যুদ্ধবিরতি বুমেরাং! ইজরায়েলের ফের আক্রমণ স্রেফ সময়ের অপেক্ষা?

Iran-Israel conflict : তেহরানের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক আবাস আসলানি বলেছেন, গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতি মানার ক্ষেত্রে ইজরায়েলের ইতিহাস ভালো নয়, তাই ইরান সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

কয়েক ঘণ্টায় পর্বত মুষিক প্রসব করল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা কার্যত বুমেরাংয়ে পরিণত হলো। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাটজ সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা করলেন, ইরান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তাই তেহরানে হামলা করার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালেই ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে ইজরায়েল সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর এবং উভয় পক্ষকে এটি ভঙ্গ না করার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও বিশ্বের একটা বড় অংশ তাতে আস্থা রাখেনি। প্রায় একই সময়তটে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, ইজরায়েলের সঙ্গে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি। তাঁর মত ছিল, ইজরায়েল যদি তাদের অবৈধ আগ্রাসন স্থানীয় সময় ভোর ৪টার মধ্যে (০০:৩০ জিএমটি) বন্ধ করে, তাহলে ইরান হামলা থামাবে।

    আরও পড়ুন- ইরান থেকে ট্রাম্প, নেতানিয়াহু আসলে কী চান?

অভিযোগ, ইজরায়েলের ঘোষণার আগে ইরান ইজরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বিয়েরশেবায় একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে কমপক্ষে চারজন নিহত হন। সোমবার সন্ধ্যেতেও ইরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। রবিবার ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে মার্কিন হামলার প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা, বলেছিল ইরান। ইরান জানিয়েছে, কোনোভাবেই যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘিত হয়নি।

ইরানের দাবি, ১৩ জুন থেকে ইজরায়েলের হামলায় তাদের দেশে ৪০০-র বেশি মানুষ, যার মধ্যে ১৩ জন শিশু, নিহত এবং কমপক্ষে ৩,০৫৬ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানের হামলায় ইজরায়েলে এখনও পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছে, বক্তব্য নেতানিয়াহু প্রশাসনের।

ইজরায়েলে সেনা মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফ্রিন এক টেলিভিশন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সেনাপ্রধান নির্দেশ দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হলে শক্তিশালী জবাব দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রস্তুতি বজায় রাখতে হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই পর্যায়ে ঘরোয়া কমান্ডের নির্দেশনায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। নির্দেশনাগুলো মানতে হবে। বিপদ এখনও রয়ে গেছে।”

আরও পড়ুন-কেন কাতারেই হামলা চালাল ইরান?

তেহরানের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক আবাস আসলানি বলেছেন, গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতি মানার ক্ষেত্রে ইজরায়েলের ইতিহাস ভালো নয়, তাই ইরান সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “ইরানের কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেননি। যদি সময়ের সঙ্গে কোনো শর্ত লঙ্ঘন না হয়, তাহলে ইরান যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে।” যদিও দিন এগোতেই দেখা গেল অন্য ছবি, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কথা শোনা গেল ইজরায়েলের মুখেই।

আসলানি এই সংঘাতকে ইরান বনাম ইজরায়েল ও তার মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা এবং তেহরানে শাসন পরিবর্তন ঘটানো, যা তারা অর্জন করতে পারেনি।

এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতি কি আদৌ রক্ষা করতে পারবে বা চাইবে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু? তা এখনও অনিশ্চিত। সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যে।

More Articles