সিভিক ভলিন্টিয়ার নিয়ে ফের প্রশ্নের মুখে রাজ্য, আরজি কর-শুনানিতে যে যে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট

RG Kar case in Supreme court: এদিন ফের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়আশয় নিশ্চিত করার জন্য রাজ্যেকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি জানান, ইন্টিগ্রেটেড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ১ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে।

উৎসবের মরসুমেও আরজি কর মামলা নিয়ে বিদ্রোহের আগুন জ্বলেছে গোটা কলকাতা জুড়ে। সেই উৎসব শেষ হতে না হতেই মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলার ষষ্ঠ শুনানি। গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চতুর্থ তলার সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। সেই ঘটনার জল গড়ায় অনেক দূর। মামলার তদন্তভার গিয়েছিল রাজ্যের হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে। এমনকী সেই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাও করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলার ষষ্ঠ শুনানি মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে।

এর আগের শুনানিটি হয়েছিল গত ৩০ সেপ্টেম্বর। মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চের সামনে আরজি কর মামলার ষষ্ঠ শুনানি শুরু হয়। যেখানে টাস্ক ফোর্স গঠন নিয়ে হলফনামা জমা দেওয়া হয়। পাশাপাশি তদন্তে অগ্রগতি কেমন, তা সিবিআইয়ের কাছে জানতে চান প্রধান বিচারপতি। এর পরেই তদন্ত বিষয়ক স্ট্যাটাস রিপোর্ট আদালতের সামনে পেশ করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। সুপ্রিম কোর্টে তিনি জানান, আরজি করের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। নিয়োগ করা হয়েছে নোডাল অফিসারও, যার উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টেও।

টাস্ক ফোর্স গঠন সংক্রান্ত হলফনামা পড়ার পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘৯ সেপ্টেম্বর শেষ বার টাস্ক ফোর্স বৈঠক করেছিল। তার পর আর কোনও বৈঠক করেনি?’’ তুষার জানান, তার পর কোনও বৈঠক হয়নি। এক মাসের বেশি সময় কেন কোনও বৈঠক হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি।

আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে আদালতে নিজের বক্তব্য জানাতে পারবে ধৃত সঞ্জয়? কী বলছে ভারতের আইন?

ইতিমধ্যেই শিয়ালদহ আদালতে আরজি করের চিকিৎসক খুনে প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। সেই চার্জশিটে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ রয়েছে ধৃত সিভিক ভলিন্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের নাম। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে আরও অনেকের নাম থাকলেও মূল অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ওই সিভিক ভলিন্টিয়ারের কথাই। সে প্রসঙ্গে এদিন প্রশ্ন করে সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্টের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে জমা করা হয়েছে সেই চার্জশিটের কপিও। এই প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের আইনজীবী বিচারপতিদের বেঞ্চকে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়া আর কেউ এই ধর্ষণ-খুন মামলায় জড়িত কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

একই সঙ্গে এদিন সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিয়েছে রাজ্যও। আদালতে রাজ্য জানাল, আরজি কর মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। তাই সেই মেডিক্যাল কলেজে কাজ করতে গেলে প্রয়োজন সিবিআইয়ের অনুমতি। সেই অনুমতি পাওয়ার পরই কাজ শুরু করা হয়। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আরজি করের সব কাজ শেষ হবে বলে জানানো হয়েছে রাজ্য়ের তরফে। জুনিয়র ডাক্তার থেকে শুরু করে চিকিৎসা-কর্মীরা বারবার অভিযোগ তুলেছেন রাজ্য়ের হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে। পর্যাপ্ত পরিমাণে সিসিটিভি লাগানো, শৌচালয়, চিকিৎসকদের জন্য যথাযথ রেস্টরুমের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জরুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ইতিমধ্যেই সেই সংক্রান্ত একাধিক নির্দেশিকা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সংক্রান্ত কাজ কতটা এগিয়েছে, তা নিয়ে এ দিন ফের জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। আর তার উত্তরে রাজ্য জানিয়েছে, এই কাজের জন্য হাজার কোটির বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক কাজ হয়ে গেছে। বাকি কাজ ২৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আর আরজি করের কাজ শেষ হবে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে। রাজ্য ইতিমধ্যেই হাসপাতালগুলোর নিরাপত্তার বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যদিও তা মানতে নারাজ চিকিৎসকদের আইনজীবীরা।

এদিন ফের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়আশয় নিশ্চিত করার জন্য রাজ্যেকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘ইন্টিগ্রেটেড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ১ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। সব হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় নিশ্চিত করতে হবে রাজ্যকে।’’ একই সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে ফিরেছেন কিনা, তা নিয়ে জানতে চান প্রধান বিচারপতি। তার জবাবে জুনিয়র ডাক্তারের পক্ষের আইনজীবী জানান, সকলেই কাজে ফিরেছেন। রাজ্যের আইনজীবী জানান, সাত জন যাঁরা অনশন করছেন, তাঁরা বাদে সকলেই কাজে ফিরেছেন।

আরও পড়ুন: অনশন, ধর্না কতদিন? জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রফাসূত্র কেন বের করতে পারছে না রাজ্য?

এর আগেই শীর্ষ আদালতে রাজ্যে রাত্তিরের সাথী প্রকল্পের কথা জানিয়েছিল। একই সঙ্গে হাসপাতালে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সিভিক ভলিন্টিয়ার নিয়োগ নিয়েও আপত্তি উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টে। এদিনও সেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠল আদালতে। প্রশ্ন ওঠে, রাজ্য সরকারের ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হচ্ছে। সেই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ। সেখানে বলা হয়েছিল, কোনও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরত রাখতে হবে। তবে রাজ্য জানায়, কেন্দ্রীয় আইন মেনেই নিয়োগ হচ্ছে ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পে। এ ব্যাপারে প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্যও। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়ারদের কে নিয়োগ করে? কী ভাবে নিয়োগ হয় তাঁদের? এখন রাজ্যে কত জন সিভিক ভলান্টিয়ার আছেন?’’ তার উত্তরে রাজ্য জানায়, সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়। পরের শুনানিতে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রীতিমতো হলফনামা দিয়ে এ ব্য়াপারে তথ্য জানাতে হবে শীর্ষ আদালতকে। নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী? নিয়োগের আগে কী ভাবে তাঁদের দেওয়া তথ্য যাচাই করা হয়? কোন কোন প্রতিষ্ঠানে সিভিক ভলান্টিয়ার আছে? সিভিক ভলান্টিয়ারকে কী ভাবে বেতন দেওয়া হয়, কত বাজেট বরাদ্দ করা হয় তার জন্য?- এ সব উত্তর জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘রাজ্যকে হলফনামায় নিশ্চিত করতে হবে কোনও স্কুল, হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে সিভিক ভলান্টিয়ার রাখা যাবে না। এমনকী, কোনও থানা এবং তদন্তের সঙ্গে জড়িত কোথায় সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়নি, তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য সরকারকে।’’

আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদের জের এখনও স্তিমিত হয়নি। এ দিন শহরে আয়োজন করা হয়েছে দ্রোহের কার্নিভালের। জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশনও চলছে। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের এই ষষ্ঠ শুনানিতে ডাক্তারদের দাবিদাওয়াগুলিকে বিশেষ করে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল। সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে এই মামলার পরবর্তী শুনানি দীপাবলির পরে। সেখানেই এই মামলার তদন্তে অগ্রগতি থেকে শুরু করে একাধিক জরুরি রিপোর্ট দেখবে শীর্ষ আদালত।

More Articles