আয়কর থেকে বিরাট মুক্তি! নির্মলা সীতারমণের এবারের বাজেটে কি বাঁচবে মধ্যবিত্তরা?

Budget 2023: ভারত সরকার এই মুহূর্তে সর্বাধিক বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা আয় পর্যন্ত রিবেটের সুবিধা দিয়ে থাকে।

করোনা ভাইরাসের ধাক্কা, তার উপর চড়া মূল্যবৃদ্ধি, সবকিছুকে মাথায় রেখেই ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। এবছরের অর্থ বাজেট হতে চলেছে মূলত করদাতাদের জন্যই। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে ভারতের করদাতাদের আরও সুবিধা দেওয়া হবে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। চাকরিজীবী মানুষের হাতে টাকা থাকুক, এরকম মনোভাব নিয়েই নাকি এ বছরের অর্থ বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। অর্থদপ্তর সূত্রে খবর, এবছরের কেন্দ্রীয় অর্থ বাজেটে আয়কর সম্পর্কিত বড় কিছু ঘোষণা সামনে আসতে পারে। হয়তো কর অব্যাহতি কিংবা কর ছাড়ের বিষয়টি নিয়ে ভারতের মধ্যবিত্ত মানুষদের আরও স্বস্তি দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী।

যারা আয়কর ব্যবস্থার ব্যাপারে কিছুটা হলেও অবগত, তারা সকলেই জানেন কেন্দ্রীয় সরকার আয়করের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে কর অব্যাহতি এবং কর ছাড়ের সুবিধা দিয়ে থাকে। মূলত তিনভাবে এই কর ছাড়ের সুবিধা পেয়ে থাকেন ভারতীয়রা। এই তিনটি পদ্ধতি যথাক্রমে, কর অব্যাহতি, কর ছাড় এবং কর রিবেট। এই তিনটি পদ্ধতি তিনটি আলাদা আলাদা ভাবে কর ছাড়ের সুবিধা দিয়ে থাকে ভারতের সাধারণ মানুষকে। বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক এই তিনটি পদ্ধতির ব্যাপারে।

কর অব্যাহতি

কর অব্যাহতি বিষয়টি ভারতের প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে। কর অব্যাহতির অর্থ, যে টাকা ওই ব্যক্তি আয় করছেন, তার উপরে ভারত সরকার কোনও আয়কর গ্রহণ করবে না। বর্তমানে এই কর অব্যাহতির সর্বোচ্চ সীমা বার্ষিক ২.৫ লক্ষ টাকা। যদি কোনও ব্যক্তির বার্ষিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকা বা তার থেকে কম হয়, তাহলে ওই ব্যক্তিকে আয়কর দিতে হবে না।

অন্যদিকে, যদি ওই ব্যক্তির আয় বার্ষিক ২.৫ লক্ষ টাকার থেকে বেশি হয় তাহলে কর অব্যাহতির সর্বোচ্চ সীমা থেকে যত বেশি টাকা তিনি আয় করেন, সেই টাকার উপর তাকে আয়কর দিতে হবে। বিষয়টা সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে, যদি কোনও ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে তাকে প্রতিবছর ৫০,০০০ টাকার উপরে আয়কর জমা দিতে হবে। ২.৫ লক্ষ টাকার উপরে তাকে কোনও কর দিতে হবে না।

আরও পড়ুন- আর আয়কর দিতে হবে না মধ্যবিত্তকে? ৯ বছর পর ব্যাপক বদলের দিকে মোদি সরকার

১৯৬১ সালের আয়কর আইন অনুযায়ী কর অব্যাহতির সুবিধা ভারতের প্রতিটি মানুষ গ্রহণ করতে পারেন। এই মুহূর্তে এই কর অব্যাহতির সর্বোচ্চ সীমা ২.৫ লক্ষ টাকা হলেও, ১ ফেব্রুয়ারির বাজেটে এই সীমা ৫ লক্ষ টাকা করার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি নির্মলা সীতারমণ, কেন্দ্রীয় অর্থ বাজেটে কর অব্যাহতির সীমা বৃদ্ধি করেন, তাহলে ভারতের একটা বড় সংখ্যক জনতা লাভবান হবেন। পাশাপাশি, যারা এর থেকে বেশি টাকা আয় করেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আয়করের পরিমাণও অনেকটা কমবে।

কর ছাড়

কর অব্যাহতি ছাড়া, আরও একটি ভাবে সরকার কর ছাড়ের সুবিধা দিয়ে থাকে, সেটি হল বিনিয়োগ। তবে সমস্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিন্তু কর ছাড়ের সুবিধা মেলে না। কিছু নির্দিষ্ট ধারা রয়েছে যেখানে বিনিয়োগ করলে মোটা টাকা কর ছাড়ের সুবিধা মেলে। ভবিষ্যনিধি থেকে শুরু করে জীবন বীমা, ইএলএস প্রকল্প, গৃহঋণের মূল পরিমাণ পরিশোধ, পাঁচ বছরের ট্যাক্স সেভিং ফিক্সড ডিপোজিট, ইউলিপ, বাড়ি এবং ফ্ল্যাট ক্রয়ের স্টাম্প ডিউটি, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, ন্যাশনাল সেভিংস স্কিম, সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আয়কর ছাড়ের সুবিধা পান মানুষ। ১৯৬১ সালের আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় এই করের সুবিধা মানুষ পেয়ে থাকেন।

অ্যানুইটি পেনশন প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৮০সিসিসি ধারায় কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয় ভারতের সাধারণ নাগরিকদের। এছাড়াও চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে, তার প্রাপ্ত বেতনের ১০ শতাংশ অথবা স্বনিযুক্ত হলে আয়ের ২০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায় ৮০ সিসিডি (১) ধারা অনুসারে। এছাড়া যদি অটল পেনশন যোজনা এবং এনপিএস প্রকল্পে বিনিয়োগ করা থাকে তাহলে ৮০ সিসিডি(১বি) ধারা অনুযায়ী কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়। অন্যদিকে ন্যাশনাল পেনশন স্কিম প্রকল্পে বিনিয়োগ করা থাকলে চাকরিজীবীরা ৮০ সিসিডি(২) ধারাতেও বিনিয়োগের উপরে কর ছাড়ের সুবিধা পেয়ে থাকেন।

উচ্চ শিক্ষার জন্য গৃহীত ঋণের উপরে ৮০ই ধারায় কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়। ঋণ পরিশোধের বছর থেকে আগামী আট বছর পর্যন্ত কর ছাড়ের সুবিধা পেয়ে থাকেন মানুষ। বিশেষ ব্যাপারটি হল, এই ছাড়ের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনও রকম উর্ধ্বসীমা নেই। নিজের সন্তান, স্ত্রী অথবা স্বামীর নামে চিকিৎসা বীমার ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায় ৮০ডি ধারায়। প্রিমিয়াম বাবদ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায় এই ধারা অনুযায়ী। এছাড়াও যদি ৬০ বছরের কম বয়স্ক বাবা-মার জন্য চিকিৎসা বীমা থাকে তাহলে আরও ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়, ৮০ডি ধারা অনুযায়ী। তবে ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক বাবা-মার চিকিৎসা বীমার ক্ষেত্রে এই কর ছাড়ের সীমা হয়ে যায় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

বিশেষভাবে সক্ষম আত্মীয়ের দেখাশোনার ভার যদি আপনার উপরে থাকে তাহলে আপনি ৮০ ডিডি ধারা অনুযায়ী কর ছাড়ের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। করদাতার বয়স ৬০ বছরের কম হলেও চিকিৎসার খরচ বাবদ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের সুবিধা মিলবে। তবে সেক্ষেত্রে কর ছাড় গ্রহণ করতে হবে ৮০ ডিডিবি ধারা অনুসারে। এই একই ধারায় কর ছাড়ের পরিমাণ এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে যদি আপনার বয়স ৬০ বছরের বেশি হয়।

প্রবীণ করদাতারা যদি ঋণ পরিশোধ করেন তাহলে সুদ বাবদ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পেয়ে যেতে পারবেন ৮০টিটিবি। ব্যাঙ্ক, কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিসে আমানতের পাওয়ার সুদ বাবদ দশ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায় আয়কর আইনের ৮০ টিটিএ ধারা অনুসারে। অন্যদিকে, অফিস থেকে হাউজ রেন্ট অ্যালাউয়েন্স না পেলে বাড়ি ভাড়া বাবদ ৮০ জিজি ধারা অনুসারে কর ছাড় পেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কিন্তু কিছু শর্ত পালন করতে হবে। যদি আপনার বা আপনার স্বামী অথবা স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট অথবা সম্পত্তি থাকে তাহলে এই ছাড় পাওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন- মধ্যবিত্তদের জন্য বিরাট স্বস্তির সম্ভাবনা! নতুন বছরে কীভাবে বাঁচাবেন আয়কর?

কর রিবেট

কর ছাড় এবং কর অব্যাহতির থেকে কর রিবেট কিন্তু সম্পূর্ণরূপে আলাদা। কর রিবেটের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে, যা পর্যন্ত আয়কর আইনের ৮৭এ ধারা অনুযায়ী ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা দেওয়া হয়। তবে যদি এই নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে পুরো টাকাটার উপরেই কর রিবেট দিতে হবে সেই নাগরিককে।

ভারত সরকার এই মুহূর্তে সর্বাধিক বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা আয় পর্যন্ত রিবেটের সুবিধা দিয়ে থাকে। যদি কোনও ব্যক্তি রায় ৫ লক্ষ টাকা থেকে বেশি হয়, তাহলে তাকে ট্যাক্স দিতে হবে আয়ের উপর। সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে, যদি কোনও ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকার কম হয়, তাহলে ভারত সরকার থেকে ৮৭এ ধারা অনুযায়ী রিবেটের সুবিধা দেবে। কিন্তু যদি সেই ব্যক্তির আয় হয় ৫.১ লক্ষ টাকা, তাহলে কিন্তু ওই ব্যক্তিকে ২.৬ লক্ষ টাকার উপরে আয়কর দিতে হবে (যেহেতু, এই মুহূর্তে কর অব্যাহতির সর্বোচ্চ সীমা ২.৫ লক্ষ টাকা)।

আয়করের এই রিবেট মূলত, প্রদত্ত আয়করের উপরে প্রযোজ্য একটি ডিবেট। সম্পূর্ণ আয়করের হিসেব হওয়ার পরেই এই রিবেটের বিষয়টি হিসাব করা হয়। কর অব্যাহত এবং কর ছাড় সরাসরি নির্ভর করে কোনও ব্যক্তির আয়ের পরিমাণের উপর। অন্যদিকে, কর রিবেট নির্ভর করে কোনও ব্যক্তির প্রদত্ত করের পরিমাণের উপর।

More Articles