কচ্ছপের অশ্রু খায় প্রজাপতিরা! অপার্থিব দৃশ্যের নেপথ্যে রয়েছে তাক লাগানো কারণ

Butterflies Drinking Turtle Tears: প্রজাপতিসহ বিবিধ পতঙ্গের লবণের বা সোডিয়ামের প্রয়োজন পড়ে।

প্রকৃতি কী মায়া লুকিয়ে রেখে নিজের গহিনে, সমস্ত সন্ধান মানুষ এখনও পায়নি। 'এখনও' বলা ভুল অবশ্য, মানুষ কোনওকালেই সমস্ত মায়া, সমস্ত সৌন্দর্যের, রহস্যের খোঁজ পাবে না কারণ প্রকৃতি সততই বদলে বদলে যাচ্ছে। বিবর্তনের ফোঁটা ফোঁটা শিশির জমে প্রত্যহ প্রকৃতির দেহে। কখনও তা বিধ্বংসী, কখনও মায়াবী। জীবনের কোনও এক অস্বাভাবিক মহূর্তে এসব মায়ার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। যদি পেরুর আমাজনে কোনওদিন আপনার যাওয়ার সুযোগ ঘটে, দেখবেন এমনই এক মায়া আপনার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। এই অঞ্চলে অবিশ্বাস্য সব প্রাণীর প্রজাতির বাস। তারই মধ্যে আমাদের চেনা প্রজাপতি। পেরুর এই প্রজাপতিরা ওই অঞ্চলে বসবাসকারী কচ্ছপদের চোখের জল পান করে।

গ্রীষ্মমন্ডলীয় কীটতত্ত্ববিদ এবং বিজ্ঞান বিষয়ক চিন্তক ফিল টরেস তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে এই প্রজাপতি প্রজাতির অসাধারণ একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। কচ্ছপের কান্নায় কী এমন পায় প্রজাপতিরা? ফাইল টরেসের ব্যাখ্যা, এখানকার প্রায় আটটি ভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতিরা সবাই চোখের জলে একটি জিনিসই খুঁজছে: সোডিয়াম।

খোলা সমুদ্র থেকে দূরত্বের কারণে এই এলাকায় লবণের অভাব রয়েছে। আটলান্টিক মহাসাগর এই এলাকা থেকে প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। বাতাস মহাসমুদ্র থেকে বাতাসে করে নোনা জল নিয়ে আসতেও পারে না কারণ তার পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে আন্দিজ পর্বতমালা। তাই এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, লবণে কণার দেখা মেলা ভার। ফলে নিজেদের শরীরে লবণের প্রয়োজন মেটাতে এখানে বসবাসকারী প্রাণীরা কিঞ্চিৎ সৃজনশীল হয়ে ওঠে।

সাধারণত প্রজাপতিরা ফুলের মধুই খায়। লম্বা লম্বা শুঁড় দিয়ে ফুলের গর্ভ থেকে টেনে নেয় অমৃত! কিন্তু প্রজাপতিসহ বিবিধ পতঙ্গের লবণের বা সোডিয়ামের প্রয়োজন পড়ে। যখন গাছপালা থেকে সোডিয়াম মেলে না, তখন মল, কাদা এবং কচ্ছপের কান্না তাদের কাছে সোডিয়ামের নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে ওঠে। মানুষের চোখের জল তো নোনতা, কচ্ছপের কান্নাও কি তাই? কচ্ছপের খাদ্যে মাংস থাকে এবং তাই এর দেহ নিঃসৃত জলে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে।

মানুষের চোখের জল কেউ মুছিয়ে দিলে মানুষ আরাম পায় অবশ্যই, কিন্তু কচ্ছপ তার চোখের জল খেয়ে ফেলার ব্যাপারটি নিশ্চিতভাবেই উপভোগ করে বলে মনে হয় না বিজ্ঞানীদের। বিষয়টি মিথোজীবিতার এক রঙিন উদাহরণ। যেখানে একটি প্রজাতি অন্য একটি প্রজাতির থেকে উপকৃত হয় এবং অন্য প্রজাতি সত্যিই তাতে প্রভাবিত হয় না, খারাপভাবেও না, ভালো ভাবেও না।

তবে প্রজাপতিই কিন্তু একমাত্র প্রাণী নয় যারা নিজেদের প্রয়োজনীয় লবণের জোগাড় পেতে অস্বাভাবিক সব উৎস খোঁজে। কিটুম গুহা হাতিরা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং সোডিয়াম পেতে এই গুহা থেকে ময়লা খুঁড়ে আনে বলেও জানা গিয়েছে।

More Articles