বিলুপ্তির মুখে প্রজাপতিরা! গত ২০ বছরে কেন ব্যাপক হারে কমছে প্রজাপতির সংখ্যা?
Butterfly: শুধু আমেরিকার সমস্যা না, সারা বিশ্বেই প্রজাপতিরা বিপন্ন। আমাদের নিজস্ব পরিসরে, চারপাশে কতই বা শুঁয়োপোকা আর দেখা যায়! কত শুঁয়োপোকাই বা আর প্রজাপতি হয়ে ওঠে?
কোথায় সে এমন রঙিন ডানা পেল, এসব নিয়ে রোম্যান্টিসজম আমাদের গত হয়েছে। বিজ্ঞান প্রকৃতির সমস্ত কার্যকারণের ব্যাখ্যা দিয়েছে নিজস্ব যুক্তিতে, আর সাধারণ মানুষের মন অপূর্বের কারণ খুঁজতে গিয়ে বিস্মিত হতে চেয়েছে বারবার। এখনও, নরম কোনও বিকেলে প্রজাপতির ওড়াওড়ি দেখে সন্ধে নেমে যায় অগোচরে। এমন বাহারি ডানা, এমন অভূতপূর্ব রং প্রজাপতিরা সত্যিই কোথায় পেল, কীভাবে শুঁয়োপোকা একদিন নিজেকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে এমন সুন্দর হয়ে উঠল, এই বিস্ময় মানুষকে হয়তো ততটাও অবাক আর করে না। প্রজাপতি দেখার সুযোগও কম, আর প্রজাপতিরাও মহাপ্রস্থানের পথে প্রায়। কিছুবছর পর প্রজাপতি নির্বংশ হওয়ারই মুখে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রজাপতির সংখ্যা অভাবনীয় হারে হ্রাস পাচ্ছে। গবেষণার তথ্য বলছে, ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, ৫৫৪টি নথিভুক্ত প্রজাতির মধ্যে প্রজাপতির প্রাচুর্য ২২% কমেছে! ৭৬,০০০-এরও বেশি সমীক্ষা এবং ৩৫টি পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া এই তথ্য বলছে, বিপদের মুখে প্রজাপতিরা।
এই গবেষণাড়িতে ১২.৬ মিলিয়ন প্রজাপতির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ কীটপতঙ্গের সংখ্যায় ব্যাপক পতনের এক ভয়ঙ্কর ছবি উঠে এসেছে সেই তথ্যের ভিত্তিতেই। প্রজাপতিদের নথিভুক্ত প্রজাতিগুলির তথ্য বলছে, আগের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি প্রজাতির সংখ্যায় ব্যাপক হ্রাস দেখা দিচ্ছে। এই হ্রাস সমগ্র সংলগ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে দেখা গেছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে সমস্যাটি বিচ্ছিন্ন নয় বরং ব্যাপক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রজাপতির সংখ্যা হ্রাসের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। মনে রাখতে হবে, প্রজাপতিরা পরাগ সংযোগ এবং খাদ্য শৃঙ্খল সহ বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন- কচ্ছপের অশ্রু খায় প্রজাপতিরা! অপার্থিব দৃশ্যের নেপথ্যে রয়েছে তাক লাগানো কারণ
আরেকটু সহজ করে বললে, গত ২০ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটি প্রজাপতি অদৃশ্য হয়ে গেছে। শুধু বিরল প্রজাপতিরাই নয়, সাধারণ প্রজাপতিও আর দেখা যাচ্ছে না। গবেষকরা বলছেন, এই ২০ বছরের সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০০টিরও বেশি প্রজাতি ৫০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। এতে হার্মিস কপার, লেজ অরেঞ্জ, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া হোয়াইট, ক্যালিফোর্নিয়া প্যাচ এবং স্যান্ডহিল স্পিপার সহ এমন ২২টি প্রজাতি রয়েছে যা ৯০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।
নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির কীটতত্ত্ববিদ নিক হাদ্দাদ বলছেন, গত ২০ বছর ধরেই প্রজাপতির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং এই হ্রাসের শেষ কোথায় তা জানা নেই। কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ডেভিড ওয়াগনার বলেছেন, ২০ বছরে ২২ শতাংশ হ্রাসকে সাধারণ চোখে তাৎপর্যপূর্ণ মনে নাও হতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই হ্রাসের হার বৃদ্ধিই বিপর্যয় ডেকে আনবে। ডেভিড ওয়াগনার বলছেন, "মাত্র ৩০ বা ৪০ বছরে আমরা একটি মহাদেশে অর্ধেক প্রজাপতি (এবং অন্যান্য পোকামাকড়) হারানোর কথা বলছি!”
প্রজাপতির সংখ্যা কমে যাওয়া মানুষের জন্য কেন বিপর্যয়ের?
কর্নেল ইউনিভার্সিটির প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ অনুরাগ আগরওয়াল নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেছেন, তিনি মনুষ্য প্রজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। "প্রজাপতি, তোতাপাখি এবং শুশুকের ক্ষতি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য এক খারাপ লক্ষণ। আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় যে বাস্তুতন্ত্র, যে প্রকৃতি উপভোগ করি এই প্রাণীরা তার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রজাপতিরা প্রকৃতির সৌন্দর্য, ভঙ্গুরতা এবং নানা প্রজাতির পারস্পরিক নির্ভরতার দূত। তাদের থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে।"
আরও পড়ুন- প্রকাণ্ড ডানা, অপার্থিব সৌন্দর্য! মহাকাশে কীভাবে লুকিয়ে দানবাকৃতি মহাজাগতিক প্রজাপতি?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রজাপতিরা মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত করে, মানুষকে শান্ত করে, মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, মন ভালো রাখে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রজাপতিরা বিপদে। শুধু তো আমেরিকার সমস্যা না, সারা বিশ্বেই প্রজাপতিরা বিপন্ন। আমাদের নিজস্ব পরিসরে, চারপাশে কতই বা শুঁয়োপোকা আর দেখা যায়! কত শুঁয়োপোকাই বা আর প্রজাপতি হয়ে ওঠে? অজস্র পোকামাকড় বিলুপ্তির মুখে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্যান্য পোকামাকড়ের পতনের মতোই প্রজাপতির এমন ক্ষতির নেপথ্যে অনেক কারণ রয়েছে। প্রাণীর প্রাকৃতিক বাসস্থানের ক্ষতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কীটনাশকের ব্যবহার এর অন্যতম কারণ। জলবায়ু পরিবর্তন বা কীটনাশকের ব্যবহার কমানো রাতারাতি সভব না। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেহেতু পোকামাকড়ের জীবনকাল ছোট, তাই পরিবেশের সামান্য পরিবর্তন হলেও কিন্তু প্রজাপতির উপকার হতে পারে। যেমন স্থানীয়ভাবে ফুলগাছ লাগানো বা বাসস্থান তৈরি করা প্রজাপতির সংখ্যা বৃদ্ধির উপর বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। এই মুহূর্তে ছোট ছোট ব্যক্তিগত উদ্যোগও প্রজাপতিদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটাতে পারে বেশ বড় হারেই।