণা করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। আর সেই বাজেট ঘোষণাতেই নতুন ট্যাক্স স্ল্যাবের ব্যাপারে ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন অর্থমন্ত্রী। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী আর্থিক বছর থেকে যদি আপনার বার্ষিক আয় পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে হয়, তাহলে আপনাকে আর কোনও আয়কর দিতে হবে না। প্রসঙ্গত, এই বাজেট হতে চলেছে মোদি সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের সর্বশেষ সম্পূর্ণ বাজেট। আগামী ২০২৪ সালে ভারতে লোকসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। তাই আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের দ্বিতীয় সরকারের শেষ বাজেটে ভারতের আয়করদাতাদের বড় অব্যাহতি দিতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
যদিও এর আগে, ২০১৪ সালের বাজেটে ব্যক্তিগত কর অব্যাহতিসীমা পরিবর্তন করা হয়েছিল ভারত সরকারের দ্বারা। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মোদি সরকারের প্রথম মেয়াদের প্রথম অর্থ বাজেট পেশ করার সময় আয়করের অব্যাহতি স্ল্যাব ২ লক্ষ টাকা থেকে ২.৫ লক্ষ টাকা করার ঘোষণা করেছিলেন। আর সেই ঘোষণার ঠিক ৯ বছর পরে আবারও পরিবর্তিত হচ্ছে আয়করের ব্যক্তিগত কর অব্যাহতিসীমা। তাই এই বিষয়টি নিয়ে নর্থ ব্লকের অফিসিয়াল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কর্মী সকলেই বেশ খুশি।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত সরকার দু'বছর পুরনো কর ব্যবস্থার সম্পূর্ণ আমূল পরিবর্তন করতে চলেছে। ব্যক্তিগত কর অব্যাহতিসীমা পরিবর্তন করার জন্য ইতিমধ্যেই ভারত সরকার চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছে। আধিকারিকদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই স্ল্যাব পাল্টে ৫ লক্ষ টাকা করতে চলেছে সরকার। আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত যদি ভারত সরকার গ্রহণ করে তাহলে আয়করদাতারা হাতে কিছু টাকা বেশি রাখতে পারবেন। তার পাশাপাশি, এই টাকা দিয়ে তারা শেয়ার মার্কেট সহ অন্যান্য জায়গায় বিনিয়োগও করতে পারেন, যা তাদের ভবিষ্যৎকে আরও সুরক্ষিত করবে। আপনাদের জানিয়ে রাখি, ভারত সরকার দু'বছর আগে বৈকল্পিক কর ব্যবস্থা পরিবর্তন করার ঘোষণা করেছিল। তবে, সেই কর ব্যবস্থা বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়নি। তাই মনে করা হচ্ছে, ভারত সরকারের তৈরি করা সেই বৈকল্পিক কর ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।
আরও পড়ুন- কোথায় যায় ইডি-র হাতে উদ্ধার হওয়া কালো টাকা?
পুরনো বনাম নতুন ট্যাক্স স্ট্রাকচার
পুরনো কর ব্যবস্থায় সেকশন ৮০সি ও ৮০ডি ব্যবহার করে করদাতারা নিজেদের আয়কর বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু এই নতুন ব্যবস্থায় এই ধরনের কিছু ছাড় একেবারে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। দু'বছর আগে নিয়ে আসা নতুন বৈকল্পিক কর ব্যবস্থাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত সরকার। তাই দেখতে গেলে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন করদাতা এই নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। সেই পুরনো কর ব্যবস্থায় ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনও কর গ্রহণ করা হয় না। ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করের পরিমাণ ৫ শতাংশ। ৫ থেকে ৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আপনার আয় হলে পরিমাণ ১০ শতাংশ। ৭.৫ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করের পরিমাণ ১৫ শতাংশ। ১০ লক্ষ টাকা থেকে ১২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করের পরিমাণ ২০ শতাংশ, ১২.৫ লক্ষ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করের পরিমাণ ২৫ শতাংশ এবং ১৫ লক্ষ টাকার উপরে বার্ষিক আয় হলে আয়করের পরিমাণ ৩০ শতাংশ।
সূত্রের খবর, প্রচলিত কর ব্যবস্থা পরিবর্তন এবং নতুন কর ব্যবস্থা প্রচলনের জন্য সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিভাগের থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অর্থ বাজেটের নতুন ট্যাক্স স্ল্যাব নিয়ে আলোচনা আগামী সপ্তাহের শুরু হবে এবং এতে নতুন কর ব্যবস্থায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হবে। এর রাজস্বের উপর প্রভাব কী হবে এবং এর সুযোগ আছে কিনা সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে। অনেকেই হয়তো এই নতুন নিয়ম ভালোভাবে গ্রহণ করবেন না। তাই সেই বিষয়টি নিয়েও বিতর্কের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ভবিষ্যতে এই বাজেট বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। নতুন এবং পুরনো দুই ধরনের আয়কর ব্যবস্থাতেই পরিবর্তন নিয়ে আসা হবে। ২০২০-২১ আর্থিক বছরে বিকল্প কর ব্যবস্থা নিয়ে ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই কর ব্যবস্থায় আয়করের দর কম রাখা হয়েছিল কিন্তু সমস্ত রকম ছাড় তুলে দেওয়া হয়েছিল এই আয়করের নিয়মবিধি থেকে।
আরও পড়ুন- অভিযোগের তির এবার কার দিকে? ব্যক্তিগত সততার প্রমাণ দিতে কেন মরিয়া মমতা?
বেতনভুক কর্মীদের জন্য সমস্যা
তবে আপনাকে জানিয়ে রাখি, এই নতুন কর ব্যবস্থাতে সবাই কিন্তু সুবিধা পাবেন না। যারা কেন্দ্রীয় সরকার অথবা রাজ্য সরকারের বেতনভুক কর্মচারী রয়েছেন, তাদের এই নতুন কর ব্যবস্থায় কোনও লাভ হবেনা, বরং ক্ষতি হবে বেশি। তার কারণ, HRA, LTA, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন, সেকশন ৮০সি ও সেকশন ৮০ডি অন্তর্গত সমস্ত কর ছাড়ের সুবিধা তাদের হাত থেকে চলে যাচ্ছে। তবে যারা নন রেজিস্টার্ড কর্মী রয়েছেন অথবা যারা ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের জন্য এই নতুন আয় করার নিয়ম কিছুটা হলেও লাভজনক। এর মূল কারণ হলো, এই নতুন আয়কর নিয়মে বিশেষ একটা ছাড়ের জায়গা নেই। এই নতুন আয়কর নিয়মে সমস্যা কম এবং রিটার্ন ফাইল করা অনেকটাই বেশি সহজ। তার পাশাপাশি, ভবিষ্যতের জন্য আপনাকে কাগজপত্র সঠিকভাবে গুছিয়ে রাখার প্রয়োজনও নেই।
মধ্যবিত্তদের কর দিতে হবে?
নতুন নিয়মে যদি বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আপনার আয় হয়, তাহলে আপনাকে আয়কর দিতে হবে না। অন্যদিকে যদি এই নতুন নিয়ম চালু হয় তাহলে, নতুন আয়কর নিয়ম চালু হবে একই সঙ্গে। সেক্ষেত্রে যদি আপনার আয় ৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তাহলে আপনাকে আয়কর দিতে হবে। আয়করের পরিমাণ কিছুটা কম হলেও আপনার ট্যাক্স ছাড়ের পুরো বিষয়টাও চলে যাবে আপনার হাত থেকে। এই নতুন করের নিয়ম বাস্তবায়িত হলে, কয়েকজনের লাভ হলেও, কয়েকজনের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।